Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নাইটদের গুরুগম্ভীর দ্বৈরথ

কোচ রিকি পন্টিং এবং অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর। আজ, সোমবার নাইটদের প্রতিপক্ষ দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের প্রধান দুই মস্তিষ্কেরই যে এক সময় আইপিএল ঠিকানা ছিল ইডেন!

প্রত্যাবর্তন: ইডেনে ফিরলেন গৌতম গম্ভীর। তবে দিল্লির অধিনায়ক হয়ে। সঙ্গী কোচ পন্টিং। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

প্রত্যাবর্তন: ইডেনে ফিরলেন গৌতম গম্ভীর। তবে দিল্লির অধিনায়ক হয়ে। সঙ্গী কোচ পন্টিং। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

মাঝে শুধু চব্বিশ ঘণ্টা। ইডেনে ফের প্রাক্তন নাইট বনাম বর্তমান নাইট নতুন লড়াইয়ের আবহ তৈরি।

কোচ রিকি পন্টিং এবং অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর। আজ, সোমবার নাইটদের প্রতিপক্ষ দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের প্রধান দুই মস্তিষ্কেরই যে এক সময় আইপিএল ঠিকানা ছিল ইডেন!

আইপিএলে যাত্রা শুরুর সময় পন্টিং ছিলেন শাহরুখ খানের দলের অন্যতম প্রধান মুখ। যদিও ক্রোড়পতি লিগে ক্রিকেটার হিসাবে তিনি খুব একটা সফল হতে পারেননি। আর গম্ভীরকে আনা হয়েছিল নতুন কেকেআর গড়ার লক্ষ্যে। যখন প্রথম তিন বছরে ট্রফির আশা পূরণ হল না শাহরুখের। দিল্লির বাঁ হাতি ওপেনার সেই আস্থার পূর্ণ মর্যাদা দেন দু’বার আইপিএল জিতিয়ে।

একটা সময়ে মনে হত, শাহরুখ খান এবং গম্ভীর যেন ‘রব নে বনা দি জোড়ি’। অবিচ্ছেদ্যই থেকে যাবেন। মনে করা হত কেকেআর থেকেই অবসর নেবেন গম্ভীর। ইডেনে তাঁকে কাঁধে করে ঘোরাবে সতীর্থরা আর নাইটদের বিখ্যাত গ্যালারি থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেবেন দলের মালিক। কলকাতায় ফ্ল্যাট কেনার কথা ভেবেছিলেন গম্ভীর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন স্কুল খোলার পরিকল্পনা নিয়ে। কে জানত, টি-টোয়েন্টি লিগের নির্মম পেশাদারিত্ব এক দিন গম্ভীরকেও প্রাক্তন বানিয়ে দেবে! ঠিক যেমন উপেক্ষিত হয়েছিলেন সৌরভ, তাঁর উত্তরসূরি গম্ভীরকেও ছেড়ে দেওয়া হল এ বার। নিলামের কেকেআর, নির্মম কেকেআর!

মুখে দু’পক্ষই দাবি করে, বন্ধুত্বপূর্ণ বিচ্ছেদই নাকি ঘটেছে। ওয়াকিবহাল মহল বিশ্বাস করে না। তাঁদের বক্তব্য, গম্ভীর মন থেকে কেকেআরের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তিনি আশা করেছিলেন, আরও দু’বছর তাঁকে রাখা হবে। আবার কেকেআর অন্দরমহলের ব্যাখ্যা, ছত্রিশের গম্ভীরের প্রতি শ্রদ্ধা অটূট থাকলেও এগিয়ে যাওয়া জরুরি। খুঁজে নেওয়া দরকার ছিল নতুন কাউকে। তাই পরিবর্ত হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে ৩২ বছর বয়সি দীনেশ কার্তিককে। যিনি এখনও ভারতীয় দলে রয়েছেন। শেষ বলে ছক্কা মেরে জেতাচ্ছেনও। তবে ঘরের মাঠে বিরাট কোহালিদের হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু করলেও শেষ দু’টি ম্যাচে হেরে চাপে আছেন কার্তিক। সোমবার দিল্লির কাছে হারা মানে গন্ধমাদন চাপবে মাথায়।

ইডেনের পেস-সহায়ক পিচে আইপিএলেও পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। সানরাইজার্সের দীর্ঘদেহী পেসার বিলি স্ট্যানলেক এবং সিদ্ধার্থ কল সমস্যায় ফেলেছেন নাইট ব্যাটসম্যানদের। ট্রেন্ট বোল্ট, মহম্মদ শামি এবং ক্রিস মরিসকে নিয়ে তৈরি দিল্লির পেস আক্রমণও বেশ ভাল। শুরুতে সুনীল নারাইনকে পাঠিয়ে ঝড় তোলার নকশা ইডেনের বাড়তি গতি ও বাউন্সের পিচে কাজে আসা কঠিন। কারণ, নারাইন গতির বিরুদ্ধে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নন।

রবিবার সন্ধেয় ইডেনে গিয়ে কার্তিকের যে প্রতিপক্ষকে দেখা গেল নেটে ব্যাট করছেন, তাঁর চোয়ালটা যেন একটু বেশিই শক্ত। ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকলেও ইডেনে এসে নেটে পড়ে থাকলেন। নোভাক জোকোভিচের খাদ্যাভ্যাসকে অনুসরণ করে চিনি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন দিল্লি অধিনায়ক। শারীরিক ভাবে সক্ষম থাকার মরিয়া চেষ্টা। ট্রেনিংয়ের সময়ও অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

নেটে এক বার পেসারকে অফস্টাম্পের উপর থেকে কাট মারলেন গম্ভীর। তাঁর খুব প্রিয় শট। হাততালি দিয়ে উঠলেন একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পন্টিং। এক জন এখন গুরু। অন্য জন নেটে গম্ভীর। ওই ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে, কেকেআরের সত্যিই আজ ‘গুরুগম্ভীর’ ম্যাচ! আইপিএলের প্রথম বছরে নেটে এক ঝলক দেখেই পন্টিং আবিষ্কার করেছিলেন অশোক ডিন্ডাকে। বাংলার পেসার তখন কেকেআরের দলে ছিলেন না। নেট বোলার হিসাবে ডাক পেয়েছিলেন। বাউন্সার খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছিলেন পন্টিং। দ্রুত কর্তাদের ডেকে বলেন, এই ছেলেটাকে এখনই সই করাও।

প্রতিভা অন্বেষণের সেই চোখ এ বার নাইটদের প্রতিপক্ষ শিবিরে। দু’টো ছেলের কথা অনেকের মুখে মুখে ঘুরছে। সতেরো বছরের লেগস্পিনার সন্দীপ লামিছানে। নেপাল থেকে আইপিএল খেলা প্রথম ক্রিকেটার। যদিও তাঁকে আবিষ্কারের পিছনে রয়েছেন অন্য এক অস্ট্রেলীয় —মাইকেল ক্লার্ক। হংকংয়ে সুপার সিক্সেস (ছ’জন করে খেলেন প্রত্যেক দলে) খেলতে গিয়ে লামিছানেকে দেখেই ভাল লেগে গিয়েছিল ক্লার্কের। তুলে নিয়ে গিয়ে সিডনিতে গ্রেড ক্রিকেট নামিয়ে দেন। সেখানে খেলে নজরে পড়েই ক্লার্কের বিখ্যাত উত্তরসূরির হাতে এসে পড়েছেন।

আর এক জন রাহুল তেওয়াটিয়া। ইনিও লেগস্পিনার, ডানহাতে ব্যাটও করতে পারেন। ১০ লাখ টাকার প্রাথমিক মূল্য থেকে নিলামে ৩ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছেন। ইডেনে সোমবার লামিছানে খেলবেন কি না ঠিক নেই, তবে তেওয়াটিয়া খেলতে পারেন। আর বিখ্যাত সেই ডাকাবুকো অস্ট্রেলীয় মনোভাবের ইঞ্জেকশন ঋষভ পন্থ, শ্রেয়স আইয়ারদের নিয়মিত দিয়ে চলেছেন পন্টিং!

কেকেআর— তোমার প্রাক্তনদের থেকে সাবধান থেকো আজও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE