আগরতলার বাড়িতে দীপার বাবা-মা-র ছবি তুলেছেন বাপি রায়চৌধুরী
তাঁর সোনালি ভবিষ্যৎ গড়ার পিছনে বড় দিদির হয়তো তেমন কোনও ভূমিকা নেই। তবে পূজা কর্মকার না থাকলে আজকের দীপা কর্মকারও বোধহয় জন্মাতেন না!
সালটা নব্বই দশকের মাঝামাঝি। দীপার বাবা দুলাল কর্মকার (যিনি আবার সাইয়ের ভারোত্তোলক কোচও) তখন তাঁর বড় মেয়ে পূজাকে জিমন্যাস্ট বানানোর স্বপ্নে বুঁদ। নিয়মিত যোগাসন, শরীর চর্চা সবই চলছে জোরকদমে। তবে মাস ছ’য়েক কাটতে না কাটতেই মোহভঙ্গ হয়ে যায় তাঁর। দুলালবাবু জানতে পারেন, পূজা নাকি শবাসন করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ছে। এবং এটা এক দিনের ব্যাপার নয়, প্রায় রোজের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
কিন্তু কেন?
শুক্রবার রাতে আগরতলার বাড়িতে যখন অনেক পুরনো কথার ঝুলি খুলে বসেছেন দুলালবাবু, তখন তাঁর পাশে দীপার মা গৌরী কর্মকারও উপস্থিত। তাঁর দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে দীপার বাবা বললেন, ‘‘মেয়েকে শখ করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু পড়াশোনার চাপ সামলে পূজা পুরোপুরি প্র্যাকটিসে মন দিতে পারছিল না। তাই স্কুলের পরে যোগাসনের সময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল।’’
পূজার শেষ পর্যন্ত জিমন্যাস্ট হয়ে ওঠা হয়নি। তবে বড় মেয়ের ক্ষেত্রে যে ভুল করেছিলেন তাঁরা, সেটা দীপার বেলায় করেননি। বরং সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দীপাকে জিমন্যাস্ট তৈরি করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছেন দুলালবাবু। এমনকী দীপার পথে যাতে পড়াশোনা কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে না পারে, তার জন্য ইচ্ছা করেই বাংলা মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করেন তাঁকে। গৌরীদেবী বলছিলেন, ‘‘আমাদের পরিবারের সবাই স্পোর্টসম্যান। তাই আমরা শুরু থেকেই চেয়েছিলাম আমাদের সন্তান যেন স্পোর্টসম্যান তৈরি হয়। পূজাকে দেখে আমরা বুঝেছিলাম, পড়াশুনো আর খেলাধুলো এক সঙ্গে চালানো সম্ভব নয়। অন্তত যদি লক্ষ্যটা অলিম্পিক্স হয়।’’ উচ্চমধ্যবিত্তের ঘরে যা সচরাচর হয় না। পড়াশুনার চেয়ে বেশি খেলাধুলাকে প্রশ্রয় দেওয়া। তবে এটা বোধহয় স্পোর্টসম্যান পরিবার বলেই সম্ভব হল।
বাবা-মায়ের ইচ্ছা থাকলেও, দীপার অবশ্য শুরুতে জিমন্যাস্টিক্সে তেমন কোনও আগ্রহ ছিল না। বরং লেখাপড়ার দিকেই বেশি ঝোঁক ছিল তাঁর। বাড়িতে হয়তো বইয়ের আলমারি নেই, তবে অষ্টম ক্লাস পর্যন্ত প্রথম দশের মধ্যে র্যাঙ্ক করতেন স্কুলে। এমনকী রিওতেও নিয়ে গিয়েছেন পরীক্ষার নোটসগুলো। কেন না ফিরলেই এমএ পরীক্ষা শুরু তাঁর। গৌরীদেবী বলছিলেন, ‘‘১৪ তারিখ পর্যন্ত ওকে বই খুলতে মানা করেছি। তার পর যা খুশি করুক। আসলে টিনা (দীপার ডাক নাম) একটা কথা বলে। পাস করলে পাশের বাড়ির লোকটাও জানবে না। কিন্তু ফেল করলে গোটা ভারতবর্ষ জেনে যাবে। আর সেটা নিয়ে মজা করবে।’’ টিনা অবশ্য ২১ অগস্ট প্রথম পরীক্ষা দিতে পারছেন না। কেন না তিনি ফিরছেন তার পরের দিন।
জিমন্যাস্টিক্সে পাঁচ বছর বয়সে হাতেখড়ি দীপার। তবে খেলাটার প্রতি ভালবাসা তৈরি হয় দু’হাজারের শুরুতে। আগরতলায় নর্থইস্ট উৎসবে প্রথম সোনা জেতার পরে। সেখান থেকে আর কোনও দিন পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দীপাকে। তবে পিছনের পাতা উল্টোলে বাবা-মায়ের অবদান তো বটেই, বড় দিদির কাছেও কৃতজ্ঞ থাকতে হবে তাঁকে।
‘পুজা’ বিফলে না গেলে আশার ‘দীপ’ জ্বালানো যেত না যে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy