Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইডেন থেকে বিশ্বকাপ ম্যাচ সরানো লর্গ্যাটই এখন ইডেনে বিশ্বকাপ ফাইনালের পক্ষে

তাঁর আমলেই আইসিসি ইডেন থেকে সরিয়ে নিয়েছিল বিশ্বকাপের ম্যাচ। ভারত-ইংল্যান্ড হাই প্রোফাইল সেই ম্যাচ হারানোর শোকটা এখনও ভুলতে পারেনি কলকাতা। আর যাঁর ‘কালো হাত’ সেই সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল বলে অভিযোগ, সেই হারুন লর্গ্যাট রবিবার ইডেনে বসেই দেখলেন আইপিএল ফাইনাল। শুধু দেখাই নয়, একই সঙ্গে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে গেলেন ক্রিকেটের নন্দনকাননকে। সে দিন তিনি ছিলেন আইসিসি-র সিইও-র পদে।ইডেন থেকে ম্যাচ সরার ফতোয়ায় সই করেছিলেন তিনিও।আর রবিবার সেই ইডেনের কর্পোরেট জোনে প্ল্যাটিনাম বক্সে বসে ক্রিকেট উপভোগ করার পাশাপাশি শুনলেন এই শীতে দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত সফরে একটি টি টোয়েন্টি ম্যাচ হবে এই ইডেনেই।

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০৪:২৯
Share: Save:

তাঁর আমলেই আইসিসি ইডেন থেকে সরিয়ে নিয়েছিল বিশ্বকাপের ম্যাচ। ভারত-ইংল্যান্ড হাই প্রোফাইল সেই ম্যাচ হারানোর শোকটা এখনও ভুলতে পারেনি কলকাতা। আর যাঁর ‘কালো হাত’ সেই সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল বলে অভিযোগ, সেই হারুন লর্গ্যাট রবিবার ইডেনে বসেই দেখলেন আইপিএল ফাইনাল। শুধু দেখাই নয়, একই সঙ্গে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে গেলেন ক্রিকেটের নন্দনকাননকে।

সে দিন তিনি ছিলেন আইসিসি-র সিইও-র পদে।ইডেন থেকে ম্যাচ সরার ফতোয়ায় সই করেছিলেন তিনিও।আর রবিবার সেই ইডেনের কর্পোরেট জোনে প্ল্যাটিনাম বক্সে বসে ক্রিকেট উপভোগ করার পাশাপাশি শুনলেন এই শীতে দক্ষিণ আফ্রিকার ভারত সফরে একটি টি টোয়েন্টি ম্যাচ হবে এই ইডেনেই।এবং শোনার পরই লর্গ্যাটের প্রতিক্রিয়া‘‘দারুণ ব্যাপার।দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ইডেন তো দারুণ ঐতিহাসিক ভেনু।এই মাঠেই তো আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসা।’’ কিন্তু সেই ইডেন থেকেই সে দিন অমন হাই প্রোফাইল ম্যাচ সরিয়ে নিলেন কী বলে? হেসে উত্তর দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সিইও, ‘‘ভুল করছেন বন্ধু,ওটা আমার একার সিদ্ধান্ত ছিল না। ওটা আইসিসি-র সিদ্ধান্ত ছিল। আইসিসি-র পরিদর্শকরা যেমন রিপোর্ট দিয়েছিলেন, তার ভিত্তিতেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল একশো শতাংশ নিয়ম মেনে।আমার একার কোনও ভূমিকাই ছিল না ওখানে।’’ ইডেনের বিভিন্ন ব্যবস্থা ওই সময়ে বিশ্বকাপের জন্য পুরো তৈরি ছিল না বলেই এখান থেকে সেই ম্যাচ সরানো হয়েছিল বলে ব্যাখ্যা দেন লর্গ্যাট।


হবু এবং ভারতীয় দলের বর্তমান টিম ডিরেক্টর! সঙ্গে লিটল মাস্টার। রবিবার দুপুরে সুনীল গাওস্করের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও রবি শাস্ত্রী। সোমবারই হয়তো ঘোষণা করে দেওয়া হবে নতুন টিম ডিরেক্টরের নাম। রবিবার রাত থেকে ইডেনে নতুন জল্পনা, পরামর্শদাতা কমিটিতে কি সৌরভকে রাখা হবে, না তিনি নিছকই হবেন টিম ডিরেক্টর? যদি না রাখা হয় সেক্ষেত্রে কমিটি হবে দুই সদস্যের—সচিন এবং শাস্ত্রী। মধ্য কলকাতায় চিত্রসাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয় সাংবাদিক অশোক দাশগুপ্তকেও। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকে ভারতীয় বোর্ডের এক নম্বর শত্রু হয়ে উঠেছিলেন তিনিই।কেন? এ বার প্রায় চমকে গিয়ে লর্গ্যাট বলেন, এটাই তো আমার কাছে আজও ধাঁধা। জানি না, কেন আমাকে টার্গেট বানানো হয়েছিল। তার পর থেকে আমাকে মহাশত্রু বানানোর একটা চেষ্টা শুরু হয়েছিল।’’চোখে তির্যক চাহনি পোড় খাওয়া ক্রিকেট প্রশাসকের।গত বছর ভারতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকে কেটে ছেঁটে প্রায় অর্ধেক করে দেওয়ার পিছনেও না কি লর্গ্যাটের সঙ্গে এই শত্রুতা।শেষ পর্যন্ত ভারতীয় দলের সফরের সময় লর্গ্যাটকে তাঁর সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। ভারতীয় বোর্ডের চালকের আসনে বসে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন সে দিন লর্গ্যাটকে পদত্যাগ করতে কার্যত বাধ্য করেছিলেন।

সেই শ্রীনিবাসন আজ ভারতীয় বোর্ডে কার্যত একঘরে।আইসিসি-র শীর্ষাসনেও যে কত দিন আছেন, তা নিয়েও না কি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।শ্রীনিকে নিয়ে অবশ্য একটাও কথা বলতে রাজি নন লর্গ্যাট।শুধু বললেন, ‘‘এই নিয়ে আমি কী বলব? আমি তো জানিই না, কেন আমাকে শত্রু বানানো হয়েছিল?আমার অপরাধকী ছিল, তা আমি আজও জানি না।’’

লর্গ্যাটের উপর রাগ যে উধাও সিএবি কর্তাদের, তা হয়তো নয়।কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে যেমন বললেন, সিএবি-র আমন্ত্রণে তো উনি আসেননি। এসেছেন বিসিসিআইয়ের আমন্ত্রণে। এবং বোর্ডও আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ডকে। ব্যক্তিগত ভাবে লর্গ্যাটকে নয়। সিএবি হয়তো আপত্তি জানাতে পারত।কিন্তু কোনও শত্রুতাই বেশি দিন রাখা উচিত নয়।আমার সঙ্গে ওঁর দেখা হয়েছে। কথাও বলেছি. কিন্তু ওই প্রসঙ্গে কোনও কথা হয়নি।’’ লর্গ্যাটও বললেন, ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে আমার কোনও সমস্যাই ছিলও না।এখনও নেই।এই তো কী আতিথেয়তা পাচ্ছি কলকাতায় এসে। অসাধারণ।’’

আগামী বছর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল ইডেনে করার চেষ্টা হচ্ছে শুনে লর্গ্যাট যা বললেন, তাতে অবাক হতেই পারেন কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা। বললেন, এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? এত ভাল পরিবেশ। এমন স্পোর্টিং দর্শক। ফাইনালের পক্ষে এর চেয়ে ভাল পরিবেশ আর কী হতে পারে?

এই সেই হারুন লর্গ্যাট।যিনি বিশ্বকাপে ইডেনকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার ফরমানে হস্তাক্ষর করেছিলেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE