Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Youssouf Koita

ফুটবলে দলকে ‘ডোবালে’ই ফিরে আসে এসকোবার কাণ্ডের আতঙ্ক

আফ্রিকা মহাদেশের এই সব ঘটনা সত্যিই দুশ্চিন্তায় রাখে ফুটবলারদের। বিশেষত বড় কোনও ব্যর্থতার ঘটনা ঘটলে তো কথাই নেই। নিজেদের আড়াল করে রাখাটাই যেন তখন ভাল। মালির গোলরক্ষক ইউসুফ কোইতার বল ফস্কানোর হতাশার সঙ্গে জুড়ে গেছে সেই ভয়টাও।

বিশ্রী গোল খাওয়ার সেই মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্রী গোল খাওয়ার সেই মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ১৮:২৫
Share: Save:

আন্দ্রে এসকোবারকে মনে আছে? বিশ্বকাপে আত্মঘাতী গোল করার ‘অপরাধে’ যাঁকে গুলি করে মারা হয়েছিল কলম্বিয়ায়!

বা ক্যামেরুনের স্ট্রাইকার অ্যালবার্ট ইবোস। ক্লাব ফুটবলে হারের জন্য যাঁকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা হয়েছিল!

আফ্রিকা মহাদেশ, দক্ষিণ আমেরিকার এই সব ঘটনা সত্যিই দুশ্চিন্তায় রাখে ফুটবলারদের। বিশেষত বড় কোনও ব্যর্থতার ঘটনা ঘটলে তো কথাই নেই। নিজেদের আড়াল করে রাখাটাই যেন তখন ভাল। মালির গোলরক্ষক ইউসুফ কোইতার বল ফস্কানোর হতাশার সঙ্গে জুড়ে গেছে সেই ভয়টাই। হয়তো অমূলক। তবু ওই দুই মহাদেশে ফুটবলে দলকে ‘ডোবানো’র মতো ঘটনা কেউ ঘটিয়ে ফেললে, ভয়টা মনের মধ্যে উড়ে আসবেই।

ইউসুফ কোইতা শনিবারের যুবভারতীতে তৃতীয়-চতুর্থ স্থানের ম্যাচের ‘ভিলেন’! অথচ গোটা টুর্নামেন্ট, এমনকী শনিবারের ম্যাচেও, ভীষণ ভাল খেলেছিল গোটা দল। টুর্নামেন্ট শেষে এই মালি দলের কেউ কেউ নায়ক হয়ে উঠতে পারত। তেমনটা হল না। ফুটবল কখন কাকে তুলবে, আর কখন কাকে ফেলবে, সেটা কেউ জানে না। যুব বিশ্বকাপ সেটাই আরও এক বার দেখিয়ে দিল।

মালি বনাম ব্রাজিল ম্যাচ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল কোইতা। তেমন গতি না থাকা গড়ানো বল যে ভাবে হাতের তলা দিয়ে গোলে ঢুকে গিয়েছিল, তার দায় পুরোটাই তার। দ্বিতীয় গোল হজমের পিছনেও গোলকিপারের অনেকটা দোষ ছিল। ওই কান্না ছিল হতাশার। ওই কান্না ছিল নিজেকে নিজেকে ক্ষমা করতে না পারার। আর সঙ্গে কোথাও একটা আতঙ্কও কি কাজ করছিল? মিক্স জোনে সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেল মালি দল। মালি শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হোটেলে ফিরেও বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েছে কোইতা। সারা রাত ঘুমোতে পারেনি। হতাশায় তো বটেই। হয়তো কিছুটা উদ্বেগেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালি দলের এক কর্তা তো মেনেই নিলেন, ‘‘একটা সমস্যা তো আছেই। অতীতে হয়েছে। কিন্তু এখন অনেক কম। আজকাল আর এতটা শোনা যায় না। আসলে এই আবেগটাকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কিন্তু আমরা সবাই ওর সঙ্গে আছি। আর ও তো ছোট। ওর ভয় পাওয়ার কারণ নেই।’’ বললেন ঠিকই, কিন্তু নিশ্চিন্ত হতে পারলেন কি?

আরও পড়ুন: ভিলেন থেকে স্টার, পাঁচ মাসে বদলে গেল ব্রিউস্টারের জীবন

আরও পড়ুন: হেরেও চ্যাম্পিয়ন ভারত, দর্শকে বিশ্বরেকর্ড

ইংল্যান্ড যখন স্পেনের বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচ খেলতে নামল, তখন মালি শিবিরে শ্মশানের মতো নিস্তব্ধতা। এই ছোট ছোট ছেলেগুলোই তো কিছু দিন আগে বলিউডের গানের সঙ্গে সঙ্গে তাল ঠুকছিল। এরাই তো শাহরুখ, সলমনদের জন্য পাগল ছিল। কিন্তু একটা ভুল কী ভাবে যেন গুটিয়ে দিয়েছে পুরো দলকে।

এ বার ফিরতে হবে দেশে। আর পুরনো রেকর্ডই ভাবাচ্ছে পুরো দলকে। মনের কোণায় কোথাও একটা জমতে শুরু করেছে আতঙ্কের আবহ। সতীর্থরা যতই সান্ত্বনা দিক না কেন, কোইতা ডুবে গিয়েছেন এক অজানা আতঙ্কে। আফ্রিকা এবং দক্রষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে খারাপ নজির রয়েছে যে!

১৯৯৪ বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার হয়ে খেলেছিলেন ছ’ফুট উচ্চতার সেন্টার ব্যাক আন্দ্রে এসকোবার। সে বার ২২ জুন ইউএসএ-র বিরুদ্ধে আত্মঘাতী গোল করে ফেলেন এসকোবার। ইউএসএ সেই ম্যাচ ২-১ গোলে জিতে যায়। আর বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় কলম্বিয়া। তার পর দেশে ফিরে আসে পুরো দল।

এই ভাবেই কইতার হাত ফস্কে বল জড়িয়ে যায় জালে। ছবি: সংগৃহীত।

১ জুলাই রাতে বন্ধুর সঙ্গে নাইট ক্লাবে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে যখন একা পার্কিংয়ে যান, সেখানেই তাঁর উপর ছ’বার গুলি চালানো হয়। প্রতিটি গুলির সঙ্গে আততায়ীরা বলছিল, ‘গোল... গোল।’ পরে জানা গিয়েছিল, আত্মঘাতী গোল করার দায়েই তাঁকে মারা হয়েছিল।

ক্লাব ফুটবলে হারের জন্য ২০১৪ সালে ক্যামেরুনের স্ট্রাইকার অ্যালবার্ট ইবোসেকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলেছিল তাঁর ক্লাবেরই সমর্থকরা। তার আগেই কিন্তু পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন ইবোসে। তার পরও দলের হারের খেসারত দিতে হয়েছিল তাঁকে প্রাণ দিয়ে।

আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ঘিরে এমন অনেক ঘটনাই রয়েছে। রয়েছে মাঠে খুনোখুনির মতো ঘটনাও।

আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ঘিরে এমন অনেক ঘটনাই রয়েছে। রয়েছে মাঠে খুনোখুনির মতো ঘটনাও।

১৯১৩ সালে ব্রাজিলে দুই ক্লাবের এক প্রদর্শনী ম্যাচে লাল কার্ড দেখা এক ক্ষিপ্ত ফুটবলারকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মারে রেফারি। তার পর সমর্থকরা মাঠে নেমে এসে রেফারিকে খুন করে ফেলে গলা কেটে।

আর্জেন্তিনার করদোবায় লাল কার্ড দেখানোয় ফুটবলারের হাতে খুন হতে হয়েছে রেফারিকে। ফুটবলের এই বিপজ্জনক অতি আবেগকেই এখন ভয় পাচ্ছে মালি দল।

(এই খবরটি প্রথমে এমন ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল, যাতে মনে হয়েছে কলম্বিয়া আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ। আদতে কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ। এ জন্য আমরা দুঃখিত।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE