Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘ক্যানসারকে হারিয়ে বিশ্বজয় সেরা করেছে ববি মুরকে’

ববি মুর যে সময় ইংল্যান্ড ফুটবলে ঝলমল করছেন, তখন আমরাও ভারতীয় ফুটবলে চূড়ান্ত শিখরে নিয়ে গিয়েছি দেশকে।

প্রেরণা: বিশ্বকাপের সঙ্গে জীবনযুদ্ধেও জিতেছিলেন ববি মুর।

প্রেরণা: বিশ্বকাপের সঙ্গে জীবনযুদ্ধেও জিতেছিলেন ববি মুর।

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৮ ০৪:২৪
Share: Save:

ইংল্যান্ডের সবর্কালের সেরা ফুটবলার ববি মুরের খেলা আমি মাঠে বসে বা টিভিতে দেখিনি। দেখার সুযোগও ছিল না।

তবে আমি ভাগ্যবান যে, মুরের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। বেশ কিছুক্ষণ ওর সঙ্গে কথাও বলেছিলাম ভারতীয় ফুটবল নিয়ে। ব্যবস্থাটা করেছিলেন তৎকালীন ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। তিনিই কোচিতে নেহরু কাপের ফাইনালে পুরস্কার দিতে নিয়ে এসেছিলেন ইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে। সুদর্শন, সুঠাম, আকর্ষক চেহারা। হাসিখুশি। বুঝতেই পারিনি এই লোকটা স্বয়ং ক্যানসার আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও অসাধারণ জেদ দেখিয়ে কী ভাবে বিশ্বকাপ জিতেছে!

প্রিয়বাবু পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর তাঁর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম। ১৯৬৬-তে জার্মানির বিরুদ্ধে সেই বিতর্কিত গোল থেকে এ দেশের ফুটবল নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। আমাকে উনি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘তোমাদের দেশের ফুটবল কেন এখনও পেশাদার হল না?’’ আমি বলেছিলাম, ‘‘সেই চেষ্টা চলছে। অপেশাদার হয়েও কিন্তু আমরা এশিয়াডে পদক জিতেছি। অলিম্পিক্সে খেলেছি।’’

ববি মুর যে সময় ইংল্যান্ড ফুটবলে ঝলমল করছেন, তখন আমরাও ভারতীয় ফুটবলে চূড়ান্ত শিখরে নিয়ে গিয়েছি দেশকে। আমার দুঃখ যে মুর যে বার বিশ্বকাপ জিতলেন, সে বার আমাদেরও সুযোগ এসেছিল বিশ্বকাপ খেলার। ১৯৬২-তে আমার অধিনায়কত্বে ভারত এশিয়াডে সোনা জিতেছিল। ঠিক ছিল, ভারত ১৯৬৬ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে এশীয় সেরা হওয়ার সুবাদে। কিন্তু ফেডারেশন কর্তাদের ঢিলেমি এবং টাকা জোগাড় করতে না পারার ব্যর্থতা সব আশা শেষ করে দিয়েছিল। বিশ্বকাপ না খেলতে পারার সেই হতাশা এখনও আমাকে গ্রাস করে। এই বয়সেও দুঃখ দেয়।

১৯৬৬ সালে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের সেই ফাইনালটা ববি মুরের দল জিতেছিল ফ্রানজ় বেকেনবাউয়ারের টিমকে হারিয়ে। ৪-২ গোলে খেলা শেষ হয়েছিল। কিন্তু ম্যাচটি ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়েছিল বিতর্কিত গোলের জন্য। কিন্তু আরও একটা বিষয় দেখার ছিল। দু’দিকে ছিলেন এমন দু’জন ফুটবলার যাদের খেলার ধরনটা ছিল একই রকম। ববি মুর এবং বেকেনবাউয়ার। দু’জনেই ছিলেন ডিফেন্ডার এবং একই সঙ্গে অ্যাটাকার। নিজেদের গোল সামলে বিপক্ষের বক্সে গিয়ে গোল করার দুর্লভ গুণ ছিল ওঁদের। দু’জনেরই মাঠে নেমে পুরো দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ছিল। নানা বিতর্কিত বিষয়ে জড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও ববি মুর দু’টো বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। ১৯৭০ এর বিশ্বকাপেও সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি। সে সব বিষয় দূরে সরিয়ে রেখেও বলা যায়, যতই ববি চার্লটন, রয় উইলসন বা ডেভিড বেকহ্যামরা আসুন, ইংল্যান্ডে ববি মুরের মতো ফুটবলার এখনও জন্মাননি। পেলেই তো স্বীকার করেছেন, যত ডিফেন্ডারের বিরুদ্ধে খেলেছেন তাদের মধ্যে মুরই সেরা। বেকেনবাউয়ারও বলে ফেলেছেন, তাঁর দেখা সেরা ডিফেন্ডার।

চার্লটন বা উইলসনরা তবুও মুরের আশেপাশে থাকবেন, বেকহ্যামকে আমি সেই জায়গায় রাখবই না। কিছু ভাল ফ্রি কিক আর চুটকি ফুটবল দিয়ে আর যা-ই হোক, সেরার সেরা হওয়া যায় না। তাই বেকহ্যাম কোনও লড়াইতে আসবে না। ববি মুরকে আমি আরও কৃতিত্ব দেব এ জন্যই যে, যকৃতে ক্যানসার ধরা পড়ার দু’বছর পরে তিনি বিশ্বকাপ জিতেছেন সেরা ম্যাচ খেলে। খেলা চালিয়ে গিয়েছেন দশ বছর। কোচিং করেছেন ১৯৮৬ পর্যন্ত। অসাধারণ ইচ্ছাশক্তি ছাড়া যা সম্ভব নয়। মাত্র একান্ন বছর বয়সে চলে গিয়েছেন পৃথিবী ছেড়ে। কিন্তু ফুটবল বিশ্ব তাঁকে কখনও ভুলবে না। ইংল্যান্ড তো নয়ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE