Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাকিস্তানকে সাত গোল, অভিশাপ কাটল নেগির

রবিবার মুম্বইয়ের বাড়িতে বসেই মির রঞ্জন চোখ রেখেছিলেন লন্ডনে ভারত-পাকিস্তান হকি ওয়ার্ল্ড লিগ সেমিফাইনাল ম্যাচে।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০৪:০৩
Share: Save:

শাপমুক্তি ঘটতে লাগল পাক্কা সাড়ে তিন দশক!

রবিবার ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ১-৭ চূর্ণ হওয়ার এটাই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া মির রঞ্জন নেগির। পঁয়ত্রিশ বছর আগে ডিসেম্বরের এক বিকেলে বিরাশির দিল্লি এশিয়ান গেমসের ফাইনালে যিনি ভারতের গোলে দাঁড়িয়ে হজম করেছিলেন পাকিস্তানের সাত গোল। ভারত হেরেছিল ১-৭। হাসান সর্দাররা নাস্তানাবুদ করে দিয়ে গিয়েছিলেন মহম্মদ শাহিদদের। আর তার পর এই ভারতীয় গোলকিপারের কী পরিণতি হয়েছিল তা এতদিনে ‘চক দে ইন্ডিয়া’-র সৌজন্যে জেনে গিয়েছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী।

রবিবার মুম্বইয়ের বাড়িতে বসেই মির রঞ্জন চোখ রেখেছিলেন লন্ডনে ভারত-পাকিস্তান হকি ওয়ার্ল্ড লিগ সেমিফাইনাল ম্যাচে। ভারত ৭-১ বদলা নেওয়ার পরেই ফোনে ধরা হলে ওয়াডালার বাড়ি থেকে সেই অভিশপ্ত ম্যাচের ভারতীয় গোলরক্ষক বললেন, ‘‘এতদিন বুকের উপর পাথর চাপা ছিল। আজ মনে হচ্ছে সেটা নেমে গেল। দারুণ আনন্দের দিন। হরমনপ্রীত, আকাশদীপরা আজ সাত গোল দিয়ে আমাকে শাপমুক্ত করে দিল। পঁয়ত্রিশ বছর ধরে যন্ত্রণাটা বুকে নিয়ে ঘুরছিলাম। আজ রাতে শান্তিতে ঘুমাবো।’’ একটু থেমে ফের বলে চলেন, ‘‘সেই সাত গোলের পর দেশের হয়ে গোলকিপার কোচ হিসেবে ১৯৯৮ এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছি। ২০০২ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জয়ী ভারতীয় মহিলা হকি টিমের গোলকিপিং কোচ ছিলাম। শাহরুখ আমার জীবন নিয়ে ‘চক দে ইন্ডিয়া’ বানিয়েছে। কিন্তু আজকের আনন্দ সেগুলোকে ছাপিয়ে গিয়েছে।’’

নেগি বলে চলেন, ‘‘আজ গোটা ফ্ল্যাটকে মিষ্টি খাওয়াবো। ভারতীয় হকির সঙ্গে আমার জীবনেরও স্মরণীয় দিন। তাই প্রদীপ দিয়ে বাড়ি সাজিয়েছি ম্যাচের পরেই। মনে হচ্ছে আমিই পাকিস্তানকে সাত গোল দিয়ে ফিরলাম।’’

আরও পড়ুন:

ইন্দোনেশিয়া ওপেন জিতে ইতিহাস শ্রীকান্তের

কথা বলতে বলতেই আবেগে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে যায় প্রাক্তন ভারতীয় গোলরক্ষকের গলা। ফিরে যান পঁয়ত্রিশ বছর আগে পয়লা ডিসেম্বরের বিকেলে। ‘‘সে দিন অনেকেই নিশানা বানিয়েছিল আমাকে। রুমমেট প্রয়াত মহম্মদ শাহিদ পাশে দাঁড়িয়ে রক্ষা করেছিল মিডিয়ার হাত থেকে। তার পর সবাইকে এড়িয়ে চলতাম দীর্ঘদিন। খেলা ছেড়ে দিয়েছিলাম। অফিসে, রাস্তায় লোকে চিনতে পারলে এমন সব মন্তব্য করত যে চোখে জল আসত। এমনকি বিয়ের দিনও আমিই সেই সাত গোল খাওয়া গোলকিপার শুনে কিছু লোক বিদ্যুতের সংযোগটাই কেটে দিয়ে যায়। হ্যাজাক জ্বেলে বিয়ে হয়েছিল আমার।’’

এ দিন পাঁচ গোল হওয়ার পরেই সাত গোলের আশার প্রহর গুনছিলেন। সে কথা জানিয়ে নেগি বলেন, ‘‘পাঁচ গোলের পর মনে হচ্ছিল সেই কালো দিনের স্মৃতি আজ মুছে যেতে পারে। ৬-১ হওয়ার পর টেনশন হচ্ছিল আর হল না বোধহয়। শেষ পর্যন্ত ৭-১ হতে এমন চিৎকার করেছি যে পাশের ফ্ল্যাট থেকে প্রতিবেশীরা ছুটে এসেছে।’’

ফোন রাখার আগে নেগীর আর্জি, ‘‘আমাকে পাকিস্তানের গোলকিপার, আমজাদ আলি-র ফোন নম্বরটা জোগাড় করে দিতে পারবেন। আজ ওঁর মধ্যে পঁয়ত্রিশ বছর আগের মির রঞ্জনকে দেখতে পাচ্ছি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব আমার মতো পরিস্থিতি ওঁর জীবনে যেন ধেয়ে না আসে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE