ফেরা: কটক থেকে ট্রেনে ফিরলেন অর্ণব, শুভাশিস। সোমবার হাওড়া স্টেশনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ডার্বি বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই উত্তপ্ত লাল-হলুদ অন্দরমহল। টিম ম্যানেজমেন্টকে অন্ধকারে রেখে নজিরবিহীন ভাবে কটকের টিম হোটেল ছেড়ে কলকাতা চলে গেলেন গুরবিন্দর সিংহ, মেহতাব হোসেন-রা। পড়ে থাকলেন চার ফুটবলার— ওয়েডসন আনসেলমে, ইভান বুকেনিয়া, উইলিস প্লাজা ও থাঙ্গসিম হাওকিপ।
রবিবার রাতে বারবাটি স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে হারেই পরেই কলকাতা ফেরার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন ফুটবলাররা। দল ফাইনালে উঠবে ধরে নিয়ে ২২ মে উড়ানের টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু ডার্বিতে হারের পরে পরিস্থিতি বদলে যায় মুহূর্তের মধ্যে। রাতেই ক্লাবের তরফে তাঁদের জানানো হয়, উড়ানের টিকিট না পাওয়ায় সোমবার মধ্যাহ্নভোজের পরে বাসে করে কলকাতায় রওনা হবে দল। কিন্তু বাসে করে কোনও অবস্থাতেই ফিরতে রাজি হননি তাঁরা। রবিবার গভীর রাতেই গাড়ি ভাড়া করে প্রথমে কটকের টিম হোটেল ছেড়ে কলকাতা রওনা হন গুরবিন্দর-সহ পাঁচ ফুটবলার।
তার পরে ভোরবেলা কটক স্টেশন থেকে জন শতাব্দি এক্সপ্রেসের সাধারণ কামরায় উঠে পড়েন অর্ণব মণ্ডল, মহম্মদ রফিক, শুভাশিস রায়চৌধুরী, নারায়ণ দাস, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব ও গোলকিপার কোচ অভিজিৎ মণ্ডল! ওয়েডসন-দের নিয়ে দুপুরে কলকাতা রওনা হলেন তিন ফুটবল পরামর্শদাতা মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, তুষার রক্ষিত এবং সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরী।
ট্রেনের ভিড় কামরায় অনেকেই বসার জায়গা না পেয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ডার্বি দেখে একই ট্রেনে কলকাতায় ফিরছিলেন মোহনবাগান সমর্থকরা। তাঁরাই শেষ পর্যন্ত বসার ব্যবস্থা করে দেন লাল-হলুদ ফুটবলারদের। এবং সঙ্গে সঙ্গেই সেল্ফি তুলে পোস্ট করে দেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে। যা নিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
জয়ী: কলকাতা বিমানবন্দরে ডার্বি-জয়ী ডাফি, সনি। নিজস্ব চিত্র
সোমবার সকালে কটকে ইস্টবেঙ্গলের টিম হোটেলে গিয়ে দেখা গেল। আবহটাই বদলে গিয়েছে। থমথমে পরিবেশে প্রাতঃরাশ সারছেন ওয়েডসন-রা। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘ফুটবলাররা যে চলে গিয়েছে আমি জানতাম না।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘মোহনবাগানের কাছে হেরে মানসিক ভাবে ওরা বিধ্বস্ত ছিল। কলকাতার দূরত্ব বেশি নয় বলেই ওরা হয়তো চলে গিয়েছে।’’ টিম হোটেল ছেড়ে এ ভাবে চলে আসার কারণ কী? অর্ণব বললেন, ‘‘ব্যক্তিগত কারণে আমাদের কলকাতায় ফেরাটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। তাই সকালের ট্রেনে চলে এসেছি।’’ মেহতাব বলেছেন, ‘‘ক্লাব আমাদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু দুপুরে রওনা হলে কলকাতায় পৌঁছতাম রাতে। তা-ই আমরা ট্রেনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই।’’
ফুটবলারদের হোটেল ছাড়ার খবরে বিস্মিত ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার বলছেন, ‘‘অবাঞ্ছিত ঘটনা। ফুটবলারদের জানানো হয়েছিল, একসঙ্গে সকলের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাসে করে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ এই ঘটনায় লাল-হলুদ অন্দরমহলে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। কেউ কেউ বললেন, ‘‘অর্ণব, রফিক ও নারায়ণ জাতীয় দলের ফুটবলার। আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে ওদের এ ভাবে সাধারণ কামরায় ফেরাটা মেনে নেওয়া যায় না। ওরা চাইলে অন্যদের মতো গাড়ি ভাড়া করে ফিরতে পারত। অথবা উড়ানের টিকিট কেটে।’’ মরসুম শেষ হয়ে গেলেও বিতর্ক অব্যাহত ইস্টবেঙ্গলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy