অভিনন্দন: ইংল্যান্ডের জস বাটলারকে আউট করার পরে জাডেজা ও কোহালির উচ্ছ্বাস। বাটলারকে শুভেচ্ছা বিরাটের। এএফপি, রয়টার্স
শুরুতে শামি, ইশান্ত, বুমরাদের বিধ্বংসী বোলিং ভেঙে দিচ্ছে বিপক্ষের ‘টপ অর্ডার’ অর্থাৎ প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের। তার পরে ‘টেল এন্ডার’ বা শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের আউট করাই যাচ্ছে না। সেই ফাঁকেই স্কোরবোর্ডে জুড়ছে অনেকটা রান। যা গড়ে দিচ্ছে ফারাক। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলতি টেস্ট সিরিজে এটাই সার কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই জায়গাতেই বার বার হেরে যাচ্ছে ভারত।
বার্মিংহামের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৭ রানে সাত উইকেট চলে গিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে স্যাম কারেন নিজে ৬৩ রান করে ইংল্যান্ডকে পৌঁছে দেন ১৮০ তে। আর সেখানেই ফারাকটা তৈরি হয়ে ম্যাচ হারে ভারত। লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ১৩১-৫ হয়ে যাওয়ার পরেও ক্রিস ওকস, জনি বেয়ারস্টো ইংল্যান্ডকে পৌঁছে দেন ৩৯৬-৭ স্কোরে। সেটাও ফারাক গড়ে দেয়। নটিংহ্যামে ভারত জিতে সিরিজ ১-২ করলেও, সেখানেও ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রানে চার উইকেট হয়ে যাওয়ার পরেও জস বাটলারের শতরানের দৌলতে তাঁদের ইনিংস শেষ হয় ৩১৭ রানে গিয়ে। আগের টেস্টে সাউদাম্পটনে দারুণ শুরু করে ভারতীয় পেসাররা ৮৬ রানে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ছয় ব্যাটসম্যানকে। সেখান থেকে ফের সেই স্যাম কারেন ও মইন আলি ইংল্যান্ডের ইনিংস টেনে নিয়ে যান ২৪৬ রানে। ওভাল টেস্টেও সেই একই ছবি। ১৮১ রানে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সাত উইকেট চলে গিয়েছে। সেখান থেকে ফের সেই জস বাটলার (৮৯) ও স্টুয়ার্ট ব্রডের (৩৮) কাঁধে চেপে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস শেষ করল ৩৩২ রানে।
বিদেশ সফরে গিয়ে অতীতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের এই অভিজ্ঞতা প্রচুর হয়েছে। আমার ছিয়াশির অস্ট্রেলিয়া সফরের একটা কথা মনে পড়ছে। সে বার আমি দলে ছিলাম। মেলবোর্নে ম্যাচটা জেতার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু অ্যালান বর্ডার ঠিক শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দেড় ঘণ্টা কাটিয়ে দিলেন। বৃষ্টি চলে আসায় আর জেতা হয়নি ভারতের।
কপিল দেবের দলের সেই ভারতীয় দলের সঙ্গে এই ভারতীয় দলের পরিকাঠামোয় আকাশ-পাতাল তফাত। এখন অনেক প্রযুক্তি, সাপোর্ট স্টাফ দলের সঙ্গে। কিন্তু তার পরেও এই একই ব্যাপার বার বার ঘটবে কেন? আমার মতে অনিল কুম্বলে অবসর নেওয়ার পরে এই ‘টেল এন্ডার’ আউট করার সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে ভারতের। চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্রিসবেনে মিচেল জনসন আর স্টিভ স্মিথ মিলে সপ্তম উইকেটে ১৪৮ রানের জুটি তৈরি করেছিলেন। ২০১১ সালেও লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ড ১০৭-৬ হয়ে যাওয়ার পরেও সপ্তম উইকেটে ম্যাট প্রায়র ও এই স্টুয়ার্ট ব্রড মিলেই ১৬২ রান যোগ করেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: কোহালির পর টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন হতে পারেন এঁরা
কেন এই ঘটনা বার বার ঘটছে, সে ব্যাপারে আমার ব্যাখ্যা হতে পারে দু’টি। এক, হয়তো বোলাররা শেষের দিকে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। না হলে আত্মতুষ্টি গ্রাস করছে ওদের। বুঝতে হবে, সাত উইকেট নিলেই খেলা শেষ হয় না। জিততে গেলে তার পরে তিনটে উইকেটও দ্রুত ফেলতে হবেই। আমার মতে এই সমস্যা ক্রিকেটীয় নয়। কারণটা হয়তো মানসিক। আমাদের ছেলেরা বল হাতে আক্রমণ করছে ক্রিজে এসে থিতু না হওয়া ব্যাটসম্যানকে। ফলে সেট হওয়া ব্যাটসম্যান পঞ্চম বলে চার বা ছয় মেরে শেষ বলে খুচরো রান নিয়ে ফের স্ট্রাইক নিচ্ছেন। আঘাত করতে হবে ওই ‘সেট’ হওয়া ব্যাটসম্যানকেই।
বোলিং নিয়ে বলতে গিয়ে আবার দেখছি ব্যাটিং সেই ভেঙে পড়েছে ওভালে। ব্যাটিং নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। এই ভারতীয় দলে যেন বিরাট কোহালিকেই রোজ বিপক্ষকে মেরে রান করার সব দায়িত্ব নিতে হবে। বুঝে পাই না, এই সিরিজে একজন ভারতীয় ওপেনারও সেঞ্চুরি করতে পারেননি। তা হলে মিডল অর্ডারে তো চাপ বাড়বেই। একা বিরাট কতটা টানবেন? চেতেশ্বর (৩৭), অজিঙ্ক (০) এ দিনও আউট হলেন বলের কাছে ব্যাট ও শরীর না নিয়ে শট মারতে গিয়ে। কারেন, ব্রড, অ্যান্ডারসনরা সেই সুযোগটাই নিয়েছেন ওভাল টেস্টেও। সেই বিরাটের ৪৯ রানই ভারতীয় ইনিংসে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। বাকিরা বড় রান না পাওয়ায় দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের রান ১৭৪-৬।
ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের রানের চেয়ে এখনও ভারত পিছিয়ে ১৫৮ রানে। ফিরে গিয়েছেন বিরাট। হাতে রয়েছে চার উইকেট। ফলে ফের সেই হারের আতঙ্ক উঁকি মারতে শুরু করেছে ওভালের মাঠেও।
স্কোরকার্ড
ইংল্যান্ড ৩৩২
ভারত ১৭৪-৬
ইংল্যান্ড (আগের দিন ১৯৮-৭-এর পর থেকে প্রথম ইনিংস)
জস বাটলার ক রাহানে বো জাডেজা ৮৯
স্যাম কারেন ক পন্থ বো ইশান্ত ০
আদিল রশিদ এলবিডব্লিউ বো বুমরা ১৫
স্টুয়ার্ট ব্রড ক রাহুল বো জাডেজা ৩৮
জেমস অ্যান্ডারসন ন. আ. ০
অতিরিক্ত ৩৫
মোট ৩৩২
পতন: ১-৬০ (জেনিংস, ২৩.১), ২-১৩৩ (কুক, ৬৩.২) ৩-১৩৩ (রুট, ৬৩.৫), ৪-১৩৪ (বেয়ারস্টো, ৬৪.৪), ৫-১৭১ (স্টোকস, ৭৭.৫), ৬-১৭৭ (মইন, ৮২.৩), ৭-১৮১ (কারেন, ৮২.৫), ৮-২১৪ (রশিদ, ৯৭.১), ৯-৩১২ (ব্রড, ১১৭.৩), ১০-৩৩২ (বাটলার, ১২১.৬)।
বোলিং: যশপ্রীত বুমরা ৩০-৯-৮৩-৩, ইশান্ত শর্মা ৩১-১২-৬২-৩, হনুমা বিহারী ১-০-১-০, মহম্মদ শামি ৩০-৭-৭২-০, রবীন্দ্র জাডেজা ৩০-০-৭৯-৪।
ভারত (প্রথম ইনিংস)
কে এল রাহুল বো কারেন ৩৭
শিখর ধওয়ন এলবিডব্লিউ বো ব্রড ৩
পূজারা ক বেয়ারস্টো বো অ্যান্ডারসন ৩৭
বিরাট কোহালি ক রুট বো স্টোকস ৪৯
অজিঙ্ক রাহানে ক কুক বো অ্যান্ডারসন ০
হনুমা বিহারী ব্যাটিং ২৫
ঋষভ পন্থ ক কুক বো স্টোকস ৫
রবীন্দ্র জাডেজা ব্যাটিং ৮
অতিরিক্ত ১০
মোট ১৭৪-৬
পতন: ১-৬ (ধওয়ন, ১.১), ২-৭০ (রাহুল, ২২.১), ৩-১০১ (পূজারা, ৩২.৫), ৪-১০৩ (রাহানে, ৩৪.৫), ৫-১৫৪ (কোহালি, ৪৬.২), ৬-১৬০ (পন্থ, ৪৮.৩)।
বোলিং: জেমস অ্যান্ডারসন ১১-৩-২০-২, স্টুয়ার্ট ব্রড ১১-৩-২৫-১, বেন স্টোকস ১১-১-৪৪-২, স্যাম কারেন ১০-১-৪৬-১, মইন আলি ৮-০-২৯-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy