পাঁচ উইকেট নিয়ে টেস্ট কেরিয়ারের সেরা বোলিং হার্দিক পাণ্ড্যর। ছবি: গেটি ইমেজেস।
ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট শুরুর আগে তাঁকে বেশ আক্রান্ত মনে হচ্ছিল। কমেন্ট্রি বক্সে অনেকেই তাঁর কানে দুল আর হেয়ারস্টাইল নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না।
টেস্টের দ্বিতীয় দিনে সেই হার্দিক পাণ্ড্যই নায়ক। পাঁচ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করার পরে যিনি সাংবাদিক সম্মেলনে এসেও বাউন্সার দিয়ে গেলেন। বললেন, ‘‘বিশেষজ্ঞরা কে কী বলছেন, তা নিয়ে আমি ভাবি না। কথা বলার জন্য ওঁরা পয়সা পান, তাই যা মনে হয় বলতেই পারেন। আমি একটাই জিনিস দেখি যে, আমার টিম কী বলছে। যদি টিম আমাকে নিয়ে খুশি থাকে, আমি খুশি।’’ তাঁর কথাবার্তা এবং স্টাইলের ধরন দেখে মনে হয় ভারতীয় নয়, ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার সামনে বসে আছেন। বলে চললেন হার্দিক, ‘‘আমার কাছে টিমের বিশ্বাসটাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ। আমি অলরাউন্ডার কি না, সেটা নিয়ে টিম কী ভাবছে, সেটাই জরুরি।’’
বোঝা গেল, মাইকেল হোল্ডিংয়ের মতো প্রাক্তন তারকার সমালোচনায় খুব প্রসন্ন হননি। হোল্ডিং কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন, হার্দিককে অলরাউন্ডার হিসেবে ভাবতে তিনি নারাজ। তিনি না সফল হচ্ছেন ব্যাটে, না পারছেন বল হাতে কিছু করতে। এমনকি, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বার বার প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, কেন হার্দিককে খেলানো হচ্ছে? সব চেয়ে বেশি করে কথা শুনতে হয়েছে অধিনায়ক বিরাট কোহালিকে। শুরু থেকে হার্দিকের দক্ষতায় আস্থা রেখে গিয়েছেন কোহালি। এক বার তাঁকে বেন স্টোকসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন বলে নানা কটাক্ষ শুনতে হয়েছে অধিনায়ককে। কিন্তু কোহালি তাঁর বিশ্বাস ছেড়ে নড়েননি। এ দিন হার্দিক যখন ২৯ বলে উড়িয়ে দিলেন ইংল্যান্ডকে, সব চেয়ে খুশি দেখাচ্ছিল তাঁর অধিনায়ককে।
পাঁচ উইকেটের বলটা হাতে তুলে ড্রেসিংরুমের দিকে দেখালেন হার্দিক। ব্যালকনিতে তখন বসে আছেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। পাশে বোলিং কোচ বি. অরুণ। তাঁদের মাথা থেকেই প্রথম হার্দিককে অলরাউন্ডার হিসেবে তৈরি করার পরিকল্পনা বেরিয়েছিল। অরুণের পরামর্শে হার্দিককে বেঙ্গালুরুর জাতীয় অ্যাকাডেমিতে পাঠানো হয়েছিল। যাতে জিমে উন্নত ট্রেনিং করে তিনি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন। বিশেষ ভাবে তাঁকে নজর দিতে বলা হয় বলের জোর বাড়ানোর উপরে।
আরও পড়ুন: নিন্দুকদের কথায় কান দিতে চান না দিনের নায়ক হার্দিক
শাস্ত্রী-অরুণের তৈরি করা নকশাতেই জাতীয় অ্যাকাডেমিতে পড়ে থেকে বলের জোর বাড়ান হার্দিক। এখন তিনি যে কোনও জোরে বোলারের মতো ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিবেগেও বল করতে পারেন। আউটসুইং তাঁর প্রধান অস্ত্র হলেও ভিতরে আসা বল করতেও শিখেছেন। এ দিন তাঁর পরিকল্পনা কী ছিল? প্রশ্ন করায় হার্দিক বললেন, ‘‘আউটসুইংটা ভাল হচ্ছিল দেখে ওটাই করে যাচ্ছিলাম বেশি করে। সুইংটা ভাল হচ্ছে দেখে আমি অফস্টাম্প চ্যানেলে বলটা রাখার উপরে নজর দিচ্ছিলাম।’’
ট্রেন্ট ব্রিজের পাঁচ উইকেট তাঁকে দারুণ আনন্দ দিচ্ছে দু’টো কারণে। একে তো দলের জন্য জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে তাঁর এই স্পেল। সঙ্গে বল হাতে সফল হয়েছেন বলে এই দিনটাকে বিশেষ ভাবে মনে থাকবে। ‘‘আমি জানি ব্যাটিংটা আমার বেশি শক্তিশালী। রানটা আমি করতে পারব। বোলিংটা আমার দুর্বল জায়গা ছিল। সেটাতে ভাল করতে পেরেছি বলে বেশি আনন্দ হচ্ছে।’’ তরুণ সতীর্থ ঋষভ পন্থকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত শোনাল তাঁকে। বললেন, ‘‘অনেক লম্বা দৌড়ের ঘোড়া ঋষভ। খুবই আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলল। বোঝাই যায়নি প্রথম টেস্ট খেলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy