Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
আই লিগ // ইস্টবেঙ্গল ১ : ইন্ডিয়ান অ্যারোজ ০

খেতাব দৌড়ে প্রত্যাবর্তন ইস্টবেঙ্গলের

লাল-হলুদ আক্রমণের ঝড় সামলাতে অ্যারোজের দশ জন ফুটবলারই নেমে এসেছিল রক্ষণে। যদিও শেষরক্ষা হল না। শেষ মুহূর্তে গোল করে মশাল জ্বালালেন ডুডু।

উল্লাস: গোলের পরে ডুডুকে অভিনন্দন সতীর্থের। ছবি: শৌভিক দে

উল্লাস: গোলের পরে ডুডুকে অভিনন্দন সতীর্থের। ছবি: শৌভিক দে

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৬
Share: Save:

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ।

নাটকীয় প্রত্যাবর্তন।

আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন লাল-হলুদ শিবিরে। নেপথ্যে ডুডু ওমাগবেমি।

আই লিগে ইস্টবেঙ্গল শেষ ম্যাচ দিল্লির অম্বেডকর স্টেডিয়ামে গত ২ জানুয়ারি ইন্ডিয়ান অ্যারোজের বিরুদ্ধে। তার পর থেকে ক্রমশ পিছিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। আর পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সমর্থকদের ক্ষোভ।

রবিবাসরীয় বারাসতেও ম্যাচের আগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আবহ। মুখে কালো কাপড় বেঁধে পোস্টার নিয়ে মাঠে এসেছিলেন সমর্থকেরা। কেন গুরবিন্দর সিংহ প্রথম দলে নেই? কেন ডুডু-কে নেওয়া হয়েছে? কেন কোচ খালিদ জামিলকে এখনও সরানো হয়নি?— ম্যাচ যত এগিয়েছে, ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। আর ৬৬ মিনিটে দুরন্ত ছন্দে থাকা কেভিন লোবো-কে তুলে নেওয়ার পরে তো রীতিমতো অগ্নিগর্ভ গ্যালারি। ম্যাচের পরে অবশ্য ডুডু-র নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতেই মাঠ ছাড়লেন আট হাজার ৬৭২ জন লাল-হলুদ সমর্থক।

ডুডু নায়ক। ডুডু ত্রাতা।

অ্যারোজের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সময়ে মহম্মদ রফিকের সেন্টার থেকে (৯৩ মিনিটে) হেডে গোল করেই নাইজিরীয় স্ট্রাইকার দৌড়ে গেলেন গ্যালারির দিকে। অথচ কোনও উচ্ছ্বাস নেই। সামাদ আলি মল্লিক লাফিয়ে কাঁধে উঠে পড়লেন তাঁর। ডিফেন্ডার এদুয়ার্দো ফেরিরা দৌড়ে এসে কপালে চুম্বন করলেন ডুডু-র। কাতসুমি মুষ্ঠিবদ্ধ দু’হাত শূন্যে ছুড়ছেন। ডুডু কিন্তু নির্লিপ্ত।

লাল-হলুদ জার্সিতে প্রথম দু’টো ম্যাচে গোল পাননি বলে সমর্থকদের কটাক্ষের শিকার হয়ে হতাশায় হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার) বদলে ফেলেছেন ডুডু। লিখে রেখেছেন, ‘যারা তোমায় আঘাত দিয়েছে, তাদের কোনও দোষ নেই। ভুলটা তোমারই। কারণ, তাদের কাছে তুমি বেশি প্রত্যাশা করেছিল।’ যাবতীয় সমালোচনার জবাব ডুডু দিলেন গোল করেই।

অ্যারোজের বিরুদ্ধে ম্যাচটা তো খালিদের কাছেও ছিল মরণ-বাঁচন লড়াই। মিনার্ভা এফসি-র বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে ফরোয়ার্ডে একা খেলিয়ে ছিলেন ডুডু-কে। এ দিন নাইজিরীয় স্ট্রাইকারের সঙ্গে জুড়ে দেন আনসুমানা ক্রোমা-কে। শুধু তাই নয়। জবি জাস্টিনকে ব্যবহার করলেন তৃতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ফুটবলারদের তিরে বিদ্ধ হয়ে প্রধার্ধে গোলের স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছিল। ডুডু-র একটা হেড বাঁচালেন ম্যাচের সেরা অ্যারোজ গোলরক্ষক প্রভসুখন গিল। আর এক বার তাঁর দুরন্ত প্লেসিং ধাক্কা খেল পোস্টে।

প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাতসুমি ইউসা মাঠের মাঝখানে ডেকে নিলেন বিধ্বস্ত সতীর্থদের। কোচ ও রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলাররা তখন ফিরে গিয়েছেন ড্রেসিংরুমে। সংক্ষিপ্ত টিম মিটিংয়ে প্রথমার্ধের ময়নাতদন্ত সেরে কাতসুমি-রা ফিরলেন ড্রেসিংরুমে। শনিবারই অনুশীলনের পরে প্রাক্তন তারকা মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, খেলোয়াড় জীবনে বহুবার তাঁরা কোচকে ছাড়াই টিম মিটিং করে ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিতেন। এ দিন ঠিক সেটাই করলেন লাল-হলুদের ফুটবলাররা। ফলশ্রুতি— দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যাওয়া ইস্টবেঙ্গল।

লাল-হলুদ আক্রমণের ঝড় সামলাতে অ্যারোজের দশ জন ফুটবলারই নেমে এসেছিল রক্ষণে। যদিও শেষরক্ষা হল না। শেষ মুহূর্তে গোল করে মশাল জ্বালালেন ডুডু। অ্যারোজ কোচ লুইস নর্টন দে মাতোস বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল আজ অনেক বেশি আগ্রাসী ফুটবল খেলেছে।’’ আর খালিদের কথায়, ‘‘প্রচণ্ড চাপে ছিলাম। তবে বিশ্বাস ছিল, ছেলেরা ম্যাচটা জিতেই মাঠ ছাড়বে।’’

ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা অবশ্য উচ্ছ্বাসে ভাসতে রাজি নন। কারণ— লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে আই লিগের বাকি পাঁচটা ম্যাচই জিততে হবে। এই মুহূর্তে ১৩ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের তিন নম্বরে উঠে এল ইস্টবেঙ্গল। রবিবারই গোকুলম এফসি-কে হারিয়ে ১৪ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছে নেরোকা এফসি। দ্বিতীয় স্থানে নেমে যাওয়া মিনার্ভা-র পয়েন্ট ১২ ম্যাচে ২৬। মোহনবাগান চতুর্থস্থানে রয়েছে ১২ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে।

এই পরিস্থিতিতে বাকি পাঁচটা ম্যাচ জিতলে ডুডু-দের পয়েন্ট হবে ৩৮। মোহনবাগানেরও ৩৮ পয়েন্ট হবে শেষ ছ’টি ম্যাচ জিতলে। সেক্ষেত্রে দুই প্রধানকেই তাকিয়ে থাকতে হবে মিনার্ভা এফসি-র দিকে। পঞ্জাবের দলটির পয়েন্ট নষ্টের উপরেই এখন নির্ভর করছে ডুডু, দিপান্দা ডিকা-দের লিগ ভাগ্য। কাতসুমি অবশ্য বলে দিলেন, ‘‘মিনার্ভা ম্যাচটা জিতলেই আমরা খেতাবের আরও কাছে পৌঁছে যাব।’’

১৩ ফেব্রুয়ারি লুধিয়ানায় মিনার্ভা বধের প্রস্তুতি যেন রবিবার বারাসত থেকেই শুরু হয়ে গেল লাল-হলুদ শিবিরে!

ইস্টবেঙ্গল: উবেদ, মেহতাব সিংহ (সামাদ আলি মল্লিক), এদুয়ার্দো ফেরিরা, সালামরঞ্জন সিংহ, লালরাম চুলোভা, কাতসুমি ইউসা, কেভিন লোবো (ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা), জবি জাস্টিন (মহম্মদ রফিক), লালডানমাওয়াইয়া রালতে, আনসুমানা ক্রোমা ও ডুডু ওমাগবেমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE