সেরা: অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপ জিতে ভারতীয় দল। ঢাকায়। টুইটার
কাজ ফাঁকি দিয়ে ঘুমনোর অজুহাতে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল মুম্বইয়ের কলবাদেবীর এক দুধের কারখানা থেকে। দিশাহারা যুবকটি তখন আশ্রয় নেয় আজাদ ময়দানে, মুসলিম ইউনাইটেড ক্লাব তাঁবুতে। বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন চোখে নিয়ে সেই তাঁবুই হয়ে ওঠে যে যুবকের লড়াইয়ের মঞ্চ, সেই যুবকই রবিবার ঢাকার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দেশকে এনে দিল এশিয়া সেরার খেতাব। যশস্বী জায়সবাল।
ভারতকে অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে তোলার পরে রবিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৭ বছরের এই লড়াকু যুবকই হয়ে ওঠে ভারতের ১৪৪ রানে জয়ের অন্যতম প্রধান কারিগর। একটি সেঞ্চুরি (১০৪), ৯২ ও এ দিন ৮৫ রানের ইনিংস খেলে পাঁচ ম্যাচে মোট ৩১৮ রান করে প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটারের খেতাবও জিতে নিল উত্তরপ্রদেশের এক অচেনা গ্রাম থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের মূলস্রোতে উঠে আসা তরুণ যশস্বী। এ যেন আর এক পৃথ্বী শ-র কাহিনি।
সামান্য নির্মানসামগ্রীর দোকানের কর্মীর পুত্র হঠাৎ মুম্বইয়ে এসে পড়লে যা হয়, তা-ই হয়েছিল যশস্বীর সঙ্গে। মুম্বইয়ে লোকাল ট্রেনে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে রোজ দাদার থেকে আজাদ ময়দানে যাতায়াত করে ক্রিকেট শিখতে আসা বিধ্বস্ত যশস্বী বাধ্য হয়ে কলবাদেবীর সেই দুধ-কারখানায় চাকরি জোগাড় করে বটে। কিন্তু সারা দিন অনুশীলন, ম্যাচের পরে সেখানে ফিরে আর কাজ করার ক্ষমতা থাকত না তার। রাত না হতেই চোখ বুজে আসত। কয়েক দিনের মধ্যেই গলা ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে বার করে দেওয়া হয় তাকে।
ক্রিকেটের জন্য দু’হাজার টাকা বেতনের চাকরি হারানো যুবক আশ্রয় নেয় ক্রিকেট মাঠেই। মুসলিম ইউনাইটেড ক্লাবের মালিরা তাঁবুতেই আশ্রয় দেন অসহায় যশস্বীকে। বদলে ফুচকা, ফলও বিক্রি করতে হয় তাকে। বছর তিনেক এ ভাবেই চলে তার জীবনযুদ্ধ। যত দিন না নেটে জ্বালা সিংহের চোখে পড়ে সে।
এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে জাহির খানের সতীর্থ জ্বালা রবিবার রাতে যশস্বীর এই লড়াইয়ের কাহিনি শুনিয়ে মুম্বই থেকে ফোনে বলেন, ‘‘যে পিচে ব্যাট করা কঠিন, সে রকম এক উইকেটে ছেলেটাকে ভাল ব্যাট করতে দেখে মনে হয়, এর মধ্যে বড় হওয়ার মশলা আছে।’’ তিনিই বছর ১৫-র শান্ত ছেলেটিকে তাঁবুর অন্ধকার থেকে আলোয় এনে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেন ।
জ্বালা বলেন, ‘‘ওর লড়াইয়ের কথা শুনে আমি ওর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলাম। আমার জীবনেও এমনই ঘটেছিল। তার পর থেকেই ওকে নিয়ে আমার লড়াই শুরু হয়। প্রথমে ওকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে তৈরি করি। তার পরে নামাই হ্যারিস শিল্ডে। এই প্রতিযোগিতায় ৫০টার ওপর সেঞ্চুরি করেছে ও। একটা ম্যাচে সাড়ে তিনশোও রানও ছিল। তার পরেই মুম্বই অনূর্ধ্ব ১৬ দলে ডাক আসে। তার পরে যুব ভারতীয় দলে। এই লড়াইটা শুধু ওর নয়। আমারও ছিল।’’ মুম্বই যুব দলের কোচ সতীশ সামন্তও বলেন, ‘‘যশস্বী যখন আমার কাছে আসে, তখন ও অনেকটা তৈরি। আমার কাজ ছিল ওকে পরের স্তরে পৌঁছে দেওয়া। মনে হচ্ছে, পেরেছি।’’
রবিবার ঢাকায় ওপেনার যশস্বী ১১৩ বলে ৮৫ রান করে ভারতকে ৩০৪ রান তুলতে সাহায্য করে। অনুজ রাওয়াত (৭৯), প্রভ সিমরন সিংহ (অপরাজিত ৬৫) ও আয়ূষ বাদোনিরাও (৫২) ঝো়ড়ো ইনিংস খেলে। দিল্লির বাঁহাতি স্পিনার হর্ষ ত্যাগী ৩৮ রানে ছ’উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার (১৬০ অল আউট) ব্যাটিংয়ে ধস নামায়।
এই ম্যাচই হয়তো হয়ে উঠল যশস্বীর ক্রিকেট জীবনের প্রথম মাইলফলক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy