ভারতের খেলাধুলোর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরলতম।
বারো ঘণ্টা পরই যাঁর অলিম্পিক্স ইভেন্ট। ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে তাঁর নাম অলিম্পিক্সের সরকারি ওয়েবসাইটে দেখাও যাচ্ছিল। সেই নরসিংহ যাদবকেই কি না নির্বাসনের শাস্তি মাথায় নিয়ে ছিটকে যেতে হল। সরে যেতে হল কলঙ্ক নিয়ে।
প্রায় চার ঘণ্টা শুনানি চলার পর শুক্রবার ভারতীয় সময় ভোররাতে কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন চার বছর নির্বাসিত করল ভারতীয় কুস্তিগিরকে। বিশ্ব ডোপ বিরোধী সংস্থা ওয়াডার আবেদনের ভিত্তিতে খেলাধুলোর সর্বোচ্চ আদালতের শাস্তি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় কুস্তিগিরের অলিম্পিক্সের স্বপ্ন তো শেষ হলই, বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ল তাঁর কেরিয়ারও।
সাক্ষী-সিন্ধুরা রিওয় দেশের মান রাখছেন যখন, অলিম্পিক্সে নরসিংহ কেলেঙ্কারিতে দেশের মুখ এ ভাবে পুড়বে ভাবা যায়নি। বৃহস্পতিবার ব্রাজিলীয় সময় দুপুর একটা থেকে শুনানি শুরু হয়। পাঁচটা পর্যন্ত চলে। দিল্লি থেকে নরসিংহের আইনজীবী ছাড়াও স্থানীয় আর এক জন আইনজীবী ভারতীয় কুস্তিগিরের হয়ে সওয়াল করেন। ভারতীয় ডোপ বিরোধী সংস্থা নাডা চক্রান্তের তত্ত্ব মেনে এর আগে ডোপ কেলেঙ্কারিতে নরসিংহকে ছাড় দিলেও কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন তা খারিজ করে দেয়।
এ রকমটা যে হবে, সেটা বোধহয় ভাবতেই পারেননি নরসিংহ। শুনানির সময় তাই নিজে হাজির ছিলেন না। প্র্যাকটিস করছিলেন। শাস্তি ঘোষণার পর বিধ্বস্ত নরসিংহ বলেন, ‘‘এর চেয়ে যন্ত্রণার আর কিছু হতে পারে না। দু’বার একই যন্ত্রণা ভোগ করছি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে যতদূর যাওয়ার, যাব। যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের মুখোশ খুলে দেব।’’
কিন্তু বৃহস্পতিবার কেন কোর্ট অব আর্বিট্রেশনে প্রমাণ করা গেল না চক্রান্তের তত্ত্ব? ভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রেসিডেন্ট ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ বললেন, ‘‘আমি যতটুকু বুঝেছি, ক্যাস প্যানেল জানতে চেয়েছিল, যদি চক্রান্ত হয়েই থাকে তা হলে ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় দোষীর কোনও শাস্তি কেন হল না। হয়তো দোষী এখন জেলে থাকলে ক্যাসের রায় আমাদের পক্ষে যেত।’’
ভারতে অভিযুক্তদের নিয়ে তদন্ত কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে, তা জানানোর পরও কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন প্যানেল টিম নরসিংহের যুক্তি মানতে চায়নি। কুস্তি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমরা প্যানেলকে এটাও জানিয়েছিলাম, ভারতে একটা আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। ঘটনাটা নিয়ে তদন্তও চলছে। এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। কিন্তু প্যানেল বলল এত দিনে সব শেষ হয়ে যাওয়া উচিত।’’ হতাশ কুস্তি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সিবিআই তদন্তের দাবিও তুললেন, ‘‘চক্রান্তের জন্য অলিম্পিক্সে কোয়ালিফাই করেও নরসিংহকে এ ভাবে শাস্তি মাথায় নিয়ে চলে যেতে হচ্ছে। আমি নিশ্চিত নরসিংহের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। গোটা ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করছি।’’
ভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থার সচিব রাজীব মেটাও একই দাবি তুলেছেন। নরসিংহের শুনানিতে হাজির ছিলেন তিনিও। তিনি বললেন, ‘‘শুধু কোর্ট অফ আর্বিট্রেশনে নয়, নরসিংহ হারল ওর সতীর্থদের কাছেই। যারা চায়নি ও অলিম্পিক্সে লড়াই করুক।’’ আইওএ সচিব এখানেই থেমে থাকেননি। চার ঘণ্টার শুনানির যন্ত্রণাদায়ক শেষটা তাঁকেও যে কতটা হতাশ করেছে সেটা তাঁর কথাতেই পরিষ্কার। সঙ্গে কিছুটা রাগও যেন ছিটকে বেরিয়ে এল তাঁর কথায়, ‘‘ছবিটা কিন্তু পরিষ্কার। ষড়যন্ত্রে কে পিছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে কাউকে বলে দিতে হবে না। কার উপর সন্দেহ হওয়া উচিত সেটাও একটু পিছনে তাকালেই বোঝা যাবে।’’ আইওএ সচিব কি সুশীল কুমারের দিকে ইঙ্গিত করছেন? অলিম্পিক্সে দু’বারের পদকজয়ী সুশীলই তো নরসিংহের রিও যাওয়া রুখতে আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলেন। আইওএ সচিব অবশ্য ভেঙে কিছু বলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy