Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
ICC World Cup 2019

সাতে সাত ভারতের, ম্যাঞ্চেস্টারে ৮৯ রানে ‘বিরাট’ জয় কোহালিদের

প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন পাক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার। মেঘলা আবহাওয়ায় শুরুতেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নেবেন তাঁর বোলাররা।

জয়ের পরে বিরাট কোহালি। ছবি: এএফপি।

জয়ের পরে বিরাট কোহালি। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
ম্যাঞ্চেস্টার শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ১৬:৫৭
Share: Save:

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। রবিবার ম্যাঞ্চেস্টারে বিরাট কোহালির ভারতের কাছে ৮৯ রানে হার মানল পাকিস্তান। এখনও পর্যন্ত সাতটি বিশ্বকাপে দুই প্রতিবেশী দেশের মুখোমুখি সাক্ষাত হয়েছে। সাত বারই জিতল ভারত।

ম্যাঞ্চেস্টারের ভারত-পাক ম্যাচে বৃষ্টির আশঙ্কা ছিল। বৃষ্টির জন্য দু’ বার ম্যাচ বন্ধ হয়। এক বার বিরাট কোহালিরা ব্যাট করার সময়ে। তত ক্ষণে ৪৬.৪ ওভার হয়ে গিয়েছে ভারতের ইনিংসের। দ্বিতীয় বার বৃষ্টি নামে পাকিস্তান ইনিংস চলাকালীন। ৩৫ ওভারে সরফরাজ আহমেদদের রান তখন ৬ উইকেটে ১৬৬। ম্যাচের রাশ চলে এসেছিল ভারতের হাতে। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে খেলা যখন ফের শুরু হল, ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়ম অনুযায়ী পাকিস্তানের দরকার তখন ৫ ওভারে ১৩৬ রান। এই রান তোলা আর সম্ভব ছিল না সরফরাজদের পক্ষে। পাকিস্তান থেমে যায় ২১২ রানে।

বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এতদিন সর্বোচ্চ রান ছিল ৩০০। চার বছর আগের বিশ্বকাপে ভারত এই রান করেছিল। ম্যাঞ্চেস্টারে রোহিত শর্মা-বিরাট কোহালির ব্যাট কথা বলায় টিম ইন্ডিয়া করে পাঁচ উইকেটে ৩৩৬ রান।

ভারতের পাহাড়প্রারমাণ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় পাক শিবির। প্রথম ধাক্কাটা দেন বিজয় শঙ্কর। ইমাম উল হকের উইকেট তুলে নেন তিনি। এদিনই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নামলেন বিজয়। তাঁর প্রথম বলেই ফেরেন ইমাম। ভুবনেশ্বর কুমারের পরিবর্তে কোহালি বল তুলে দিয়েছিলেন বিজয়ের হাতে। বল করার সময়ে পড়ে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান ভুবি। বিশ্বকাপে এখনও অনেক ম্যাচ বাকি ভারতের। ভুবির চোটটা ভারতীয় শিবিরকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।

তবে ভুবির অভাব এ দিন বোধ করতে দেননি কোহালির পেসাররা। ইমাম ফিরে যাওয়ার পরে বাবর আজম ও ফখর জামান পাকিস্তানের ইনিংসগড়ার কাজ করছিলেন। কুলদীপ যাদবের জাদুতে ফেরেন বাবর (৪৮) ও ফখর (৬২)। অভিজ্ঞ মহম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিককে পর পর দু’ বলে ফিরিয়ে ম্যাচের রাশ কোহালির হাতে তুলে দেন হার্দিক পাণ্ড্য। তার পরেই নামে বৃষ্টি। ম্যাচ বন্ধ থাকে বেশ কিছুক্ষণ। খেলা যখন শুরু হল, তখন আর কিছু করার ছিল না পাকিস্তানের।

রবিবার টস জিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন পাক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। রোহিত শর্মার দুরন্ত ১৪০ রান, বিরাট কোহালির ৭৭ রানের সৌজন্যে ভারতই উল্টে চাপে ফেলে দেয় পাকিস্তানকে। রোহিত শর্মা চলতি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় শতরান করে ফেলেন এদিন।

আরও পড়ুন: ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভিউয়ারশিপ পেতে চলেছে আজকের ভারত-পাক ব্লকবাস্টার?

আরও পড়ুন: বিজয়ের বিশ্বকাপ ডেবিউ, দলে তিন পেসার নিয়ে সরফরাজদের মোকাবিলায় বিরাট

সরফরাজের উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার। মেঘলা আবহাওয়ায় শুরুতেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলেন তিনি। সরফরাজের হাতে রয়েছেন মহম্মদ আমিরের মতো ভয়ঙ্কর বোলার। দু’ বছর আগের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে আমির একাই ভারতের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিলেন। এদিন অবশ্য নতুন দিন। ভিন্ন টুর্নামেন্ট। শুরুতেই ভারতের ব্যাটিং ভাঙার আশা পূর্ণ হয়নি পাক অধিনায়কের। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল পাক বোলিংয়ের শুরুর বিষ শুষে নেন। প্রথম উইকেটে রোহিত ও রাহুল ১৩৬ রান করেন।

শিখর ধওয়ন চোট পেয়ে আগেই ছিটকে গিয়েছেন। ওপেনিংয়ে রোহিতের নতুন পার্টনার রাহুল। শুরুর দিকে বোঝাপড়ায় দু’ জনের সামান্য সমস্যা হচ্ছিল। বিশেষ করে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে। একবার তো রোহিত প্রায় রান আউট হতে বসেছিলেন। পরে অবশ্য দু’ জনেই দু’ জনের চোখের ভাষা বুঝতে পারেন। রোহিতের কলে ঠিকঠাক সাড়া দেন রাহুল। লোকেশ রাহুল দারুণ প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। কিন্তু দায়সারা ভাবে উইকেট ছুড়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এদিনও উইকেটে জমে যাওয়ার পরে বাবর আজমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন রাহুল (৫৭)।

রোহিত অন্যদিকে নিজের ছন্দে ব্যাট করে যান। হাসান আলিকে পুল করে গ্যালারিতে ফেলেন ‘হিটম্যান’। রোহিতের ওই পুলে ছিল ঔদ্ধত্য। শাদাব খানের ফুলটস অবলীলায় পাঠালেন মাঠের বাইরে। ওয়াহাব রিয়াজকে অফ সাইডে যে শটটায় ছক্কা হাঁকালেন, তা ক্রিকেটপ্রেমীদের নিয়ে গেল ২০০৩ সালের সেঞ্চুরিয়নে। সে বারও একই ভঙ্গিতে শোয়েব আখতার ও ওয়াকার ইউনিসকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর ও বীরেন্দ্র সহবাগ।রোহিত ফেরেন ১৪০ রান করে। আউট হওয়ার পরে তাঁকে বেশ বিরক্তই দেখায়। শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়াহাব রিয়াজ। সেই জায়গা দিয়েই বাউন্ডারি মারতে চেয়েছিলেন রোহিত। টাইমিং ঠিকঠাক না হওয়ায় ওয়াহাবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুম্বইকর।

ভারতের রান তখন দু’ উইকেটে ২৩৪। দ্রুত রান তোলার জন্য পাঠানো হয় হার্দিক পাণ্ড্যকে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এরকম পরিস্থিতিতেই নামানো হয়েছিল তাঁকে। এ দিন দ্রুত ২৬ রান করে ফেরেন পাণ্ড্য। তিনি যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন স্ট্রাইক রোটেট করছিলেন কোহালি। পাণ্ড্য ফিরতেই কোহালি স্বমহিমায় ধরা দেন। ধোনি (১) নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ৪৬.৪ ওভারে বৃষ্টি নামে। খেলা বন্ধ থাকে। ম্যাচ শুরু হওয়ার পরে ভারত অধিনায়ককে ৭৭ রানে ফেরান আমির। বিজয় শঙ্কর (১৫) ও কেদার যাদব (৯) শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যান।

জিততে হলে পাকিস্তানকে পাহাড় ডিঙোতে হত। পাক ব্যাটসম্যানরা হারাকিরি করে বসেন। ভুল শট নির্বাচন করে উইকেট ছুড়ে দেন তাঁরা। পরে বৃষ্টি পাকিস্তানকে ছিটকে দেয় ম্যাচ থেকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ৩৩৬/৫ (৫০ ওভার)

পাকিস্তান ২১২/৬ (৪০ ওভার)

ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ভারত জেতে ৮৯ রানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE