আগ্রাসী: ৭৮ বলে দুরন্ত ১১৩ ধোনির। ছবি: এএফপি।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে জয়ের পরে একটা ব্যাপার নিশ্চিত হয়ে গেল। সেটা হল, বিশ্বকাপের প্রথম কয়েকটি ম্যাচের জন্য ভারতের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের নাম। এই পাঁচ হল— শিখর ধওয়ন, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহালি, কে এল রাহুল এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
বিশ্বকাপের অনেক আগে থেকেই একটা প্রশ্ন নিয়ে নাজেহাল হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। চার নম্বরে কে ব্যাট করবে। মঙ্গলবার কার্ডিফে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করে রাহুল সেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিল। শুধু সেঞ্চুরি করাই নয়, ভারত যখন চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছে, তখন ধোনির সঙ্গে হালটা ধরল রাহুলই।
আরও একটা ব্যাপার স্বস্তি দিতে পারে অধিনায়ক কোহালিকে। এত দিন বলা হচ্ছিল, ভারতের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান রান করতে না পারলে মিডল অর্ডার এবং লোয়ার মিডল অর্ডার সেই চাপটা সামলাতে পারে না। এ দিন উল্টোটাই ঘটল। ১০২ রানের মধ্যে চার উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে ভারতের মিডল অর্ডারই দলের হাল ধরল। স্কোর পৌঁছে দিল ৩৫৯ রানে। জবাবে বাংলাদেশ থেমে গেল ২৬৪ রানে। শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ভারত জিতল ৯৫ রানে।
রাহুলকে নিয়ে এত দিন বলা হত, ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের হয়ে ও যত সফল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ততটা নয়। এ দিন কিন্তু ক্লাসিকাল রাহুলকে দেখলাম। নিখুঁত ফুটওয়ার্ক, দারুণ সব শট। ৯৯ বলে ১০৮ রানের মধ্যে কর্তৃত্বের ছাপটা স্পষ্ট ছিল।
ধোনি সম্পর্কে আর কী বলব? অনেক দিন বাদে সেই পুরনো ধোনিকে পেলাম। ৭৮ বলে ১১৩ করল। প্রথম থেকেই শট খেলতে লাগল। শুরুর দিকে বল নষ্ট করল না একেবারেই। ধোনির মারা সাতটি ছয়ের মধ্যে একটা তো মাঠের বাইরে গিয়ে পড়ল। বল আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। আইপিএল থেকেই ভাল ছন্দে আছে ধোনি। বিশ্বকাপেও এই ছন্দটা ধরে রাখতে পারলে, কোহালির রাতের ঘুম অনেক ভাল হবে। এই রকম ইনিংস কয়েকটা খেলা মানে, স্কোরবোর্ডে জয়ের রান উঠে যাওয়া।
নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচের পরে ভারতীয় শিবিরে ব্যাটিং নিয়ে যা দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছিল, বাংলাদেশ ম্যাচের পরে সেটা কিছুটা দূর হল। কিছুটা বলছি, কারণ ওপেনারদের নিয়ে আমার চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে ইংল্যান্ড, ওয়েলসের মাঠে এই সব প্রস্তুতি ম্যাচ দেখে একটা কথা মনে হচ্ছে। বিশ্বকাপেও হয়তো প্রথম দিকে পেসাররা একটু সুবিধে পাবে। বল সুইং করবে। প্রথম দশটা ওভার সামলে দিতে পারলে কিন্তু বাকি চল্লিশটা ওভার থাকবে ব্যাটসম্যানদের জন্য। তখন রানের গতি অনেক বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু তার জন্য আমাদের ওপেনারদের প্রথম ১০টা ওভার তো সামলাতে হবে।
আগের দিন নিউজ়িল্যান্ড এবং এ দিন কার্ডিফে দেখলাম, বল সুইং করলেই অস্বস্তিতে পড়ছে ধওয়ন এবং রোহিত। ধওয়ন তো দুটো ম্যাচেই তাড়াতাড়ি ফিরে গেল। রোহিত এ দিন ৪২টা বল খেললেও ছন্দে ছিল না। ধওয়নের ফুটওয়ার্কও সুইং সামলানোর পক্ষে উপযুক্ত নয়। নিষ্প্রাণ পিচ হলে অবশ্য ছবিটা বদলে যাবে। তিন নম্বরে কোহালি নামার পরে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের হাল কিছুটা ফেরে। যখন মনে হচ্ছিল, কোহালি বড় রানের দিকে এগোচ্ছে, ও ফিরে গেল। তবে যতটুকু দেখলাম, তাতে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে কোহালি ছন্দেই আছে।
প্রস্তুতি ম্যাচে জয় বা হারটা কখনও সে রকম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে দেখতে হয়, আসল প্রতিযোগিতা শুরুর আগে দল কতটা গুছিয়ে নিতে পারল। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতকে দেখে বলে দেওয়া যায়, একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গিয়েছে। সেটা হল, চার নম্বরে কে খেলবে। কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
যেমন, প্রথম ১০ ওভারে বল সুইং করলে কি ভারতীয় ওপেনাররা তা সামলাতে পারবে? দুই, ভারতীয় ব্যাটিংয়ে ছয় নম্বরে কে নামবে? ছয় নম্বর জায়গাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেদার যাদব এখনও সুস্থ হতে পারল না। এ দিন বিজয় শঙ্করকেও যথেষ্ট নড়বড়ে দেখাল। তা হলে কি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট চাইছে, সরাসরি কেদারকে বিশ্বকাপে মাঠে নামিয়ে দেবে? সেটা বড় ঝুঁকির হয়ে যাবে।
ভারতের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হচ্ছে ৫ তারিখ, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে। যে ম্যাচের জন্য আমার প্রথম একাদশ এ রকম: ধওয়ন, রোহিত, কোহালি, রাহুল, ধোনি, শঙ্কর, হার্দিক, চহাল, কুলদীপ, শামি, বুমরা। কেউ কেউ বলতে পারেন, কেন রবীন্দ্র জাডেজা নয়? আমার মতে, দু’জন রিস্ট স্পিনার খেলাতেই হবে। অনেক দিন বাদে কুলদীপকে ভাল করতে দেখলাম। বাংলাদেশের তিন উইকেট তুলে নিল ৩৯ রানে। চহালও নিল তিন উইকেট। এই জুটিকে ভাঙার কোনও মানে নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy