বিদায় অধিনায়ক। ছবি: এএফপি।
১৯৮৭-তে ভারতীয় উপমহাদেশ।
১৯৯৯-এ ইংল্যান্ড।
২০০৩-এ দক্ষিণ আফ্রিকা।
২০০৭-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
২০১৫-এ নিজেদের দেশে।
ক্রিকেট যে ক’টা দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়, সে সব দেশেই বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া!
নিউজিল্যান্ডের রূপকথা এ বারের মতো এখানেই শেষ। গোটা বিশ্বকাপে ব্রেন্ডন ম্যাকালামরা দারুণ খেলেছে। কিন্তু নিজেদের দেশের মাঠে ওরা যে প্রথম বল থেকেই আক্রমণের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে খেলছিল, বিশ্বকাপ ফাইনালে এমসিজিতেও সেই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে খেলতে গিয়ে ডুবল। মেলবোর্নের উইকেটে পেস আর বাউন্স বেশি। ওখানে তো মিচেল জনসন আর স্টার্ক দেড়শোর উপর বল করবেই। সেটা সামলানোর জন্য দেখলাম কিউয়িরা আলাদা করে কিছু ভাবেনি। আধুনিক ক্রিকেটে ১৮৩ আবার কোনও টার্গেট নাকি? যাঁরা তিরাশির ওই দিনের কথা তুলবেন তাঁদের বলি, আমাদের সময় ক্রিকেট অন্য রকম ছিল। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ক্লার্কের এই অস্ট্রেলিয়াকে ১৮৩ দিয়ে আটকে রাখা অসম্ভব।
রবিবার ফাইনালের পর অনেকে বলছেন, ক্লার্কের এই অস্ট্রেলিয়া রিকি পন্টিংয়ের অপরাজেয় টিমের উজ্জ্বল দিন ফিরিয়ে এনেছে। আমি মানতে পারছি না। কারণ আমি মনে করি যে, অস্ট্রেলিয়া ঐতিহাসিক ভাবেই বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম সারির টিম। মনে করে দেখুন, সত্তর বা আশির দশকে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সুপার-পাওয়ার ছিল, তখনও কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ওদের চেয়ে খুব পিছিয়ে ছিল না।
কী এমন আছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দর্শনে যে, এত দশক ধরে খেলাটার উপর এমন কর্তৃত্ব রেখে যাচ্ছে? কী আছে ওদের, যেটা বাকি দেশগুলোর নেই? উত্তরটা খুব সহজ সিস্টেম। ব্রাজিলের ফুটবল বিশ্বকাপে জার্মানির জয়ের নেপথ্যে যেমন ওদের দেশের ফুটবল সিস্টেম, অস্ট্রেলিয়ারও তাই। ওদের দেশটায় জনসংখ্যা কম, কিন্তু ক্রিকেটের পরিকাঠামো দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। শুধু বড় মাঠ ও দুর্দান্ত উইকেট নয়। ওদের অ্যাকাডেমিগুলো অসাধারণ কাজ করে।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রত্যেক প্রজন্মে এক-একজন দুর্দান্ত ক্রিকেট প্রতিভা দেখে এসেছি। অ্যালান বর্ডার, মার্ক টেলর, স্টিভ ওয়, গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্ন, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট থেকে এখন মিচেল জনসন, মিচেল স্টার্ক, স্টিভ স্মিথরা। কিন্তু বাকিদের চেয়ে ওরা এগিয়ে ওই সিস্টেমের জন্যই। দেখুন, আমাদের দেশে কি প্রতিভার অভাব আছে? তবু আমরা ও ভাবে টানা কর্তৃত্ব রাখতে পারি না স্রেফ সিস্টেমের অভাবে। আমাদের দেশে প্রতিভা ওঠে, প্রচুর প্রতিভাই ওঠে। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে অচিরেই হারিয়ে যায়।
এই একটা ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া সময়ের চেয়ে অনেক, অনেক এগিয়ে। অনূর্ধ্ব উনিশ থেকে গ্রেড ক্রিকেট, ‘এ’ টিম থেকে জাতীয় জার্সি একজন প্লেয়ার যাতে স্বচ্ছন্দে এই ধাপগুলো পেরোতে পারে, সেটার সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে ওদের দেশে। প্লেয়ার ‘গ্রুম’ করার যে ব্যাপারটা আমাদের দেশে একেবারেই নেই। তার পর আর একটা জিনিস দেখুন। অস্ট্রেলীয় বোর্ডে এত জন প্রাক্তন ক্রিকেটার আছে তাই ওরা জানে ক্রিকেটারদের ঠিক কী কী দরকার। ওরা জানে, না-কাটা হিরেকে কী ভাবে পালিশ করে তুলতে হয়। এই জিনিসগুলো আমাদের দেশেরও দেখে শেখা উচিত।
অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংগঠনের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। দীর্ঘ দিন ধরে বৈজ্ঞানিক দক্ষতায় ক্রিকেট-সংগঠনের নিট ফল: চ্যাম্পিয়ন একটা টিম। যার চারপাশে যেন অদৃশ্য একটা বলয় তৈরি হয়ে গিয়েছে যে, বাকি দেশগুলো সব এক দুনিয়ার বাসিন্দা। আর আমরা অস্ট্রেলিয়া!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy