দেড়শোর অভিনন্দন। লোকেশের সঙ্গে কোহালি। ছবি: এএফপি
অস্ট্রেলিয়ায় করা নিজেরই এত দিনের সর্বোচ্চ স্কোরকে ছাপিয়ে যাওয়া। বছর দেড়েক আগে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করা ১১০ রানই এত দিন টেস্টে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল লোকেশ রাহুলের। সাবাইনা পার্কের পর সে সব অতীত।
পলি উম্রিগড়, ব্রিজেশ পটেলদের সঙ্গে একই সরণিতে বসে পড়া। ক্যারিবিয়ানে জীবনের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি এর আগে ছিল চার ভারতীয়ের। উম্রিগড়, ব্রিজেশ, সঞ্জয় মঞ্জরেকর এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। লোকেশ রাহুল সেই ক্লাবে পঞ্চম সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়ে ফেললেন।
ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে ওপেনারদের মধ্যে এত দিন যে রেকর্ড সুনীল গাওস্কর এবং বিনু মাঁকড়ের ছিল, এ বার তা লোকেশেরও! গাওস্কর এবং মাঁকড়— দু’জনেরই কেরিয়ারের প্রথম তিনটে টেস্ট সেঞ্চুরি বিদেশে ছিল। বার্বেডোজে অসাধারণ সেঞ্চুরির পর কর্নাটক ব্যাটসম্যানেরও এখন তাই। অস্ট্রেলিয়ায় অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কায় শ্রীলঙ্কা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ— জীবনের ছ’টেস্টে যে তিনটে সেঞ্চুরি আছে লোকেশ রাহুলের সবই তো বাইরে-বাইরে!
এবং এমন কীর্তিমান ওপেনারের মনে হচ্ছে, পুরোটাই সম্ভব হয়েছে তাঁর অসীম খিদে থেকে। বাইরে বসে থেকে-থেকে যে খিদের জন্ম হয়েছে!
এক দিক থেকে ঠিকই। মুরলী বিজয় চোট পেয়ে ছিটকে না গেলে লোকেশের তো এই টেস্টে নামাই হত না। আর লোকেশ শুধু নামলেন না। একেবারে ১৫৮ করে ফিরলেন। যার পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে পরপর কয়েকটা কথা বললেন।
‘‘আমার কাছে অন্তত ব্যাপারটা বিশেষ কঠিন ছিল না। প্রথম থেকে হিট করতে শুরু করে দিয়েছিলাম। তবে নেটে প্রচুর খাটাখাটনি করেছি।’’
‘‘কোনও কিছুকে জটিল করতে যাইনি। চেয়েছিলাম, যতটা সম্ভব সব কিছুকে সহজ রাখতে। গত তিন-চার মাস ধরেই আমি ভাল ফর্মে ছিলাম। শরীরের নড়াচড়া একদম ঠিকঠাক হচ্ছে। বল ভাল মারতেও পারছি।’’
‘‘আমি ঠিক করে নেমেছিলাম যে, খারাপ বল পেলেই চালাব। আগ্রাসী মনোভাবটা ধরে রাখব। জানি না এটা করা সহজ না কঠিন। কিন্তু আমার মনে হয়, সহজতম জিনিসগুলো যদি আপনি ঠিকঠাক করতে পারেন, প্রাপ্য পেয়ে যাবেনই।’’
এর কোনওটাই তাঁর প্রাপ্য ছিনিয়ে নেওয়ার চোয়ালচাপা লড়াইকে ধরবে না। লোকেশ গত রাতে সেটাও বললেন। বোর্ড ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে।
না, বিতর্কিত কথা বলেননি। বরং লোকেশ বলেছেন যে, বাইরে বসে থাকাটা তাঁর কাছে আশীর্বাদের মতো। সতীর্থদের ভাল করতে দেখলে, মোটিভেশন আপনাআপনি চলে আসে। ‘‘এতে আসলে খিদেটা বাড়ে। আমিও একটা ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি বা হাফসেঞ্চুরি করব, এই ইচ্ছেটা চলে আসে। আমি এই বাইরে বসে থাকাটা মোটিভেশন হিসেবে দেখি। কঠিন কাজ কী জানেন? এই বাইরে থেকেও নিজেকে ঠান্ডা রাখা। মনকে শান্ত রেখে নিজেকে আরও ধারালো করে তোলাটা,’’ বলে ফেলেছেন লোকেশ। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘কখনও মনে হবে, নিই না ছুটি। খেলছি তো আর না। ওটা সামলানোই চ্যালেঞ্জ। এ সব ভাবনা মাথা থেকে বার করে নিজেকে রগড়ানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখাই আসল। সুযোগ যে কোনও দিন যে কোনও ভাবে আসতে পারে।’’
কিন্তু সে ভাবেই তো তাঁর মহম্মদ আজহারউদ্দিনকে ছুঁয়ে ফেলা। যিনি নিজের টেস্ট কেরিয়ারের প্রথম তিনটে হাফসেঞ্চুরিকে শতরানে বদলে ফেলেছিলেন। ‘‘বড় এক নামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমাকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত ভাবে, আমি খুশি। আসলে সাত-আট মাস পরপর খেললে, ব্যাপারটা সহজ হয় না। শ্রীলঙ্কায় আমি যে শেষ টেস্টটা খেলেছিলাম, তা গত বছর। এ রকম সময়েই। তাই যখন এই টেস্টে সাদা জার্সি আমি পরলাম, তখন মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছিল। যাব, গিয়ে পারফর্ম করে ফিরব। এই যে বাইরে বসে থাকা, ম্যাচের পর ম্যাচ না খেলা, এ সব খিদে বাড়িয়ে দেয়,’’ বলে দিচ্ছেন লোকেশ। সঙ্গে সংযোজন, ‘‘আপনি তখন চাইবেন যতটা সম্ভব রান করতে, যাতে আর বাইরে না বসে থাকতে হয়। ক্রিকেটার হিসেবে এগুলো আপনাকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে যে, এটা টিম স্পোর্ট। মাত্র এগারো জন সুযোগ পেতে পারে।’’
টেস্ট কেরিয়ারের শুরুতেই আকর্ষণীয় রেকর্ড তাঁকে করতে দেখে যেমন অনেকে অবাক হয়ে যাচ্ছেন, তেমন আরও একটা জিনিস কাউকে কাউকে অবাক করছে। তা হল— ৯৪-এ দাঁড়িয়ে থাকার সময় বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি। লং অনে ফিল্ডার ছিল, তবু। এ সব তো এককালে বীরেন্দ্র সহবাগ করতেন! তাঁর মন্ত্রটা কী?
লোকেশের উত্তর শুনলে সহবাগ খুশি হতেন বোধহয়। লোকেশ বললেন, ‘‘অনেক কোচ বলবেন এটা সেঞ্চুরি করার ঠিক রাস্তা নয়। কিন্তু আমার মনে হয়, যখনই কোনও বড় শট আপনি খেলতে যাবেন, শটটা খেলার কথা আগেই আপনাকে ভেবে নিতে হবে। বোলারের বল রিলিজের পর ভাবলে চলবে না। আমি আসলে বোলারের মন নিয়ে খেলছিলাম। রস্টন চেজ ওই বলটার আগে কয়েকটা শর্ট ফেলেছিল। মনে হচ্ছিল, এ বার ও আমাকে ক্রিজ থেকে টেনে বার করতে চাইবে। ছক্কার চেয়েও ওটা তাই আমার কাছে বোলারের মগজের বিরুদ্ধে জিতে যাওয়া ছিল। তা ছাড়া আমি নব্বইয়ের ঘরে খুব একটা থাকতে পছন্দ করি না। চেষ্টা করি, দ্রুত ওখান থেকে বেরনোর।’’ আর এই যে বিরাট কোহালির সামনে ‘প্রবলেম অব প্লেন্টি’ ফেলে তাঁর মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা? তার কী হবে?
লোকেশ এখানেও সহবাগোচিত। ‘‘আমি নিশ্চিত যে বিরাট এই মাথাব্যথাটা উপভোগ করবে! আর আমি লোকটা এ রকমই। লোককে মাথাব্যথা দিতে যে ভালবাসে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy