তারকা: অসমে পৌঁছেই ভক্তদের প্রবল উচ্ছ্বাসে ভাসলেন হিমা দাস। ছবি: পিটিআই।
দৌড়ে যেমন তুখোড়, সেই মেয়ে যে বক্তৃতাতেও এমন তুখোড় হবে তা সামনে বসা মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়করাও ভাবতে পারেননি। সাধারণত সংবর্ধনা আর পুরস্কারের চেক পেয়ে ধন্যবাদসূচক দু’কথা বলেই নেমে যান ক্রীড়াবিদরা। কিন্তু তিনি সোজা কথাটা সোজা ভাবে বলেন। তিনি হিমা দাস।
শুক্রবার ঘরের মাটিতে ফিরে রাজ্য সরকারের সংবর্ধনা সভায় এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকার চেক হাতে নিয়ে সেই মেজাজেই হিমা বলে দিলেন, “খেলোয়াড়রা আসলে মনপ্রাণ দিয়ে ভাল ফল করতে চায়। কারণ, তারা পয়সার জন্যই খেলে। জানে পদক জিতলেই টাকা পাবে। আজ যেমন আমি পাচ্ছি। আমি নিশ্চিত আমায় এত টাকা পেতে দেখে অসমের অন্য খেলোয়াড়রাও আজ ভাবছে, হিমা যদি দৌড়ে এত টাকা পেতে পারে, আমিও ভাল খেললে তেমনই পাব।” কোনও রাখঢাক নয় বরং হাসতে-হাসতেই বক্তৃতার পরতে পরতে হিমা কখনও রাজ্য সরকারকে কখনও জনগণের উদ্দেশে জরুরি বার্তা দিয়ে গেলেন।
৫২ বছর পরে অসমে পা পড়ল এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ীর। ১৯৬৬ সালে ভোগেশ্বর বরুয়ার পরে হিমা। একটি সোনা ও ২টো রুপোর পদক! বেলা ১টায় বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, ডিজিপি কুলধর শইকিয়া। সেখান থেকে বিরাট কনভয়ে, হুড খোলা গাড়িতে চেপে হিমার সফর শুরু। প্রথমে জালুকবাড়িতে ভূপেন হাজরিকার সমাধিক্ষেত্রে হিমা শ্রদ্ধা জানান। যে বিছানায় হিমা শোন, সেখানেই এক সময় বিশ্রাম করেছিলেন সুধাকন্ঠ। এরপর ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামে আসেন তিনি। দৌড়ের ট্র্যাকে প্রণাম করে হিমা বলেন, “এই ট্র্যাকেই আমার দৌড় শুরু। জুন মাসে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের সেরা সময় করেছিলাম এখানে। জাকার্তায় নির্বাচিত হয়েছিলাম। রাজ্যবাসীর স্বপ্ন সফল করতে পেরে ভাল লাগছে।”
সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল হিমার হাতে বিশ্ব জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে সোনা, এশিয়ান গেমসে ১টি সোনা ও রুপোর দুটি পদকের জন্য মোট এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। অসমের ক্রীড়া দূত হিসেবে দু’বছরের জন্য হিমাকে ৩০ লক্ষ টাকা হওয়ার প্রস্তাবপত্রও দেওয়া হয়। বক্তৃতা দিতে উঠে হিমা বলে, “বাবা স্পষ্ট জানিয়েছেন, অহঙ্কার পতনের মূল। এই যে চুলে রং করেছি, ছেঁড়া জিনস পরেছি দেখে বাবা খুব রেগে গিয়েছে। আমি জানি একটা চোট লাগলে কালকেই আমার কেরিয়ার শেষ। তখন অহঙ্কার নয়, আমার লড়াইটাই অন্যদের পথ দেখাবে।” প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে হিমা বলেন, “বিভিন্ন রাজ্যের পদকজয়ীরা দল বেঁধে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। আমি গেলাম একাই। সঙ্কোচ হচ্ছিল। রাজ্যের ৩০টি জনগোষ্ঠী যদি অন্তত একজন করে ক্রীড়া প্রতিভাকে তুলে আনতে পারে, ১২৬ জন বিধায়ক যদি নিজেদের কেন্দ্র থেকে একজন করেও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় দিতে পারেন তবে তার মধ্য থেকে অন্তত ১০ জন পদকজয়ী আসবেই। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে পরের বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই।”
ফুটবলার হিমাকে দৌড়ের পথ দেখানো শিক্ষক শামসুল হক এবং দুই প্রশিক্ষক নিপন দাস, নবজিৎ মালাকারকে ধন্যবাদ দিয়ে হিমা বলেন, “আমায় যাঁরা তুলে এনেছেন তাঁরাও একই সম্মানের দাবিদার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy