Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্নায়ুর চাপ আর জীবকে হারিয়ে ট্রফি গগনজিতের

রবিবার রাতটা অদ্ভুত কেটেছে তাঁর। উত্তেজনায় ঘুম চোখ-ছুট। চোখ জোর করে বন্ধ করলেও সামনে ভাসছিল শুধু গল্ফ কোর্স আর শেষ রাউন্ডের ঝুলে থাকা তিনটি হোল। এ দিন সকালে যে তিন হোল খেলা শেষ করে ট্রফি মুঠোয় পুরে তবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছেন গগনজিৎ ভুল্লাড়!

ট্রফি হাতে চ্যাম্পিয়ন। ছবি: এএফপি

ট্রফি হাতে চ্যাম্পিয়ন। ছবি: এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

রবিবার রাতটা অদ্ভুত কেটেছে তাঁর। উত্তেজনায় ঘুম চোখ-ছুট। চোখ জোর করে বন্ধ করলেও সামনে ভাসছিল শুধু গল্ফ কোর্স আর শেষ রাউন্ডের ঝুলে থাকা তিনটি হোল। এ দিন সকালে যে তিন হোল খেলা শেষ করে ট্রফি মুঠোয় পুরে তবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছেন গগনজিৎ ভুল্লাড়!

তিন লক্ষ মার্কিন ডলার পুরস্কার মূল্যের ব্যাঙ্ক বিআরআই-জেসিবি ইন্দোনেশিয়া ওপেন দ্বিতীয় বার জিতে প্রত্যাবর্তনের ঘোষণাটাও করে দিলেন কপূরথালার ছেলে। যিনি নিজের সাত নম্বর এশীয় ট্যুর খেতাব জিতে বলেছেন, ‘‘ট্রফিটা আমার লম্বা লড়াই আর পরিশ্রমের পুরস্কার।’’ মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে বিশ্বের পঁচাশি নম্বরে পৌঁছে যাওয়া গগনজিতের ধূমকেতু উত্থান থমকে দিয়েছিল কব্জির মারাত্মক চোট। ২০১৪-২০১৫ কাটে খেতাব বিহীন। কিন্তু এ বছর অক্টোবরে কোরিয়ায় জেতার পর এ দিন জাকার্তার জয়ে গগনজিতের গ্রাফ আবার উর্ধ্বমূখী। যিনি বছরটা বিশ্বের ৬১৪ নম্বরে শুরু করে উঠে এসেছেন ১৭৫-এ। এশীয় ট্যুরে আছেন ৯-এ।

জিততে ঠিক কতটা মরিয়া ছিলেন, গগনজিতের কথাতেই স্পষ্ট। রবিবার খারাপ আবহাওয়ায় শেষ রাউন্ডের খেলা যখন বন্ধ হয়, পনেরো নম্বর হোলে ছিলেন ২০১৩-র চ্যাম্পিয়ন। সঙ্গী তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত এক নম্বরে থাকা জীব মিলখা সিংহ। আবহাওয়া আর জীবের তাড়া— জোড়া দুশ্চিন্তা নিয়ে রবিবার হোটেলে ফেরার পর স্বস্তিতে ছিল না গগনজিৎ। বলেন, ‘‘শেষ রাউন্ড রবিবার পেরিয়ে সোমবারে উপচে গেলে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয় না। তায় আপনি যেখানে দু’শটে এগিয়ে, তখন তো চাপটা আরও টের পাওয়া যায়।’’ যোগ করেন, ‘‘রবিবার সন্ধে সাতটাতেই ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু রাত দু’টোর মধ্যে দেখলাম আমি পুরোপুরি জেগে আর উত্তেজিত। অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণ চরমে। কোনও কিছুতে ফোকাস করতে পারছিলাম না। চোখের সামনে খালি শেষ তিনটে হোল দেখছিলাম।’’

সেই উত্তেজনা নিয়ে নেমে কোনও শট না ফস্কে ট্রফি নিশ্চিত করেন ষোলো-আন্ডার ২৭২ মোট স্কোর করে। তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত লিডারদের পিছনে ছিলেন। কিন্তু চতুর্থ রাউন্ডে জ্বলে ওঠেন। গগনজিতের কাছে হেরে যুগ্ম দ্বিতীয় জীবও অনুজের পাটিংয়ে মুগ্ধ। বলেছেন, ‘‘শেষ রাউন্ডে আমি ভাল খেলেছি। তবে গগন শুরুটা অসাধারণ করেছিল।’’ গগনজিৎ জানিয়েছেন, আক্রমণে যাবেন ঠিক করেই নেমেছিলেন। ‘‘জানতাম বার্ডির সুযোগ তৈরি করতেই হবে। পাটিং ভাল হওয়ায় বাকিটা পরিকল্পনা মাফিক হল।’’ জাকার্তার কোর্সে আগে জেতার অভিজ্ঞতাটাও সাহায্য করে। বৃষ্টির কারণে মাঝে মাঝে খেলা বন্ধ হওয়ায় টুর্নামেন্টটা গল্ফারদের ধৈর্যের পরীক্ষায় দাঁড়ায়। গগনজি়ৎ যা নিয়ে বলেছেন, ‘‘কঠিন পরিস্থিতিতে এখানে আগে জেতার অভিজ্ঞতাটা আমার দারুণ কাজে দিল।’’

জীব আবার ট্রফি না পেলেও দ্বিতীয় নিয়ে সন্তুষ্ট। চোট সারিয়ে ফেরার পর ফর্মে ফেরার লড়াইয়ে থাকা তারকা বলেছেন, ‘‘২০১২-র পর এটাই আমার সেরা পারফরম্যান্স। চার বছর পর আবার খেতাবের লড়াইয়ে নেমে আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়ল। চুয়াল্লিশ বছর বয়সে গগনদের মতো আঠাশের তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারাও তৃপ্তির।’’

ভারতীয় গল্ফের জন্যও সময়টা তৃপ্তির। পৌষ পড়ার আগেই এই মুহূর্তে পৌষের ছোঁয়া ভারতীয় গল্ফে। অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত চারটে আন্তর্জাতিক ট্রফিই তার প্রমাণ। যার দু’টো গত সপ্তাহে শিবশঙ্কর প্রসাদ চৌরাসিয়া আর অদিতি অশোকের। বাকি দু’টো গগনজিতের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indonesia Open Gaganjeet Bhullar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE