Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘নেমার ছাড়াও জিততে পারে, দেখাল ব্রাজিল’

চার বছর আগে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ব্রাজিলিয়ানদের সেই বিশ্বাসেই ধাক্কা দিয়েছিল জার্মানি। তার পরে মঙ্গলবার রাতে ফের মুখোমুখি এই দুই দল।

জবাব: বিশ্বকাপে সেই হারের ক্ষতে প্রলেপ। গোলের পরে গ্যাব্রিয়েল জেসুস-কে (একেবারে বাঁ দিকে) নিয়ে সতীর্থদের উল্লাস। মঙ্গলবার বার্লিনে।  ছবি:রয়টার্স

জবাব: বিশ্বকাপে সেই হারের ক্ষতে প্রলেপ। গোলের পরে গ্যাব্রিয়েল জেসুস-কে (একেবারে বাঁ দিকে) নিয়ে সতীর্থদের উল্লাস। মঙ্গলবার বার্লিনে।  ছবি:রয়টার্স

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

জার্মানি ০ : ব্রাজিল ১

সাতাত্তর সালে কসমস-এর বিরুদ্ধে ম্যাচটার পরে পেলের সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছিল মিনিট কয়েক। সেখানে ফুটবল সম্রাট বলেছিলেন, ফুটবলটা ব্রাজিলে ধর্ম।

পরে কোচিং করাতে এসে ব্যারেটো-র কাছ থেকেও শুনেছি ব্রাজিলে ফুটবল নিয়ে উন্মাদনার আরও কিছু গল্প। যার মোদ্দা কথা হল, ব্রাজিলীয়রা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে এই গ্রহে ফুটবলটা সব চেয়ে ভাল খেলে তারাই।

চার বছর আগে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ব্রাজিলিয়ানদের সেই বিশ্বাসেই ধাক্কা দিয়েছিল জার্মানি। তার পরে মঙ্গলবার রাতে ফের মুখোমুখি এই দুই দল। ব্রাজিল কোচ এই ম্যাচের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলেছেন, গত বিশ্বকাপের ৭-১-এর ভূত তাড়া করে বেড়াচ্ছে ব্রাজিলকে। মঙ্গলবার রাতে কিন্তু গ্যাব্রিয়েল জেসুস-এর গোলে ব্রাজিল ১-০ জেতার সঙ্গে সঙ্গে সেই ‘ভূত’-কে নিজেদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিল।

বিশ্বকাপের আগে এই ম্যাচগুলো খেলেই সব দল নিজেদের তৈরি করে নিচ্ছে। সেখানে তিতে-র দলের দরকার ছিল জার্মানি-কে এক বার হারিয়ে রাশিয়ায় পা রাখা। না হলে উইলিয়ান, মার্সেলো-দের জার্মানিকে দেখলেই অতীত হারের জন্য একটা মানসিক জড়তা আসার সম্ভাবনা থাকত। এই ম্যাচটা জিতে ব্রাজিলের সেই জড়তা কাটিয়ে নিলেন তিতে। কারণ টানা ২২ ম্যাচ পরে সেই ব্রাজিলের কাছে এসেই থমকে গেল জার্মানির অপরাজিত থাকার রেকর্ড।

জার্মানির কোচ জোয়াকিম লো এই ম্যাচে চোটের জন্য পাননি গোলকিপার ম্যানুয়েল নিউয়ার, টোমাস মুলার, এমরে ক্যান, স্যামি খেদিরা, মেসুট ওজিল-দের। কিন্তু তা সত্ত্বেও জার্মানির সামনে ব্রাজিলের যে একটা মানসিক জড়তা কাজ করছে, তা প্রথম পনেরো মিনিটে বেশ ভাল রকম বোঝা যাচ্ছিল। এই সময় বিপক্ষের মাঝমাঠে চার-পাঁচটা পাস এক সঙ্গে খেলে একাধিক বার মিসপাস করতে দেখছিলাম ফিলিপে কুটিনহো, পাওলিনহো-দের। কিন্তু তার পরেই চেনা ছন্দটা ঠিক পেয়ে গেল ব্রাজিল। আর ভুল করতে শুরু করল জার্মানির মাঝমাঠ ও রক্ষণ।

আরও পড়ুন: ‘মেসি না খেললে আর্জেন্তিনা খুব সাধারণ মানের’

গ্যাব্রিয়েল জেসুস-এর গোলটা ঠিক সে ভাবেই। উইলিয়ান যখন বিপক্ষের লেফট ব্যাকের জায়গায় জেসুসের বাড়ানো বলটা ধরল তখন জার্মান লেফট ব্যাক প্ল্যাটেনহার্ডট জায়গায় ছিল না। উইলিয়ান তার পরে ওভারল্যাপে আসা দানি আলভেজ-এর সঙ্গে ওয়াল খেলল। অথচ আলভেজ-এর কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও ওকে ট্যাকল করল না দুই জার্মান মিডিও টনি ক্রুস ও জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার। এর পরেই আলভেজ-এর বাড়ানো বল ধরে হেলায় জার্মান বক্সে বল ভাসিয়ে দিল উইলিয়ান। সেই বলে হেড করে জেসুস যখন গোল করছে তখন দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দেখল সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জেরোম বোয়াতেং এবং রাইট ব্যাক জোশুয়া কিমিখ। আর তার পর থেকেই দেখলাম সেই চেনা সাম্বা ঝড়। যা থামাতে পারছিল না চেলসির সেন্টার ব্যাক আন্তোনিও রুদিগার-এর নেতৃত্বে থাকা জার্মান রক্ষণ।

ব্রাজিল ফুটবলে তিতে একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় কোচ। সেটা কেন তা দ্বিতীয়ার্ধে আরও ভাল বুঝতে পারলাম। এই সময়ে জার্মানি যাতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে না পারে তার জন্য নিজেদের হাফ লাইনে দশ জনকে নামিয়ে আনছিলেন তিতে। কাসিমিরো বা পাওলিনহো বল কাড়লেই দ্রুত সেই বল ধরে জার্মান রক্ষণে পৌঁছে ত্রাসের সঞ্চার করছিল উইলিয়ান, ফিলিপে কুটিনহো-রা। এই দু’জনকেই অনবদ্য ফুটবল খেলতে দেখলাম এই ম্যাচে। বিশেষ করে উইলিয়ান। মোদ্দা কথা, ব্রাজিলের নেমার নির্ভরতা কাটিয়ে দিয়েছেন এই বর্ষীয়ান কোচ। একই সঙ্গে এই ম্যাচে ভাল খেলল থিয়াগো সিলভা-মিরান্দার রক্ষণও। ফলে ব্রাজিল গোলকিপার অ্যালিসন-কে খুব একটা বিব্রত হতে হয়নি গোটা ম্যাচে।

ম্যাচের শেষ দিকে, গোল করার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল জার্মানি। কিন্তু বিপক্ষের বক্সে গিয়ে ‘ফিনিশিং’-এর অভাব প্রকট হতে দেখলাম লেরয় সানে-দের ক্ষেত্রে। ফলে গোটা চারেক সুযোগ তৈরি করেও সমতা ফেরাতে পারেনি জার্মানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Brazil Football Team football Germany Tite CBF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE