Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Sports News

সাইলেন্ট কিলারকে স্ম্যাশ করে নিখার গর্গের স্বপ্নের লড়াই

নিখারের শরীরে ২৪ ঘণ্টা ইনসুলিন চলে, এক অভিনব যন্ত্রের মাধ্যমে। সেই যন্ত্রই নিয়ন্ত্রণ করে নিখারের রক্তে শর্করার মাত্রা। শুধু খেলার সময় খুলে রাখতে হয়।

নিখার গর্গ। —নিজস্ব চিত্র।

নিখার গর্গ। —নিজস্ব চিত্র।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ১৬:৩৮
Share: Save:

ছোট্টবেলা থেকে একটাই স্বপ্ন, ব্যাডমিন্টন খেলা। স্বপ্নের মতোই শুরু হয়েছিল জীবনটা।

ছেলের ইচ্ছে ও পরিশ্রমের পাশে বাবা, মা-ও ছিলেন। তখন তারআর কত বয়স!সাত পেরিয়ে সদ্য আট।

হঠাৎই বদলে গেল সব। স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে ছুটেছিলেন নিখার গর্গের বাবা-মা। নামটা চেনা চেনা লাগছে? হ্যাঁ, জাতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়নিখার গর্গ। তাঁর আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে ওঠার পথটা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। সেইআট বছর বয়সেই জানা গেল, টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসে আক্রান্ত ছোট্ট নিখার। মাথায় হাত তখন নিখারের বাবা-মায়ের!

আরও পড়ুন

রাশিয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ!

আপাতত ইংল্যান্ডের বাসিন্দা নিখার। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নিখার সদ্য ঘুরে গেলেন ভারত। মুম্বইয়ের ছেলে। কিন্তু ভারতীয় ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনের অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে দেশ ছেড়েছিলেন। এখন তিনি খেলেন ইংল্যান্ডের হয়ে। এ বার ভারতে আসার লক্ষ্য কিন্তু কোনও টুর্নামেন্ট ছিল না। টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস নিয়ে ভারতীয়দের মনে যে ভুল ধারণা রয়েছে, তা ভেঙে নতুন জীবনে চলার রাস্তা দেখানোই ছিল তাঁর এ বারের সফরের উদ্দেশ্য।

এই পথ দেখানোর কাণ্ডারী হিসাবে দীর্ঘ দিন ধরেই কাজ করছেন চিকিৎসক দেবাশিস বসু। তাঁর হাত ধরেই এ রাজ্যে অনেক মানুষ নতুন জীবনের পথে হাঁটছেন।দেবাশিস বসু বলছিলেন, ‘‘এই রোগকে ভয় নয়, জীবনকে ভালবেসে ছাপিয়ে যাওয়া যায় সব সমস্যা। শুধু দরকার নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। যেটা নিখার করে। ওই মন্ত্রেই আজও ও স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছে।’’ নিখারের মতো টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসে অনেকেই ভুগছেন। কিন্তু, তাঁদের মধ্যে যাঁদের চিকিৎসা করানোর তেমন সামর্থ নেই, সেই সব দুঃস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেবাশিস এবং তাঁর সংস্থা ডে।

শুনুন কী বলছেন নিখার গর্গ

টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসকে এক কথায়, ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলা হয়। একটু একটু করে জীবনটা ক্রমশ ছোট হতে হতে শেষ হয়ে যায়। সেই অবস্থায় খেলা, তা-ও আবার পেশাদার পর্যায়ে ভাবাই যায় না। এই হিসেবটাকেই বদলে দিয়েছেন নিখার। কলকাতায় এসে তিনি বলছিলেন, ‘‘আমার জানেন কোনও সমস্যা নেই। আপনাদের মতোই আমি সাধারণ। স্বাভাবিক জীবন কাটাই। আমি যদি পেরে থাকি, তা হলে যে কেউ এখান থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।’’

ডায়াবিটিস আস্তে আস্তে নষ্ট করে দেয় চোখ, কিডনি, হার্ট... সব। যে কোনও সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি। কিন্তু নিখার বলছেন, নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কথা। যেটা সব মানুষের প্রয়োজন। কিন্তু, বেশির ভাগই করেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কিন্তু ভাগ্যবান। নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের সুযোগ অনেকের থাকলেও আমরা কিন্তু তা করতে বাধ্য। এই ধরনের ডায়াবিটিস বিরল। ডায়াবিটিকদের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশ মানুষের এটা হয়।’’ সেই পাঁচ শতাংশের মধ্যে নিখার একজন।

বাঁ দিক থেকে নিখার গর্গ, নিখারের ডবলস পার্টনার পল্লব বোস, অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও ডাক্তার দেবাশিস বসু।

নিখারের শরীরে ২৪ ঘণ্টা ইনসুলিন চলে, এক অভিনব যন্ত্রের মাধ্যমে। সেই যন্ত্রই নিয়ন্ত্রণ করে নিখারের রক্তে শর্করার মাত্রা। শুধু খেলার সময় খুলে রাখতে হয়। খেলতে খেলতে হঠাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা কমে বা বেড়ে গিয়ে কোর্ট ছেড়ে কখনও কখনও বেরিয়ে আসতে হয়েছে তাঁকে। তবুও হাল ছাড়েননি। এখন বয়স সবে ২৩। নিখার কিন্তু থেমে থাকেননি। খেলার সঙ্গে সঙ্গে চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনাও।

নিখারের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় ২০১৩-য়। নিখার কিন্তু শুরু করেছিলেন বাহরিনের হয়ে। ভারতের হয়ে প্রথম খেলা ২০১৪-য়। প্রথম সুপার সিরিজ খেলেন ২০১৬-য়। ২০১৭-১৮ মরসুমে নিখার গর্গ চাইনিজ তাইপে ওপেন গ্রাঁপ্রি গোল্ড, স্কটিশ ওপেন গ্রাঁপ্রি ও ওয়েলশ ইন্টারন্যাশনালে অংশ নেন।

এখন নিখার ইংল্যান্ডের। কিন্তু এ বারও ভারতে এসে সরকারের কাছে তাঁর অনুরোধ, টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিক্সদের পাশে দাঁড়ানোর। তাঁর কথায়, ‘‘তাঁরাও স্বাভাবিক জীবন পেতে পারেন। বাঁচতে পারেন আরও ১০ জনের মতোই।’’ যে ভাবে নিখাররা বাঁচে। নিজে বাঁচার পাশাপাশি আশ্বাস দেয় গোটা বিশ্বকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE