Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ব্যর্থতা খিদে বাড়িয়ে দিয়েছে শুভমনের

রবিবার সকালে কেকেআর টিম হোটেলে আনন্দবাজারকে শুভমন বলেন, ‘‘আমি রূপকথায় বিশ্বাস করি না। নিজের দক্ষতায় বিশ্বাস করি। প্রথম সুযোগে সফল হতে পারিনি ঠিকই। কিন্তু এক দিক থেকে এটা ভালই হয়েছে। আমার খিদে দ্বিগুণ করে দিয়েছে। ব্যর্থতার স্বাদ না পেলে সাফল্যের তৃপ্তি পাওয়া যায় না। সামনে আইপিএল। চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দেওয়ার। ফল ভাল হলে আরও এক বার আমার সামনে দরজা খুলে যাবে।’’

প্রতিজ্ঞ: ভারতীয় ড্রেসিংরুমে অধিনায়ক কোহালির পরামর্শ মেনে এগোতে চান শুভমন গিল। নিজস্ব চিত্র

প্রতিজ্ঞ: ভারতীয় ড্রেসিংরুমে অধিনায়ক কোহালির পরামর্শ মেনে এগোতে চান শুভমন গিল। নিজস্ব চিত্র

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫৩
Share: Save:

ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ভাবা হচ্ছে শুভমন গিলকে। যুবরাজ সিংহ, জাক কালিস, সাইমন ক্যাটিচ, এমনকি সুনীল গাওস্করও তাঁর ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ। নিউজ়িল্যান্ড সফরে ওয়ান ডে সিরিজের শেষ দু’টি ম্যাচে সুযোগ পেয়ে সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। প্রথম ম্যাচে আউট হন ৯ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে করেন সাত রান। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ থেকে বাদ পড়েন তিনি। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের নকশা থেকেও পিছিয়ে পড়েন। শুভমন যদিও ভেঙে পড়েননি। ভারতীয় দলে নিজের জায়গা পোক্ত করার খিদে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে তাঁর।

রবিবার সকালে কেকেআর টিম হোটেলে আনন্দবাজারকে শুভমন বলেন, ‘‘আমি রূপকথায় বিশ্বাস করি না। নিজের দক্ষতায় বিশ্বাস করি। প্রথম সুযোগে সফল হতে পারিনি ঠিকই। কিন্তু এক দিক থেকে এটা ভালই হয়েছে। আমার খিদে দ্বিগুণ করে দিয়েছে। ব্যর্থতার স্বাদ না পেলে সাফল্যের তৃপ্তি পাওয়া যায় না। সামনে আইপিএল। চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দেওয়ার। ফল ভাল হলে আরও এক বার আমার সামনে দরজা খুলে যাবে।’’

ভারতীয় দলে যোগ দেওয়ার আগে শুভমন বলে গিয়েছিলেন, ‘‘বিরাট ভাইয়ের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’’ নিউজ়িল্যান্ড সফরে দলের সঙ্গে প্রথম অনুশীলনের দিন তাঁকে বেশ কিছু মূল্যবান পরামর্শ দেন বিরাট। শুভমন বলছিলেন, ‘‘আমাকে দেখেই বিরাট ভাই বলেছিলেন, যদি তোমার মধ্যে প্রতিভা থাকে তা হলে প্রথম সুযোগেই সেটা প্রমাণ করতে হবে। শুরুতে তাঁর এই কথা শুনে আমি চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু দলের সঙ্গে আরও সময় কাটিয়ে বুঝতে পারলাম, গোটা দলের মানসিকতাই এ রকম। সবাই নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে। ড্রেসিংরুমে জুনিয়র, সিনিয়র কোনও ফারাক নেই। প্রত্যেকের পরামর্শের সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।’’

শুভমনও মুখিয়ে রয়েছেন তাঁর দ্বিতীয় সুযোগের জন্য। মুখিয়ে থাকবেন না-ই বা কেন। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট অন্তপ্রাণ। পঞ্জাবের কৃষক বাড়ির ছেলে শুভমন। তাঁর জন্য বাড়ির উঠোনেই সিমেন্টের পিচ তৈরি করে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা লখবিন্দর গিল। সেখানেই চলত তাঁর অনুশীলন। ২০০৭ সালে চাক খেরেওয়ালা গ্রাম থেকে শুভমন ও তাঁর মাকে মোহালি নিয়ে আসেন লখবিন্দর। কারণ, মোহালিতে নজরে উঠে আসার সুযোগ বেশি। কিন্তু গ্রামের বাড়ির সেই সিমেন্টের পিচ এখনও রয়েছে। মাঝে মধ্যেই গ্রামের বাড়ি গিয়ে অনুশীলন করতেন শুভমন। এমনকি এখনও সেখানে গেলে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে সেই পিচেই চলে তাঁর মহড়া।

শুভমনের কথায়, ‘‘সিমেন্টের সেই পিচ আমার শটে ধার বাড়াতে সাহায্য করেছে। টেনিস বল ভিজিয়ে পেস ও বাউন্সের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার শিক্ষা পেয়েছি। স্কোয়ার কাট, পুল, হুক শট উন্নত করার জন্য বাবা আমাকে শর্ট বল করতেন। সেখান থেকেই এ ধরনের শট রপ্ত করেছি।’’ একই সঙ্গে চলত সুইং সামলানোর পাঠ। হাল্কা প্লাস্টিক বলে অনুশীলন করতেন। বলছিলেন, ‘‘হাল্কা প্লাস্টিক বল হাওয়ায় খুব নড়াচড়া করে। সিমেন্টে পড়ে দ্রুত ব্যাটে আসে। সুইং বোলারদের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার পাঠ সেখান থেকেই নেওয়া।’’

শুভমনের সঙ্গে একটি শট খুব পরিচিত। তার নাম ‘শর্ট আর্ম জ্যাব’। সামনের পায়ে ভর দিয়ে পুল শট মারার ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যা মারতে দেখা যেত রিকি পন্টিংকে। রাহুল দ্রাবিড়ও এ ধরনের শটের সঙ্গে পরিচিত। বর্তমানে দেখা যায় বিরাটের ব্যাটে। শুভমনও শর্ট আর্ম জ্যাব খুব ভাল করে রপ্ত করেছেন। ‘‘বলে পেস থাকলে কোমর ঘোরানোর সময় পাওয়া যায় না। তখন সামনের পায়ে ভর দিয়েই কব্জির মোচড়ের সাহায্যে এই শট নিতে হয়। ছোটবেলা থেকে রিকি পন্টিংকে দেখতাম। তখন থেকেই প্রস্তুতি নিতাম। এখন অনায়াসে এই শট নিতে পারি,’’ ব্যাখ্যা শুভমনের।

২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৯৪ বলে ১০২ রান করে ভারতকে ফাইনালে তুলেছিলেন। সেখান থেকেই নজরে উঠে আসেন। গত বারের আইপিএল নিলামে ১.৮ কোটি টাকায় তাঁকে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। ১৩ ম্যাচে ২০৩ রান করেন। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৭ রান। ব্যাটিং অর্ডারে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নামানো হত তাঁকে। কোনও ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাট করলে তার পরের ম্যাচে খেলতে হত সাত নম্বরে। এ বারের রঞ্জি ট্রফিতে পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে একটি ডাবল সেঞ্চুরি ও একটি সেঞ্চুরি। তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে ২৬৮ রান তাঁর সর্বোচ্চ। পঞ্জাব দলের সতীর্থরা তাঁকে বলেন ‘ছোটা ধমাকা’।

রঞ্জি ট্রফিতে যে সব শটে রান করেন, টি-টোয়েন্টিতেও একই মনোভাব নিয়ে খেলেন। কিন্তু শুভমন জানেন টি-টোয়েন্টিতে এক বার ব্যর্থ হতে শুরু করলে ফিরে আসার সুযোগ কম পাওয়া যায়। যা তাঁকে শিখিয়েছেন যুবরাজ সিংহ। শুভমন বললেন, ‘‘যুবি ভাই বলেন, টি-টোয়েন্টিতে এক বার ছন্দ পেলে বিপক্ষকে শেষ করে দাও। সেটাই মেনে চলি।’’

গত বার আইপিএলে যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতেন শুভমন। এ বার কোন জায়গায় ব্যাট করতে পছন্দ করবেন তিনি? তাঁর উত্তর, ‘‘দল যেখানে আমাকে পাঠাবে। সেখানে ব্যাট করতে আমি রাজি। সব পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে তোলার চেষ্টা করি। দ্রাবিড় স্যরের সঙ্গে দেখা হলেই তিনি বলেন, টেকনিকের সঙ্গে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নেওয়াটাও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন আমি চেষ্টা করি ভেঙে না পড়ার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE