Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইস্টবেঙ্গলের আই লিগ আশা কার্যত শেষ

আই লিগে দশ নম্বর ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গলে নিকষ অন্ধকার। গোয়াতে সালগাওকরের কাছে তিন গোল খাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে এ বার পুণেতে শিবাজিয়ান্সের কাছে দু’গোল হজম করল বিশ্বজিৎ বাহিনী। নিট ফল, আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড় থেকে কার্যত ছিটকে গেল ইস্টবেঙ্গল।

নিজস্ব সংবাদদাতা:
শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪২
Share: Save:

শিবাজিয়ান্স- : ইস্টবেঙ্গল- (ডুহু, জুয়ান)

খেলার শেষে মাথা চাপ়ড়াচ্ছিলেন র‌্যান্টি মার্টিন্স।

ভাল খেলতে না পারায় ম্যাচের মধ্যেই বারকয়েক মেজাজ হারালেন বার্নার্ড মেন্ডি।

সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় সারাক্ষণ তীব্র হতাশায় হাত কামড়ে গেলেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য।

আই লিগে দশ নম্বর ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গলে নিকষ অন্ধকার। গোয়াতে সালগাওকরের কাছে তিন গোল খাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে এ বার পুণেতে শিবাজিয়ান্সের কাছে দু’গোল হজম করল বিশ্বজিৎ বাহিনী। নিট ফল, আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড় থেকে কার্যত ছিটকে গেল ইস্টবেঙ্গল।

ফিরতি ডার্বির আগে টানা তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে বেরিয়েছে লাল-হলুদ। যাদের বিরুদ্ধে, আই লিগের টেবলে রবিবারের পরেও তারা সাত, আট, ন’নম্বর দল। বিশ্বজিৎ-র‌্যান্টিদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ ছিল, এই তিন ম্যাচ থেকে নিজেদের পয়েন্টের ঝুলি যথাসম্ভব ভারী করে নেওয়ার। খেতাবের দৌড়ে তাদের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান, বেঙ্গালুরুর প্রকৃত চ্যালেঞ্জার হয়ে ওঠা। বাস্তবে, সেই তিন ম্যাচের প্রথম দু’টো থেকে ইস্টবেঙ্গলের সংগ্রহ শূন্য পয়েন্ট। বাগান আর বেঙ্গালুরুর চেয়ে পাঁচ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়ল বিশ্বজিতের দল। মাত্র ন’দলের লিগে (ম্যাচ বাকি কারও ছ’টা, কারও পাঁচটা) পয়েন্টের এতটা ব্যবধান মুছে ফেলা অসম্ভব না হলেও খুব কঠিন। ইস্টবেঙ্গল কোচও পুণে থেকে ফোনে বলে দিলেন, ‘‘আমাদের কাজটা প্রচণ্ড কঠিন করে ফেললাম। এখন শুধু বাকি প্রত্যেকটা ম্যাচ জিতলেই চলবে না। অন্য দলের রেজাল্টের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। অন্যদের পয়েন্ট নষ্ট করার আশায় বসে থাকতে হবে।’’

সালগাওকারের কাছে জঘন্য হারের পর মনে করা হয়েছিল, লিগের ‘লাস্টবয়’-এর বিরুদ্ধে অন্তত উঠে দাঁড়াবেন মেহতাবরা। মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবেন তিন পয়েন্টের জন্য। কোথায় কী! ডুহু পিয়ের, বলজিৎ সাইনিদের কাছে ল্যাজেগোবরে হলেন ডু ডং-রা। সালগাওকর ম্যাচে দু’গোলে পিছিয়ে থাকার সময়েও কেন ডং-কে নামানো হয়নি, কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ দিন দলে ফিরে দক্ষিণ কোরিয়ান মিডিও আরও বেশি বুঝিয়ে দিলেন, কেন কোচ আঠারো জনেও রাখছিলেন না তাঁকে। তবু যেন সমালোচকদের জবাব দিতে ডংকে বালেওয়াড়ির মাঠে পুরো নব্বই মিনিট এ দিন রেখে দেন বিশ্বজিৎ। আর জিদানের একদা সতীর্থ মেন্ডির পারফরম্যান্স? এতটাই কুৎসিৎ যে, দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি ফরাসি তারকাকে তুলে নিতে বাধ্য হন লাল-হলুদ কোচ। বেলো-অর্ণবদের অবস্থাও তথৈবচ। ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারদের কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দু’অর্ধে দু’টো গোল করে যান ডুহু আর জুয়ান কুয়েরো।

হঠাৎ ইস্টবেঙ্গলের এহেন জঘন্য পারফরম্যান্সের কারণ কী? কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘অনেক গোলের সুযোগ নষ্ট করেছি।’’ দাবি, ‘‘রেফারি আমাদের ন্যায্য পেনাল্টি দেননি।’’ কিন্তু আরও কিছু কারণও যে আছে সেটা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন লাল-হলুদ ম্যানেজমেন্ট। যেমন তাদের প্রথম একাদশের ছ’জন ফুটবলার তিরিশ পেরিয়ে গিয়েছেন বা ছুঁয়েছেন। স্বভাবতই বয়সের ভারে ডিফেন্স আর মাঝমাঠ স্লথ। দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। গা-ছাড়া ভাব এসে পড়ছে গোটা টিমের মধ্যেই। তুলনায় এ দিন শিবাজিয়ান্সের মিলান সিংহ, সুরচন্দ্ররা তরুণ, ছটফটে। প্রচুর খেটে খেলেছেন। এ ছাড়া আগের ম্যাচেই তিন গোল খাওয়ার ভীতি হয়তো এ দিন কাঁধে করে নেমেছিলেন সৌমিক-তুলুঙ্গারা। নইলে যে টিম এ দিনের আগে শুধুমাত্র মুম্বইকে হারিয়েছিল, লিগে সবার শেষে রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও ইস্টবেঙ্গল শুরু থেকেই এত বেশি রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কুঁকড়ে থাকবে কেন? আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগালেন ডেরেক পেরেরার ছেলেরা। দশ মিনিটের মধ্যেই ডুহুর গোল। ইস্টবেঙ্গল তাতে আরও দিশেহারা হয়ে পড়ে। অজস্র মিস পাস, একের পর এক ভুল করে চলা— সব কিছুর খেসারত দিতে হল তাদের হাফটাইমের পরে আরও একটা গোল হজম করে। ডেরেকের চমৎকার হোমওয়ার্কে লাল-হলুদের মাঝমাঠ অকেজো হয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় উইং প্লে-ও। ফলে বিশ্বজিতের শিবরাত্রির সলতে র‌্যান্টির কাছে বল সে ভাবে পৌঁছতেই পারেনি। উল্টে ডুহু, ডিপান্ডা ডিকাদের একের পর এক আক্রমণে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ে। শিবাজিয়ান্সের দ্বিতীয় গোলের পর ইস্টবেঙ্গল বলতে গেলে হাল ছেড়ে দেয়।

র‌্যান্টিদের পরের ম্যাচ আইজলের বিরুদ্ধে শিলংয়ে। শিবাজিয়ান্সের মতোই পাহাড়ি দলটাও এই মুহূর্তে ফর্মে ফিরছে। পারবেন মেহতাব-মেন্ডিরা পাহাড়ি ছেলেদের দৌড় আর ফিটনেসের সঙ্গে পাল্লা দিতে? না পারলে তখন হয়তো আর অঙ্কের বিচারেও আই লিগ খেতাবি দৌড়ে থাকবে না ইস্টবেঙ্গল।

ইস্টবেঙ্গল: রেহেনেশ, রাহুল, বেলো, অর্ণব, সৌমিক, ডং, মেহতাব, মেন্ডি (লোবো), তুলুঙ্গা, অবিনাশ, র‌্যান্টি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

east bengal i league
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE