দু’বছর আগে কলকাতায় পূর্বাঞ্চলীয় ২০০ ও ৪০০ মিটারে জোড়া সোনা জয়ের পরেই প্রথম আলাপ মেয়েটির সঙ্গে। তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন আমারই ছাত্র নিপন দাস। যে আবার সেই ছোট্ট মেয়ে হিমা দাসের কোচ। সে দিনই মেয়েটির একাগ্রতা, সেরা হওয়ার তাগিদ, গতি, লম্বা একটি পদক্ষেপে অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করে যাওয়া নজর কেড়েছিল আমার।
অসমের এই মেয়েটিকে সে দিন বলেছিলাম, ফোকাস যেন নড়ে না যায়। প্রতিযোগিতা ছোট না বড় সেটা নিয়ে কখনও মাথা ঘামাবে না। সেই হিমা বৃহস্পতিবার ফিনল্যান্ডে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটারে সোনা জয়ের পরে গর্বে বুকটা ফুলে উঠেছে। গর্ব হচ্ছে ওর কোচ নিপনের জন্যও।
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা হচ্ছে সেই ১৯৮৬ সাল থেকে। প্রতি দু’বছর অন্তর যা হয়ে থাকে। এর আগে এই প্রতিযোগিতা থেকে ব্রোঞ্জ জিতেছেন ভারতের দুই ডিসকাস থ্রোয়ার— ২০০২ সালে সীমা আন্তিল (বিয়ের পরে এখন পদবী পুনিয়া) ও ২০১৪ সালে নভজিৎ কউর। ২০১৬ তে প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই মিট থেকে সোনা পেয়েছিলেন জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া। কিন্তু ট্র্যাক ইভেন্টে হিমাই এই প্রতিযোগিতায় প্রথম সোনাজয়ী ভারতীয় অ্যাথলিট।
গোল্ড কোস্টে গত এপ্রিলে হওয়া কমনওয়েলথ গেমসে ষষ্ঠ হলেও ৪০০ মিটারে হিমা সময় করেছিলেন ৫১.১৩ সেকেন্ড। এ বার ওঁর সময় ৫১.৪৬ সেকেন্ড। বৃহস্পতিবার রাতে টিভিতে দেখলাম, প্রথম ১৬০ মিটার হিমা সে ভাবে গতি বাড়াতে পারেননি। কিন্তু পরের দিকে তিন জনকে পিছনে ফেলে সোনা জিতে নিলেন। তার মানে, গতি রয়েছে। ৪০০ মিটারের মতো লং স্প্রিন্ট ইভেন্টে সেটাকে শুরুর দিকে বাড়ালেই সময়টা কমবে। এশিয়ান গেমসে এই ইভেন্টে রেকর্ড ৫১.১১। গোল্ড কোস্টে এই সময়ের খুব কাছে চলে গিয়েছিল ও। যার অর্থ আসন্ন এশিয়ান গেমসে পদকের দরজায় কড়া নাড়ছে এই ভারতীয় মেয়ে। শুরুর দিকে গতিটা বাড়াতে পারলেই কিন্তু আরও বড় সাফল্য অপেক্ষা করছে হিমার সামনে।
এই মুহূর্তে হিমার মাথা যেন ঘুরে না যায়, সেটাও দেখতে হবে ওঁর কোচ এবং তাঁর সহকারীদের। কারণ, জুনিয়র স্তরে এ রকম ভাল ফল করেও অনেক সফল অ্যাথলিটকে আমি হারিয়ে যেতে দেখেছি। কাজেই প্রচারের আলো নিয়ে না ভেবে নিজের সময় কমানোর দিকে নজর রাখুন হিমা। আর কে না জানে, হৃদয় দিয়ে কোনও বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে সাফল্য আসতে বাধ্য।
(লেখক প্রবীণ অ্যাথলেটিক্স কোচ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy