নজরে: প্রথম একাদশে থাকার দাবি জোরাল করলেন জাড্ডু। এএফপি
বিশ্বকাপে ভারতের গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হল রবীন্দ্র জাডেজাকে। আর প্রথম অডিশনেই সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হল বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার। অবশ্যই চাইব সেমিফাইনালে জাডেজাকে যেন কোনও ভাবেই বাইরে রাখার কথা ভাবা না হয়।
প্রশ্ন উঠবে কেন খেলবে জাডেজা? কারণ, অবশ্যই ওর দুরন্ত বোলিং এবং ক্ষুরধার ফিল্ডিং। শনিবার হেডিংলেতে ১০ ওভার বল করেছে। মাত্র চল্লিশ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছে। অর্থাৎ ওভার প্রতি চার রান করে দিয়েছে বাঁ-হাতি স্পিনার।
সাধারণত বাঁ-হাতি স্পিনারের বিরুদ্ধে সমস্যায় পড়ে ডান-হাতি ব্যাটসম্যানেরা। ওদের বাইরের দিকে বল ঘোরে। কিন্তু জাডেজা আরও ভয়ঙ্কর হওয়ার কারণ রয়েছে। সব সময় চেষ্টা করে উইকেটের সোজাসুজি বল রাখার। সেখান থেকে একটি বল ঘুরবে। একটি হাতের তালুর সাহায্যে ভিতরের দিকে ঢুকবে। সব চেয়ে ভাল উদাহরণ ওর প্রথম ওভার। শ্রীলঙ্কার উঠতি তারকা কুশল মেন্ডিসের বিরুদ্ধে জাডেজার প্রথম বল ঢুকে এল ব্যাটসম্যানের ভিতরের দিকে। কোনও রকমে ডিফেন্ড করে এলবিডব্লিউ হওয়ার থেকে বাঁচে কুশল। ও ধরেই নেয় পাঁচ ওভার পুরনো বল ঘুরবে না। হয়তো জাডেজা ঘোরানোর চেষ্টাও করবে না। ওভারের চতুর্থ বলেই কুশল ভুল প্রমাণিত হয়। উইকেটের সোজাসুজি বল স্টেপ আউট করে খুচরো রান সংগ্রহ করতে যায় কুশল। কিন্তু সেখান থেকেই কুশলের বাইরের দিকে বল ঘোরে। যা অনায়াসে স্টাম্পড করে দেয় মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
বাকি ওভারগুলোতেও আহামরি রান দেয়নি জাডেজা। বাঁ-হাতি স্পিনারের এটাই মাহাত্ম্য। ওরা ম্যাচ ধরার কাজ করে। অথচ লেগস্পিনার কিন্তু রান আটকানোর কাজটি করে না। ওদের দায়িত্ব উইকেট তোলার।
এ বার আসব জাডেজার ফিল্ডিংয়ে। প্রথম পাওয়ারপ্লে-তে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়িয়ে দিমুথ করুণারত্নে, কুশল পেরেরা ও আবিষ্কা ফের্নান্দোর উপর যে চাপ ও সৃষ্টি করেছিল, তার জন্যই উইকেট ছুড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে এই ত্রয়ী। প্রত্যেকেই স্কোয়ার অব দ্য উইকেটের ভাল ব্যাটসম্যান। কিন্তু পয়েন্টে জাডেজা দাঁড়িয়ে থাকায় বেশ কয়েকটি স্কোয়ার কাটে এই ত্রয়ী রান পায়নি। যার ফলে চাপে বাড়তে থাকে। বুমরাকে কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয় করুণারত্নে। হার্দিকের স্লোয়ার বাউন্সার বুঝতে না পেরে আপার কাট করতে গিয়ে ফিরে যায় ফের্নান্দো। বুমরার আউটসুইংয়ে (বাঁ-হাতির ক্ষেত্রে ইনসুইং) পরাস্ত হয়ে ফিরতে হয় কুশল পেরেরাকে। সব সময়েই বলে থাকি জাডেজা খেললে ভারত অতিরিক্ত ২০ রান নিয়ে খেলতে নামে। ভারতীয় অলরাউন্ডারের একারই ২০ রান বাঁচিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ পড়বে ম্যাঞ্চেস্টারে। প্রতিযোগিতার শেষের দিকে সেখানে উইকেট শুষ্ক থাকবে। প্রথম একাদশ কী হবে তা অবশ্যই ঠিক করবে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে জাডেজার অবশ্যই খেলা উচিত। সঙ্গে আরও দু’টি পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রথমটি দীনেশ কার্তিকের পরিবর্তে কেদার যাদব। দ্বিতীয়টি কুলদীপ যাদবের পরিবর্তে যুজবেন্দ্র চহাল।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, ব্যর্থ হওয়ার পরেও কেন কেদারকে দলে চাইছি? শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন বোলার ও দুই অলরাউন্ডার নিয়ে খেলেছে ভারত। চলতি বিশ্বকাপে দেখা গিয়েছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইন-আপ সে রকম শক্তিশালী নয়। তাই ষষ্ঠ বোলারের কোনও প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু নিউজ়িল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপ অত্যন্ত শক্তিশালী। ওদের বিরুদ্ধে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি এমন একজনকে নেওয়া উচিত যে চার থেকে পাঁচ ওভার বল করে দিতে পারবে। তাই কেদারই একমাত্র বিকল্প। সীমিত সুযোগে খুব একটা খারাপ কিন্তু খেলেনি কেদার। একটি হাফসেঞ্চুরিও আছে। সেই সঙ্গে দ্রুত উইকেট তোলার ক্ষমতাও ওর রয়েছে।
এ বার আসা যাক কেন কুলদীপের পরিবর্তে চহাল! আইপিএল থেকেই দেখে আসছি ভারতীয় চায়নাম্যানকে খেলতে কারও অসুবিধা হচ্ছে না। এখন আর বিস্ময় স্পিনার হিসেবে ওকে দেখা হয় না। চহাল কিন্তু আর যা-ই করুক, সময় মতো উইকেট তুলে নেওয়ার কাজ করেছে। চহালের উইকেট সংখ্যা ১১। সেখানে কুলদীপের ছয়। পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই জায়গাতেই।
এ বার আসা যাক দুই ভারতীয় ওপেনারের বিষয়ে। আজ পর্যন্ত একই বিশ্বকাপে পাঁচটি সেঞ্চুরি কারও নেই। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রোহিত সেঞ্চুরি করে কিন্তু বিশ্বরেকর্ড গড়ে দিল। ছুঁয়ে ফেলল সচিন তেন্ডুলকরের ছয় সেঞ্চুরি করার েরকর্ডও। কে এল রাহুলও কিন্তু অন্যান্য ম্যাচের চেয়ে এ দিন আগ্রাসী শুরু করেছে। চাইব সেমিফাইনালেও যেন একই রকম শুরুটা করতে পারে রাহুল-রোহিত জুটি।
স্কোরকার্ড
শ্রীলঙ্কা ২৬৪-৭ (৫০)
ভারত ২৬৫-৩ (৪৩.৩)
শ্রীলঙ্কা
দিমুথ ক ধোনি বো বুমরা ১০•১৭
কুশল ক ধোনি বো বুমরা ১৮•১৪
আবিষ্কা ক ধোনি বো হার্দিক ২০•২১
মেন্ডিস স্টাঃ ধোনি বো জাডেজা ৩•১৩
অ্যাঞ্জেলো ক রোহিত বো বুমরা ১১৩•১২৮
তিরিমানে ক জাডেজা বো কুলদীপ ৫৩•৬৮
ধনঞ্জয় ন. আ. ২৯•৩৬
থিসারা ক হার্দিক বো ভুবনেশ্বর ২•৩
উড়ান ন. আ. ১•১
অতিরিক্ত ১৫
মোট ২৬৪-৭(৫০)
পতন: ১-১৭ (দিমুথ, ৩.৪), ২-৪০ (কুশল, ৭.১), ৩-৫৩ (মেন্ডিস, ১০.৪), ৪-৫৫ (আবিষ্কা, ১১.৪), ৫-১৭৯ (থিরিমানে, ৩৭.৫), ৬-২৫৩ (অ্যাঞ্জেলো, ৪৮.২), ৭-২৬০ (থিসারা, ৪৯.২)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ১০-০-৭৩-১, যশপ্রীত বুমরা ১০-২-৩৭-৩, হার্দিক পাণ্ড্য ১০-০-৫০-১, রবীন্দ্র জাডেজা ১০-০-৪০-১, কুলদীপ যাদব ১০-০-৫৮-১।
ভারত
রাহুল ক কুশল বো মালিঙ্গা ১১১•১১৮
রোহিত ক অ্যাঞ্জেলো বো রজিত ১০৩•৯৪
কোহালি ন. আ. ৩৪•৪১
ঋষভ এলবিডব্লিউ বো উড়ান ৪•৪
হার্দিক ন. আ. ৭•৪
অতিরিক্ত ৬ মোট ২৬৫-৩ (৪৩.৩)
পতন: ১-১৮৯ (রোহিত, ৩০.১), ২-২৪৪ (রাহুল, ৪০.৬), ৩-২৫৩ (ঋষভ, ৪১.৬)।
বোলিং: লাসিথ মালিঙ্গা ১০-০-৮২-১, কাসুন রজিত ৮-০-৪৭-১, ইসুরু উড়ান ৯.৩-০-৫০-১, থিসারা পেরেরা ১০-০-৩৪-০, ধনঞ্জয় ডি সিলভা ৬-০-৫১-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy