Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভাইয়ের সঙ্গে ছক্কার মহড়া দিয়েই বাজিমাত হরমনপ্রীতের

পঞ্জাবের মোগা জেলায় মাসখানেক আগে দিদি ও ভাইয়ের অনুশীলন দেখতে ভিড় জমে গিয়েছিল মাঠের ধারে। দিদি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর! 

ভরসা: বিশ্বকাপে ভারত তাকিয়ে ছন্দে থাকা হরমনপ্রীতের দিকে। —ফাইল চিত্র।

ভরসা: বিশ্বকাপে ভারত তাকিয়ে ছন্দে থাকা হরমনপ্রীতের দিকে। —ফাইল চিত্র।

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩২
Share: Save:

ভাই একের পর এক বল করছেন। আর দিদি তা সপাটে উড়িয়ে দিচ্ছেন বাউন্ডারির ওপারে। পঞ্জাবের মোগা জেলায় মাসখানেক আগে দিদি ও ভাইয়ের অনুশীলন দেখতে ভিড় জমে গিয়েছিল মাঠের ধারে। দিদি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর!

খেলার ব্যস্ততার জন্য বছরের অধিকাংশ সময়ই বাড়ির বাইরে থাকেন হরমনপ্রীত। অক্টোবর মাসে মাত্র এক দিনের জন্য মোগার বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতিতে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে তার জন্য সতর্ক ছিলেন। বাড়িতে পা দিয়েই ভাই গুরজিন্দর সিংহ (গ্যারি)-কে নিয়ে মাঠে চলে গিয়েছিলেন। টানা পাঁচ-ছয় ঘণ্টা টানা অনুশীলন করেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মহড়ার চমকপ্রদ এই কাহিনি শোনালেন হরমনপ্রীতের বাবা হরমন্দর সিংহ ভুল্লারই। শনিবার সকালে ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘প্রায় ছয় মাস পরে গত ৬ অক্টোবর বাড়িতে ফিরেছিল হরমনপ্রীত। কিন্তু এসেই ভাইকে নিয়ে মাঠে চলে গেল। বলল, সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এখন এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করা যাবে না।’’

হরমন্দর একেবারেই অবাক হননি মেয়ের কাণ্ডে। বলছিলেন, ‘‘আমাদের এখানে মেয়েদের মধ্যে ক্রিকেট খেলার চল নেই। ব্যতিক্রম হরমনপ্রীত। তাই ছেলেদের সঙ্গেই ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট খেলত। আমরা ভয় পেতাম। কারণ, আঘাত লাগার সম্ভাবনা বেশি ছিল। হরমনপ্রীতের কিন্তু ভয় ছিল না। বয়সে বড় ছেলেদের বলও অবলীলায় উড়িয়ে দিত বাউন্ডারির বাইরে। পরের দিকে অনেকেই ওকে বল করতে চাইত না।’’ শুক্রবার একই অবস্থা হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বোলারদের। ৫১ বলে করা ১০৩ রানের ইনিংসে মেরেছেন আটটি ছয় ও সাতটি চার। ম্যাচের পরেই মোগা জেলায় দ্বিতীয় দিওয়ালি শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রায় সারারাত ধরেই চলেছিল উৎসব। কিন্তু হরমন্দর নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর মনে বারবার ফিরে আসছিল একুশ মাস আগের স্মৃতি।

আরও পড়ুন: আজ পাক দ্বৈরথে এগিয়ে ভারতই

লন্ডনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফাইনালে হরমনপ্রীত ৫১ রান করলেও বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছিল ভারতের। তাই তিনি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন এই বলে যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলে উৎসব করো। এখন নয়।

যদিও তাঁর অনুরোধে কেউ কর্ণপাত করেননি। হরমন্দর বললেন, ‘‘হরমনের জন্য আমি গর্বিত। কিন্তু কিছুতেই ভুলতে পারছি না গত বছরের হারটা। এ বার তো আমার মেয়েই ভারতের অধিনায়ক, তাই বেশি চিন্তা হচ্ছে। সবে তো একটা ম্যাচ হয়েছে। রবিবার আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ। এখন আবেগে ভেসে গেলে চলবে না। এই ছন্দটা ধরে রাখতে হবে।’’

ম্যাচের আগে সব সময়ই বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন হরমনপ্রীত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অভিযান শুরু করার আগেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরু হওয়ার ঘণ্টা দু’য়েক আগেই বাড়িতে ফোন করেছিলেন হরমনপ্রীত। বাবার মতো মেয়েও কি ম্যাচের আগে টেনশনে ছিলেন? হাসতে হাসতে হরমন্দর বললেন, ‘‘আমার মেয়ে ভয় কাকে বলে জানেই না। তবে আমি যে টেনশন করছি, গলা শুনেই বুঝতে পেরেছিল। আমাকে বলল, বাবা চিন্তা কোরো না। জিতেই মাঠ ছাড়ব।’’ পাকিস্তান ম্যাচের আগেও মেয়ের গলায় আত্মবিশ্বাসের এই সুরটাই শুনতে চান হরমন্দর।

স্কোরকার্ড

ভারত ১৯৪-৫ (২০)
নিউজিল্যান্ড ১৬০-৯ (২০)

ভারত রান বল
তানিয়া ভাটিয়া বো তাহুহু ৯ • ৬
স্মৃতি ক জেনসেন বো তাহুহু ২ • ৭
জেমাইমা স্টা.মার্টিন বো ওয়াটকিন ৫৯ • ৪৫
হেমলতা ক তাহুহু বো ক্যালপেরেক ১৫ • ৭
হরমনপ্রীত ক মার্টিন বো ডিভাইন ১০৩ • ৫১
বেদা কৃষ্ণমূর্তি ন. আ. ২ • ৩
রাধা যাদব ন. আ. ০ •১
অতিরিক্ত ৪
মোট ১৯৪-৫ (২০)
পতন: ১-৯ (তানিয়া, ১.১), ২-২২ (মন্ধানা, ৩.৫), ৩-৪০ (হেমলতা, ৫.৪), ৪-১৭৪ (জেমাইমা, ১৮.২), ৫-১৯৪ (হরমনপ্রীত, ১৯.৫)।
বোলিং: জেস ওয়াটকিন ৩-০-৪০-১, লিয়া তাহুহু ৩-০-১৮-২, লে ক্যাসপেরেক ৪-০-২৮-১, হেইলি জেনসেন ২-০-২৮-০, অ্যামেলিয়া কের ৪-০-৩৬-০, সোফি ডিভাইন ৩-০-২২-১, স্যাটারথোয়েট ১-০-১৮-০।

নিউজিল্যান্ড রান বল
সুজ়ি বেটস ক হেমলতা বো রেড্ডি ৬৭ • ৫০
পিটেরসেন ক ভাটিয়া বো হেমলতা ১৪ • ১২
ডিভাইন ক কৌর বো পুনম ৯ • ৯
ওয়াটকিন স্টা. ভাটিয়া বো পুনম ০ • ১
এমি ক পুনম বো হেমলতা ৩ • ৯
মার্টিন ক কৌর বো পুনম ৩৯ • ২৫
গ্রিন ক দীপ্তি বো হেমলতা ২ • ৩
ক্যাসপেরেক ক দীপ্তি বো পুনম ১৯ • ৯
জেনসেন স্ট.ভাটিয়া বো পুনম ১ • ২
অ্যামেলিয়া কের ন. আ. ০ • ০
অতিরিক্ত ৬
মোট ১৬০-৯ (২০)
পতন: ১-৫২ (পিটেরসেন, ৬.৩), ২-৭৩ (ডিভাইন, ৯.৩), ৩-৭৩ (ওয়াটকিন, ৯.৪), ৪-৯৩ (স্যাটারথোয়েট, ১২.৪), ৫-৯৮ (বেটস, ১৩.৪), ৬-১১০ (গ্রিন, ১৪.৫), ৭-১৪৭ (মার্টিন, ১৮.৫), ৮-১৬০ (ক্যাসপেরেক, ১৯.৫), ৯-১৬০ (জেনসেন, ১৯.৬)।
বোলিং: এ রেড্ডি ৪-০-৩৬-১ রাধা যাদব ৪-০-৩১-২, দীপ্তি শর্মা ৪-০-৩৩-০, ডি হেমলতা ৪-০-২৬-৩, পুনম যাদব ৪-০-৩৩-৩।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE