দ্বৈরথ: এ ভাবেই শনিবার সাফ কাপ ফাইনালে বারবার মলদ্বীপের কাছে আটকে গেল ভারত। ছবি: এআইএফএফ।
মলদ্বীপ ২ • ভারত ১
অবিশ্বাস্য! সাফ কাপ ফাইনালে মলদ্বীপের কাছে ভারত হারছে, এর চেয়ে লজ্জার কিছু হয় না। এই ব্যর্থতার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী ভারতের কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন। কোচিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা নিয়ে ব্রিটিশ কোচ আমাদের ঠকিয়ে চলেছেন। অবিলম্বে স্টিভনকে বরখাস্ত করা উচিত সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১৯ মিনিটে ইব্রাহিম হোসেন গোল করে মলদ্বীপকে এগিয়ে দেওয়ার পরেই বুঝে গিয়েছিলাম, ভারতের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। কারণ, ফুটবলের প্রাথমিক জ্ঞানটাই নেই কারও। ডিফেন্ডারেরা জানেই না কোথায় দাঁড়াতে হয়। বিপক্ষের ফুটবলারকে কী ভাবে আড়াআড়ি কভার করতে হয়। ভাবতে পারেন, জাতীয় দলের ডিফেন্ডারেরা বল বিপন্মুক্ত করছে হাঁটু দিয়ে! মলদ্বীপের মিডফিল্ডারেরা পুরো ম্যাচ মাত্র দু’টো থ্রু পাস বাড়িয়েছিল। আর তা থেকেই গোল দু’টো হয়। অবাক হয়ে দেখলাম, ভারতীয় দলে এমন এক জনও ফুটবলার নেই, যার পায়ে দুর্দান্ত ড্রিবল বা শট রয়েছে।
মলদ্বীপের বিরুদ্ধে ৪-৪-২ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন ভারতের কোচ। চার জন মিডফিল্ডারের কেউ-ই বল ধরে খেলতে পারে না। শুধু তাই নয়। রক্ষণ ও আক্রমণ ভাগের সঙ্গে মাঝমাঠের কোনও বোঝাপড়াই নেই। না ছিল উইং দিয়ে আক্রমণ বা থার্ড ম্যান মুভ। ১৯ মিনিটে গোল খেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার পরেও ঘুরে দাঁড়ানোর বাড়তি তাগিদ দেখলাম না মনবীর সিংহদের মধ্যে। তা হলে কোচ হিসেবে স্টিভন এত দিন ধরে কী করেছেন? এই প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নিতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল ভারতীয় দল। কী যে প্রস্তুতি হয়েছে, তা সাফ কাপের ফাইনালেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ৬৬ মিনিটে আলি ফয়জলের গোলের সময়েও ঠিক জায়গায় ছিল না ডিফেন্ডারেরা।
অনেকে হয়তো যুক্তি দেবেন, স্টিভনের কোচিংয়ে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারত ৯৬ নম্বরে উঠে এসেছে। আমার কাছে এই র্যাঙ্কিংয়ের কোনও গুরুত্ব নেই। যদি থাকত, তা হলে ১৫০ নম্বরে থাকা মলদ্বীপ কিন্তু ভারতকে হারাতে পারত না। স্টিভন যদি ভারতকে বিশ্বকাপের মূল পর্বে তুলতেন, তা হলে বুঝতাম। আমার মতে স্টিভন কোনও কোচই নন। কোচিং দক্ষতায় ওঁর চেয়ে অনেক এগিয়ে সুভাষ ভৌমিক, আর্মান্দো কোলাসোরা। কোচ হিসেবে আমিও ভারতের সব ট্রফি জিতেছি। আমরা জানি, কোন দলের বিরুদ্ধে কী ধরনের পরিকল্পনা নিতে হয়। সাফ কাপ ফাইনালে মলদ্বীপের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের খেলায় কোনও পরিকল্পনার ছাপই চোখে পড়েনি। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, আধুনিক ফুটবলে ডেড বল সিচুয়েশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্নার ও ফ্রি-কিক নেওয়া হয় অনেক হিসেব করে। ব্যতিক্রম স্টিভনের ভারতীয় দল। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে সুমিত পাসি যে গোলটা করল, তা পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা।
তবে পাঁচ লক্ষের কম জনসংখ্যার দেশ মলদ্বীপের কাছে এই জয়টা অবশ্যই স্মরণীয়। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার সাফ কাপ জিতল মলদ্বীপ। দু’বারই ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে। মলদ্বীপের কৃতিত্বকে একটুও খাঁটো না করে বলছি, কলকাতা লিগে প্রথম ডিভিশনের দলগুলোর মতোই মান ওদের। তা সত্ত্বেও আমরা জিততে পারলাম না স্টিভনের মতো কোচ থাকায়।
অবশ্য ভারতীয় ফুটবলের এই দুর্দশার জন্য একা স্টিভন নন, ফেডারেশন সভাপতি প্রফুল্ল পটেল, সচিব কুশল দাসও সমান ভাবে দায়ী। অতীতে ভারতীয় কোচেরা ব্যর্থ হলেই তাঁদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। অমল দত্ত, অরুণ ঘোষ, সুখবিন্দর সিংহ থেকে কোলাসো— অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। অথচ বিদেশি কোচেদের কখনও বরখাস্ত করা হয় না। কী যে ওঁদের মোহ তা বোঝা কঠিন। আমি নিজে ভারতের হয়ে এগারো বছর খেলেছি। প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে মনে করি, অবিলম্বে স্টিভনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা উচিত। যদি ফেডারেশন কর্তারা তা না পারেন, তা হলে পদত্যাগ করুন। আমরা প্রাক্তনেরা দায়িত্ব নেব জাতীয় দলের। আপনাদের আর দরকার নেই।
মলদ্বীপ: মহম্মদ ফয়সল, মহম্মদ সামদো, আক্রম ঘানি (আহমেদ), আলি সামহ, হোসেন সাইফু, হোসেন নিহান, ইব্রাহিম হাসান, হামজাত মহম্মদ (মহম্মদ আরিফ), ইব্রাহিম হোসেন, আলি ফসির ও নিয়াজ হাসান (আসাদুল্লা আবদুল্লা)।
ভারত: বিশাল কাইত, দেবেন্দ্র সিংহ (জার্মানপ্রীত সিংহ), সালামরঞ্জন সিংহ, সার্থক গলুই, শুভাশিস বসু, নিখিল পূজারি, অনিরুদ্ধ থাপা (হিতেশ শর্মা), বিনীত রাই, আশিক কুরিয়ন, ফারুখ চৌধুরি (সুমিত পাসি) ও মনবীর সিংহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy