Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আই লিগ

স্পেনের কাছেই হার মানলেন স্প্যানিশ কোচ

ইস্টবেঙ্গলের কোচ রিয়াল মাদ্রিদ ‘বি’ দলের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই লাল-হলুদ শিবিরে যোগ দিয়েছেন রিয়ালের অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা বোরখা গোমেস পেরেস।

হতাশ: জয়ের হ্যাটট্রিক হল না। চেন্নাই সিটির বিরুদ্ধে হারের পরে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। ছবি: সুমন বল্লভ

হতাশ: জয়ের হ্যাটট্রিক হল না। চেন্নাই সিটির বিরুদ্ধে হারের পরে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। ছবি: সুমন বল্লভ

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:১৩
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল ১ • চেন্নাই সিটি এফসি ২

যুবভারতীতে ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসকে দেখে মনে হচ্ছিল মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ যদি মনে করেন, আই লিগে জয়ের হ্যাটট্রিক হাতছাড়া হওয়ার যন্ত্রণায় তিনি ভেঙে পড়ছেন, ভুল করবেন। আসল কারণ, মর্যাদার লড়াইয়ে জিততে না পারার যন্ত্রণা।

ইস্টবেঙ্গলের কোচ রিয়াল মাদ্রিদ ‘বি’ দলের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই লাল-হলুদ শিবিরে যোগ দিয়েছেন রিয়ালের অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা বোরখা গোমেস পেরেস। ২০০৫ সালে প্রথম বার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন মেক্সিকো দলের সদস্য এনরিকে এসকুয়েদা। লাল-হলুদের দায়িত্ব নিয়ে আলেসান্দ্রো জানিয়েছিলেন, তিকিতাকা অস্ত্রেই প্রতিপক্ষকে বধ করতে চান। মঙ্গলবার যুবভারতীতে লাল-হলুদ দর্শকেরা কোচের ছবি দেওয়া ব্যানার নিয়ে গিয়েছিলেন। স্প্যানিশ ভাষায় যা লেখা ছিল তার অর্থ, ‘একসঙ্গে সাফল্যের পথে’। কিন্তু তাঁরা দেখলেন নিজের অস্ত্রেই ঘায়েল ইস্টবেঙ্গল কোচ!

চেন্নাইয়ের পাঁচ বিদেশির মধ্যে চার জনই স্পেনের। এ দিন তাঁরাই চেন্নাইয়ের স্থানীয় ফুটবলারদের সঙ্গে জোট বেঁধে পাসের বন্যায় ভাসিয়ে দিলেন ইস্টবেঙ্গলের জয়ের স্বপ্ন। লাল-হলুদের ফুটবলারেরা শুরু থেকেই ছন্দহীন। মাঝমাঠে মহম্মদ আল আমনার বিকল্প যে কমলপ্রীত সিংহ হতে পারেন না, ফের প্রমাণিত।

আরও পড়ুন
৪৪ পাসে গোল, মুগ্ধ ফুটবলবিশ্ব, দেখুন সেই ভিডিয়ো

প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণ ফ্রি-কিকে গোল করে চেন্নাইকে এগিয়ে দেন স্যান্দ্রো রদ্রিগেস। দ্বিতীয়ার্ধের সাত মিনিটের মধ্যেই গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে ম্যাচে ফেরান এনরিকে। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে পেনাল্টি থেকে গোল করে চেন্নাইকে এগিয়ে দেন নেস্তর গর্দিলো। চেন্নাই এক্সপ্রেসের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। অধরা থেকে গেল শীর্ষে ওঠার স্বপ্ন।

এই মরসুমে আই লিগে ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ম্যাচ দেখতে যুবভারতীতে এসেছিলেন ভারতীয় ফুটবলের প্রাক্তন তারকা সমরেশ চৌধুরী (পিন্টু)। তিনি বলছিলেন, ‘‘খেলল তো চেন্নাইয়ের ফুটবলারেরা। ইস্টবেঙ্গলকে ওরা দাঁড়াতেই দেয়নি। ওদের চার জন স্প্যানিশ ফুটবলারই দুর্ধর্ষ খেলেছে। মাঝমাঠে ইস্টবেঙ্গলের কোনও নিয়ন্ত্রণই ছিল না। এ ভাবে খেললে জেতা সম্ভব নয়।’’

দলের খেলায় যে তিনি হতাশ, ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে লাল-হলুদ কোচের অভিব্যক্তিতেই স্পষ্ট। দোভাষীর সাহায্যে তিনি বললেন, ‘‘দু’টো শক্তিশালী দল মুখোমুখি হয়েছিল। ওরা শুরুতেই গোল করে দেয়। আমরা গোলের একাধিক সুযোগ তৈরি করেও কাজে লাগাতে পারিনি।’’

আরও পড়ুন
প্রীতমদের হুগলিতে নেই মেয়েদের লিগ

গত মরসুমে আই লিগে অভিষেক ঘটানো চেন্নাই পয়েন্ট টেবলে আট নম্বরে শেষ করেছিল। ইস্টবেঙ্গলে তাদের ৭-১ চূর্ণ করেছিল। কিন্তু এই মরসুমে চেন্নাই ছুটছে এক্সপ্রেস গতিতেই। দুরন্ত প্রত্যাবর্তনের রহস্য ম্যাচের পরে উদঘাটন করলেন কোচ মহম্মদ আকবর বিন আবদুল নওয়াজ।

চেন্নাইয়ের কোচ সিঙ্গাপুরের নাগরিক। তাঁর সহকারী জর্দি ভিয়া স্পেনের। মরসুম শুরু হওয়ার আগে জর্দির কাছে এই চার ফুটবলারের কথা শুনে স্পেন উড়ে গিয়েছিলেন নওয়াজ। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে খেলা দেখে সই করানোর সিদ্ধান্ত নেন। যদিও চেন্নাই কোচ জয়ের জন্য শুধু স্প্যানিশ ফুটবলারদের কৃতিত্ব দিতে চান না। তাঁর কথায়, ‘‘স্থানীয় ফুটবলারদের আমি সব সময় গুরুত্ব দিয়েছি। প্রথম থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল বিদেশি ও ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে দুর্দান্ত বোঝাপড়া গড়ে তোলা। সেই কাজে আমি অনেকটাই সফল হয়েছি।’’ এ দিন ম্যাচের সেরা হন ডিফেন্ডার এডউইন সিডনি বংশপাল। কোচের পাশে বসে তিনি বললেন, ‘‘বিদেশি ফুটবলারদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তা কাজে লাগিয়েই সফল হয়েছি।’’

ইস্টবেঙ্গলের প্রথম একাদশে এ দিন ছিলেন দু’জন মাত্র স্থানীয় ফুটবলার। সামাদ আলি মল্লিক ও মনোজ মহম্মদ!

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত ডাগার, সামাদ আলি মল্লিক, জনি আকোস্তা, বোরখা গোমেস পেরেস, মনোজ মহম্মদ, লালডানমাওয়াইয়া রালতে (সুরাবুদ্দিন মল্লিক) ইয়ামি লংভা (ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা), কমলপ্রীত সিংহ, লালরিনডিকা রালতে, জবি জাস্টিন, এনরিকে এসকুয়েদা (বিদ্যাসাগর সিংহ)।

চেন্নাই সিটি এফসি: কবীর টি, রবের্তো সালভা, এডউইন সিডনি, গৌরব বোরা, অজিতকুমার কামরাজ, আলেকজান্দার রোমারিয়ো, স্যান্দ্রো রদ্রিগেস, চার্লস আনন্দরাজ, প্রভিত রাজু (মাশহুর শরিফ), নেস্তর গর্দিলো ও পেদ্রো মানজ়ি (আমিরুদ্দিন হাজা)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE