চিন্নাস্বামীতে প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্টের প্রথম সেশনে শতরানের পর গব্বর।
ঐতিহাসিক টেস্ট শুরু হল ইতিহাস দিয়েই। আফগানিস্তানের অভিষেক টেস্টের প্রথম দিনে ইতিহাসে নাম তুললেন ভারতীয় ওপেনার শিখর ধবন। মধ্যাহ্নভোজের আগেই শতরান করে ফেললেন তিনি। টেস্টের প্রথম দিন লাঞ্চের আগে শতরানের কৃতিত্ব কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যানের নেই। অর্থাত্, ‘গব্বর’ নামে পরিচিত বাঁ-হাতি ঢুকে পড়লেন ইতিহাসে।
বিশ্ব ক্রিকেটে টেস্টের পয়লা দিনে মধ্যাহ্নভোজের আগে শতরানে পৌঁছনোর নজির এর আগে রয়েছে মাত্র পাঁচ জনের। ভিক্টর ট্রাম্পার, চার্লস ম্যাকার্টনি, ডন ব্র্যাডম্যান, মজিদ খান ও ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে একাসনে বসলেন ধবন। ট্রাম্পার, ম্যাকার্টনি ও ব্র্যাডম্যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এই নজির গড়েছিলেন। ফলে, গত ৮০ বছরের মধ্যে টেস্টের প্রথম দিনে ধবন তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে লাঞ্চের আগে শতরান করলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই ঝড় তোলেন তিনি। পঞ্চাশে পৌঁছতে নেন ৪৭ বল। একশো করতে নেন ৮৭ বল। মধ্যাহ্নভোজের সময় ৯১ বলে ১০৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। যাতে ছিল ১৯ চার ও তিন ছয়। দৌড়ে নিয়েছিলেন মাত্র দশ রান। আফগান অধিনায়ক আসগর স্ট্যনিকজাইয়ের বড় ভরসা ছিলেন সাড়া ফেলে দেওয়া লেগস্পিনার রশিদ খান। কিন্তু, তাঁর প্রথম ওভারেই শিখর তিনবার সীমানায় পাঠান তাঁকে। রশিদ অবশ্য একবার এলবিডব্লিউয়ের রিভিউ করিয়েছিলেন ধবনের বিরুদ্ধে। কিন্তু, হকাই দেখায় বল ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ আফগানদের ঐতিহাসিক ভারত ‘টেস্ট’
এর আগে কোনও ভারতীয়ের টেস্টের প্রথম সেশনে সবচেয়ে বেশি রান ছিল বীরেন্দ্র সেহবাগের। ২০০৬ সালে গ্রস আইলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টের প্রথম দিন সকালের সেশনে ৯৯ করেছিলেন নজফগড়ের নবাব। আরও দু’বার শতরানের কাছে এসেছিলেন বীরু। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গলে অপরাজিত ছিলেন ৯১ রানে। আর ২০১০-১১ মরশুমে অমদাবাদে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে করেন ৮৭ নট আউট। আর এক ভারতীয়, ফারুখ ইঞ্জিনিয়ারও তিন অঙ্কের কাছে এসেছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ মরশুমে চেন্নাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৯৪ রানে।
এমন নয় যে শিখর এই প্রথমবার কোনও সেশনে শতরান করলেন। এর আগে আরও দু’বার এক সেশনে শতরান করেছিলেন তিনি। ২০১২-১৩ মরশুমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেকে তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ১০৬ রান করেছিলেন শিখর। গত বছর গলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও প্রথম দিনের দ্বিতীয় সেশনে ১২৬ রান করেন তিনি। এই নিয়ে মোট তিন বার সেশনে একশো পেরলেন তিনি। ভিক্টর ট্রাম্পার, ওয়ালি হ্যামন্ডেরও এই কৃতিত্ব রয়েছে তিন বার। ডন ব্র্যাডম্যান সবচেয়ে বেশি, মোট ছ’বার এক সেশনে একশো করেছিলেন।
মধ্যাহ্নভোজের পরে শিখর অবশ্য বেশিক্ষণ থাকেননি। ১০৭ রানে ইয়ামিন আহমাদজাইয়ের বলে ক্যাচ দেন মহম্মদ নবিকে। দাঁড়ি পড়ে তাঁর কেরিয়ারের সপ্তম শতরানের ইনিংসে। মুরলী বিজয়ের সঙ্গে প্রথম উইকেটে ধবন যোগ করেন ১৬৮ রান। চায়ের বিরতির পরে তৃতীয় সেশনে শতরানে পৌঁছন বিজয়ও। কেরিয়ারের দ্বাদশ টেস্ট শতরানে পৌঁছতে তিনি নেন ১৪৩ বল। পঞ্চাশ পূর্ণ করে ফেলেন তিনে নামা লোকেশ রাহুলও।
তবে এর পরেই লড়াইয়ে ফেরে আফগানিস্তান। শেষ সেশনে ভারত হারায় পাঁচ উইকেট। এক উইকেটে ২৮০ রান থেকে প্রথম দিনের শেষে ভারত ছয় উইকেট হারিয়ে ৩৪৭ রানে থামে। তৃতীয় সেশনে আফগান বোলাররা ছন্দে ফেরে। ১০৫ রানে বিজয় ফেরার পর ইনিংসে নামে ধ্বস। তিনে নামা লোকেশ রাহুল করেন ৫৪। চেতেশ্বর পূজারা (৩৫), অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে (১০), দীনেশ কার্তিক (৪) পরপর ফেরেন। দিনের শেষে অপরাজিত রয়েছেন হার্দিক পান্ড্য (১০) ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৭)।
বৃষ্টিতে বারবার ব্যহত হওয়া টেস্টর প্রথম দিন ভারতেরই। তবে আফগানরা বুঝিয়ে দিয়েছেন টেস্টের আসরে তাঁরা মোটেই বেমানান নন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy