Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
টিম হোটেলে রায়নাকে বিয়ের প্রস্তাব মরাঠি তরুণীর

ভারত-বাংলাদেশের আগে কাপ আকাশে বিষণ্ণ সমঝোতার আবাহন

আসল ম্যাচটা হচ্ছে মেলবোর্নের উত্তর-পূর্বে সাড়ে পাঁচশো মাইল দূরে! মোটেও এমসিজিতে নয়! বরং তার এক দিন আগে। এম-৩১ মোটরওয়ে ধরলে আট ঘণ্টার কিছু বেশি। প্লেনে ঘণ্টাখানেক। বুধবার দিন ওই দূরত্বটা অতিক্রম করতে চাইলেই সবচেয়ে জমজমাট কোয়ার্টার ফাইনালটা দেখতে পাওয়া যাবে সিডনি ক্রিকেট মাঠে। প্রবাদ আছে টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিন নাকি ভিক্টর ট্রাম্পারের আত্মা এখানে খেলা দেখতে আসে। তা সে দিন এমন ম্যাচ যে, ট্রাম্পারের আত্মা ওয়ান ডে হলেও না দেখতে চলে আসে!

জিম্বাবোয়ে ম্যাচে গ্যালারিতে সেই রায়না-ভক্ত।

জিম্বাবোয়ে ম্যাচে গ্যালারিতে সেই রায়না-ভক্ত।

গৌতম ভট্টাচার্য
মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

আসল ম্যাচটা হচ্ছে মেলবোর্নের উত্তর-পূর্বে সাড়ে পাঁচশো মাইল দূরে! মোটেও এমসিজিতে নয়! বরং তার এক দিন আগে।

এম-৩১ মোটরওয়ে ধরলে আট ঘণ্টার কিছু বেশি। প্লেনে ঘণ্টাখানেক। বুধবার দিন ওই দূরত্বটা অতিক্রম করতে চাইলেই সবচেয়ে জমজমাট কোয়ার্টার ফাইনালটা দেখতে পাওয়া যাবে সিডনি ক্রিকেট মাঠে। প্রবাদ আছে টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিন নাকি ভিক্টর ট্রাম্পারের আত্মা এখানে খেলা দেখতে আসে। তা সে দিন এমন ম্যাচ যে, ট্রাম্পারের আত্মা ওয়ান ডে হলেও না দেখতে চলে আসে!

শুধু তো দুটো দেশের উত্তাল সংঘর্ষ নয়। দুই প্রথিতযশা ব্যাটেরও ঠোকাঠুকি!

তিনি কুমার সঙ্গকারা এই তথাকথিত বৃদ্ধ বয়সে ইতিমধ্যে ৪৯৬ রান করে বসে রয়েছেন। তেন্ডুলকরও তাঁর বিদায়ী বিশ্বকাপকে এত রঙিন করে যাননি যা সঙ্গা করে দিয়েছেন গ্রুপ লিগে। কিছু দিন ধরে বলা হচ্ছিল কিপিং না করলে তিনি আরও বেশি রান করেন। তা এই বয়সে কিপিং করেও এতগুলো বিশ্বকাপ রান করেছেন। টেস্ট গড়ে সচিন-পন্টিংয়ের অনেক আগে। ওয়ান ডে-তেও যে এমন রাজকীয় বিদায়ী অভ্যর্থনা তাঁর ব্যাটে বরাদ্দ রেখেছেন কে জানত! এ দিন দেখছিলাম এ বারের বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান বাছতে বসে চারজন সঙ্গাকে এক নম্বরে রেখেছেন। এঁরা যথাক্রমে লারা, ইয়ান চ্যাপেল, লক্ষ্মণ এবং গাওস্কর। সিডনি ক্রিকেট মাঠ অনেক যুগন্ধর ক্রিকেটারের শেষ পদচারণার সাক্ষী। লয়েড থেকে স্টিভ। তাঁর নামটাও কি সেই বর্ণময় তালিকায় জুড়বে?

না কি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের উল্টে ফের বলা হবে চোকার্স? আর সেই সব বলাবলির ঊর্ধ্বে আরও একটা যুদ্ধের নিষ্পত্তি করার আছে। ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে আইসিসি বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান বাছার। তিনি এবি ডে’ভিলিয়ার্স বছর শুরুর সময় সেই যুদ্ধে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৭৬ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। নিরাপদ দূরত্ব। কিন্তু বিশ্বকাপে ঠিক তার আদ্ধেক কমিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ। এখন তফাত মাত্র ৩৮ পয়েন্টের। সিডনিতে ডে’ভিলিয়ার্স একটা বড় রান করে দিলে তফাতটা আবার বেড়ে যাবে। কিন্তু তা না হয়ে যদি বিপক্ষ মানে সঙ্গকারা বড় স্কোর করে দেন, শুধু ম্যাচ নয়, আরও একটা মূল্য গুনতে হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ককে। বুধবারের পর থেকে বিশ্বকাপকে একটা বিষণ্ণ সমঝোতা করেই নিতে হচ্ছে— হয় তার সঙ্গা থাকবেন, নয়তো ডে’ভিলিয়ার্স! হার-জিতের বাইরেও কতগুলো দেওয়াললিপি সিডনি ম্যাচ ইতিমধ্যে তৈরি করে দিয়েছে। না চাইলেও সে দিকে চোখ যেতে বাধ্য।

বৃহস্পতিবারের এমসিজিতে এমন কোনও চোখ টানাটানির ব্যাপার নেই। নিছকই উপমহাদেশীয় দুই দলের কোয়ার্টার ফাইনাল। সিডনিতে ক্রিকেটীয় স্কিলের যে অস্ত্র সমাবেশ ঘটবে, তার দেখা শেন ওয়ার্নের শহরে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। মেলবোর্ন হল অস্ট্রেলিয়ার ফ্যাশনের রাজধানী। এমসিজি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই তো কলিন স্ট্রিটে সার দিয়ে বিশ্বখ্যাত সব ব্র্যান্ডের দোকান। আরমানি থেকে বস্। লুই ভিটো থেকে গুচি। কার্টিয়ের থেকে টিফানি অ্যান্ড কোম্পানি— কারা নেই সেখানে। রাস্তার নাম হেডমাস্টার মার্কা কলিন স্ট্রিট না রেখে ফ্যাশন স্ট্রিট করলে মনে হয় না কারও আপত্তি থাকত বলে।

কিন্তু বিষ্যুদবারের সম্ভাব্য ক্রিকেটে ফ্যাশন এত কাছে থেকেও যেন নেই। আছে যেটা ম্যাচ ঘিরে বিবিধ হাইপ। যা ক্রমশই ক্রিকেটের বাইরে নানান দিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রবণতাটা বেশি হচ্ছে বাংলাদেশের তরফে। নানান অপ্রীতিকর ইস্যুতে বিশ্ব মিডিয়ার কাছে ঢাকা গত কয়েক মাসে চিত্রিত হওয়ার পর বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল যাত্রা যেন অনেক কিছু ধুইয়ে দিয়েছে। দেশের মানুষ চাইছে সেই স্বপ্নের নৌকোয় আরও সফর করি। তার আর দাঁড় বাইবার ক্ষমতা আছে কি না আমার জানার দরকার কী। আমার স্বপ্ন— আমি এই ভাবেই দেখতে চাই।

রামিজ রাজার পর এ দিন শুনলাম বাংলাদেশি ক্রিকেট কাঠগড়ায় নতুন অপরাধী ভারতীয়, নাম নভজ্যোৎ সিংহ সিধু। শুনলাম ফেসবুকে নাকি ‘হেট সিধু কমিউনিটি’ তৈরি করে ফেলেছে বাংলাদেশি তরুণদের একাংশ। গোটা দেশে তীব্র তোলপাড় ম্যাচ ঘিরে। শুধু তো শেষ আটে ওঠা নয়। নিউজিল্যান্ডকে সেডন পার্কে সে দিন সাকিবরা যে ভাবে সামলেছেন সেটা দেখেও আশার ফুলকি চার দিকে ঘুরছে। দু’হাজার সাতের টিমটাও ওয়েস্ট ইন্ডিজে দারুণ খেলেছিল। কিন্তু এ বারে যে নব্য জাতীয়তাবাদের ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে স্ফূরণ হয়েছে সে বারে তা জন্ম নেয়নি!

এক এক সময় মনে হচ্ছে সমর্থক সংখ্যায় এমসিজিতে যদি বা বাংলাদেশিরা সংখ্যালঘিষ্ঠ হন, ম্যাচ ঘিরে উদ্দীপনায় তাঁরা প্রথম বল হওয়ার আগেই এই খেলাকে ক্রিকেটের অন্য প্রহরে নিয়ে গিয়েছেন। যেখানে ক্রিকেটের সঙ্গে দেশজ রাজনীতি অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে। আর এই রকম অ্যাড্রিনালিন নিঃসরণকারী পরিবেশ যেখানে বাংলাদেশ থেকে উত্থিত সেখানে ভারত যথেষ্টই চুপচাপ, নিজের মতো নিজে।

বুধবারের পরে কে থাকবেন?

ধোনিরা শহরে ঢুকলেন এ দিন সন্ধ্যায়। ধোনির টিমের গ্ল্যামার বয় তাঁর ব্যাটসম্যানরা। কোহলি, ধবন, অজিঙ্ক, রায়না। এর মধ্যে রায়না শোনা যাচ্ছে বিশ্বকাপের পর বিদেশে বসবাসকারী এক তরুণীকে বিয়ে করছেন। এ দিকে বিয়ের প্রাক্কালে অকল্যান্ড তাঁর জন্য নতুন সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে। গ্যালারি থেকে প্র্যাকটিস এবং ম্যাচ দু’দিনই তাঁর জন্য পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক মরাঠি তরুণী। নাম বৈষ্ণবী পরাঞ্জপে। সেই পোস্টারে লেখা ছিল ‘রায়না মেক মি ইওর দুলহনিয়া’। মাঠে ফিল্ড এবং পরে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলার সময়ও মেয়েটি বারবার তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিল। এমনই নাছোড়বান্দা এই তরুণী যে, বাবা-মাকে নিয়ে সে সরকারি ভাবে টিম হোটেলে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছিল। বহু বুঝিয়ে রায়না তাঁকে ফেরত পাঠান। এই নিয়ে টিম তাঁর খুব পেছনে লেগেছে। এই টিমে মূকাভিনয়ে যিনি সবচেয়ে দক্ষ এবং অনায়াসে লোককে নকল করতে পারেন সেই অজিঙ্ক রাহানের পারফরম্যান্স লিস্টে এই আইটেমটা ঢুকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারত এখনও কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য তাদের এত দিনকার যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি বাড়ায়নি। বরং কমিয়েছে। মঙ্গলবারের প্র্যাকটিসও রেখেছে ঐচ্ছিক। এক বার প্র্যাকটিসে নামলে অবশ্য তাঁদের হাওয়া টের পেয়ে যাওয়া উচিত! কারণ বাংলাদেশ যেমন কঠোর ভাবে ম্যাচটাকে দেখছে তাতে দশ বছর বাদে তো ভারত-পাক ম্যাচের মতোই ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচও মাঠের বাইরের অন্য তাৎপর্য বহনকারী হিসেবে ব্র্যান্ডেড হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE