Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
শেষ মুহূর্তে হার বাঁচাল ইস্টবেঙ্গল
East Bengal

পেনাল্টি থেকে মানরক্ষা করলেন কোলাদো

ম্যাচের নাটক যে তখনও বাকি ছিল! পেশাদার কোচের মতোই ফুটবলার পরিবর্তন করে সময় খরচের রাস্তাতেও হেঁটেছিলেন চার্চিল কোচ।

হতাশা: পেনাল্টি থেকে গোল করে তিনিই বাঁচালেন ইস্টবেঙ্গলকে। তবে আক্ষেপ চাপতে পারলেন না কোলাদো (ডান দিকে)। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

হতাশা: পেনাল্টি থেকে গোল করে তিনিই বাঁচালেন ইস্টবেঙ্গলকে। তবে আক্ষেপ চাপতে পারলেন না কোলাদো (ডান দিকে)। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০ ০৩:৪৫
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল ১

চার্চিল ব্রাদার্স ১

সংযুক্ত সময়ের শুরুতেই টিভি ক্যামেরায় এক ঝলক ধরেছিল চার্চিল ব্রাদার্সের কোচ ফের্নান্দো জোসে বার্নার্দো তাভারেসকে। প্রথমার্ধের ১০ মিনিটে করা উইলিস প্লাজার গোলে তখনও ১-০ এগিয়ে গোয়ার দলটি। কলকাতা থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে গোয়া ফেরার সম্ভাবনায় তখন পর্তুগিজ এই কোচ মশগুল। খেলা বাকি মাত্র পাঁচ মিনিট।

ম্যাচের নাটক যে তখনও বাকি ছিল! পেশাদার কোচের মতোই ফুটবলার পরিবর্তন করে সময় খরচের রাস্তাতেও হেঁটেছিলেন চার্চিল কোচ। যুবভারতীতে হাজার বারো দর্শক তখন ইস্টবেঙ্গল হারছে ধরে নিয়ে স্টেডিয়াম ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তখনই নাটকীয় ভাবে বাঁ দিক থেকে ইস্টবেঙ্গল লেফ্ট ব্যাক আভাস থাপার বাড়ানো বল ভিক্তর পেরেসের পা ঘুরে এল পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামা আনসুমানা ক্রোমার কাছে। কিন্তু ক্রোমাকে বক্সের মধ্যে ফাউল করলেন চার্চিলের ডিফেন্ডার সুরেশ মিতেই। রেফারি রোয়ান অরুমুঘন পেনাল্টি দিতেই সমর্থকদের শব্দব্রহ্মে ফের জেগে উঠল এতক্ষণ ঝিমিয়ে থাকা গ্যালারি। কিন্তু খাইমে সান্তোস কোলাদো পেনাল্টি কিক নেওয়ার পরে সেই বল যখন চার্চিল গোলকিপার জেমস কিথানের হাতে লেগে ফিরল, তখন টেনশনে হাত প্রায় মুঠো করে ফেলেছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। তবে ফিরতি বল জালে জড়িয়ে ১-১ করতেই আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন তাঁরা। প্লাজ়াদের শিবিরে চকিতেই নামল আঁধার।

শনিবার সন্ধ্যায় যুবভারতীতে এই ড্রয়ের ফলে ১৪ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আই লিগের পাঁচ নম্বরে থাকল ইস্টবেঙ্গল। অন্য দিকে, শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ১৩ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে চার্চিল ব্রাদার্স। যার ফলে সুবিধা হল শীর্ষে থাকা মোহনবাগানের। পরবর্তী সাত ম্যাচে ১০ পয়েন্ট পেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে কিবু ভিকুনার দল। হতাশ চার্চিল কোচ ম্যাচ শেষে বলেও গেলেন, ‘‘শেষ মুহূর্তের ভুলে গোল খেয়ে মোহনবাগানের আরও সুবিধা করে দিলাম আমরা। ভাগ্য সঙ্গে নেই। অঘটন না ঘটলে
মোহনবাগানই চ্যাম্পিয়ন।’’

কাশিম আইদারা মাঝমাঠে না থাকায় এ দিন ইস্টবেঙ্গল কোচ দল সাজিয়েছিলেন ৪-১-৩-২ ছকে। চার ব্যাকের আগে দাঁড়িয়ে প্লাজা, দওদা সিসেদের আক্রমণ ভাঙার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভিক্তর আলোন্সোকে। স্পেনীয় কোচ মারিয়ো জানতেন বিপক্ষ রক্ষণে দীর্ঘদেহী ফুটবলারের সংখ্যা বেশি। তাই তাদের বিব্রত করতে মার্কোস খিমেনেস দে লা এস্পারার সঙ্গে রেখে দিয়েছিলেন কোলাদোকে।

এই রণনীতি নিয়ে প্রথম সাত মিনিট দাপিয়ে শুরু করেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু ১০ মিনিটে সেই রক্ষণের ভুলেই উইলিস প্লাজ়ার গোলে এগিয়ে যায় চার্চিল। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ ও গোলকিপারের মাঝে তৈরি হওয়া ফাঁকা জায়গায় বল ভাসিয়ে দিয়েছিলেন দওদা সিসে। অনুমানে ভুল হওয়ায় সেই বল ধরে তা বিপন্মুক্ত করতে পারেননি লাল-হলুদ শিবিরের স্টপার আসির আখতার। ট্যাকল করতে গিয়ে ব্যর্থ হন মেহতাব সিংহ। সেই বল ধরে প্রথমে মেহতাব ও তার পরে রাইট ব্যাক সামাদকে কাটিয়ে নিখুঁত ভাবে বল জালে জড়িয়ে ১-১ করেন প্লাজ়া।

প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলের খেলা দানা বাঁধতে পারেনি রক্ষণ ও মাঝমাঠের একাধিক ভুলভ্রান্তির জন্য। মার্কিং, কভারিং ঠিক হচ্ছিল না। তার উপরে কাশিম না থাকায় চাপ বাড়ছিল। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হচ্ছিল ভুল পাস। দ্বিতীয়ার্ধে ক্রোমাকে নামাতেই ছন্দে ফেরে ইস্টবেঙ্গল। আক্রমণ ভাগে বল ধরে তা সতীর্থদের কোণাকুনি বাড়িয়ে বিপক্ষ রক্ষণে চাপ বাড়াতে থাকেন তিনিই। একটা গোল প্রায় করেও ফেলেছিলেন। কিন্তু তা অফসাইডে বাতিল হয়। সাতাত্তর মিনিটে খুয়ান মেরার কর্নার থেকে মেহতাব সিংহের হেড বারে না লাগলে তখনই সমতা ফেরাতে পারত মারিয়োর ছেলেরা।

টানা চার ম্যাচ অপরাজিত থেকে ইস্টবেঙ্গল কোচ বলছেন,‘‘দ্বিতীয়ার্ধে তো আমরাই দাপিয়ে খেললাম।’’ আর ক্রোমার ভবিষ্যৎ? মারিয়ো বলছেন, ‘‘আপাতত পরের ম্যাচ। বাকিটা জনি আকোস্তা এলে বলব।

ইস্টবেঙ্গল: মিরশাদ কে, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব সিংহ, আসির আখতার (গুরবিন্দর সিংহ), আভাস থাপা, ভিক্তর পেরেস আলোন্সো, খুয়ান মেরা গঞ্জালেস, পি সি রোহলুপুইয়া (আনসুমানা ক্রোমা), ব্র্যান্ডন ভানলালরেমডিকা (বৈথাং হাওকিপ), খাইমে সান্তোস কোলাদো, মার্কোস খিমেনেস দে লা এস্পারা।

চার্চিল ব্রাদার্স: জেমস কিথান, পনিফ ভাজ, রবার্ট প্রিমাস, রাদানফা আবু বকর, জোভেল মার্টিন্স, দওদা সিসে (লমগওলেন গও হাংশিং), গ্লান মার্টিন্স (সুরেশ মিতেই), কুয়ান গোমেস, সক্রেটিস ইমানুয়েল আদোলফো (কলিফ আলহাসান), লালখপুইমাউইয়া, উইলিস প্লাজ়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

East Bengal Churchill Brothers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE