Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বার্মিংহাম তৈরি হচ্ছে নতুন উপমহাদেশীয় দ্বৈরথের জন্য

সহবাগ আর টিকিটে বাজল বাজনা

উপমহাদেশীয় ক্রিকেটে নব্য এই লড়াইয়ের শুরু ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপের ম্যাচ দিয়ে। গ্রেগ চ্যাপেল-রাহুল দ্রাবিড়ের ভারতকে হারিয়ে তাঁদের শুধু গ্রুপ লিগ থেকেই ছিটকে দিল না বাংলাদেশ, খুঁচিয়ে তুলল এক নতুন তিক্ততার কাহিনিও।

গ্যালারি: মাঠের বাইরেও চলবে দু’দেশের আর এক ম্যাচ। ফাইল চিত্র

গ্যালারি: মাঠের বাইরেও চলবে দু’দেশের আর এক ম্যাচ। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ০৪:২৫
Share: Save:

যদি কেউ ভেবে থাকেন, উপমহাদেশীয় ক্রিকেট দ্বৈরথ বলতে শুধুই ভারত বনাম পাকিস্তান, তাঁর ভুল ধরিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে। ভারত-পাক মহারণ হয়তো এখনও সারা বিশ্বের বিচারে সব যুদ্ধের সেরা যুদ্ধ। এর ধারেকাছে হয়তো কিছু আসতে পারবে না।

কিন্তু উপমহাদেশীয় উত্তাপের বিচারে খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ভারত বনাম বাংলাদেশের ক্রিকেট যুদ্ধ। ক্রিকেটীয় যোগ্যতায় দু’দলের মধ্যে ব্যবধান তো গত কয়েক বছরে কমেছেই, মাঠের বাইরের নানা বিষয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক স্তরে সম্পর্কের চাপানউতোর চলেছে। আর তার প্রভাব পড়েছে ক্রিকেটের লড়াইয়েও। এখন আর ভারত বনাম বাংলাদেশ মানে নীরব ক্রিকেট দ্বৈরথ নয়। বরং দু’দেশের সমর্থকদের তীব্র রেষারেষি আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা।

উপমহাদেশীয় ক্রিকেটে নব্য এই লড়াইয়ের শুরু ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপের ম্যাচ দিয়ে। গ্রেগ চ্যাপেল-রাহুল দ্রাবিড়ের ভারতকে হারিয়ে তাঁদের শুধু গ্রুপ লিগ থেকেই ছিটকে দিল না বাংলাদেশ, খুঁচিয়ে তুলল এক নতুন তিক্ততার কাহিনিও। যখন মাশরফি মর্তুজা ম্যাচ জিতে বলে দিলেন, লিফ্‌টের মধ্যে অনিল কুম্বলেদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিল, ধরেই নিয়েছে আমাদের হারিয়ে পরবর্তী রাউন্ডে চলে গিয়েছে। সেটা দেখেই সতীর্থদের গিয়ে বলি, এই উপেক্ষার জবাব দিতে হবে বন্ধুরা।

মাশরফিরা জবাব দিয়েছিলেন। ভারতকে হারিয়ে তাঁরা শোকস্তব্ধ করে দেন সচিন, সৌরভদের। এর পর থেকে আর কখনও পুরনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক ফিরে আসেনি। বরং রেষারেষি আর বাগ্‌যুদ্ধ বেড়েছে। চট্টগ্রামে টেস্ট খেলতে গিয়ে বীরেন্দ্র সহবাগ সোজাসাপ্টা ঘোষণা করে দিলেন, বাংলাদেশ টেস্টটা কিছুতেই জিতবে না। সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করলেন, কেন? সহবাগ বলে দিলেন, কারণ খুব সহজ। ওদের কুড়িটা উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা নেই।

আরও পড়ুন:

ভারত-পাক ফাইনাল হবে তো, লর্ডসে প্রশ্ন বিরাটকে

পরের দিন টেস্টের প্রথম দিনেই দারুণ বল করল বাংলাদেশ। তুলে নিল ভারতের আট উইকেট। পাল্টা হুঙ্কার ছেড়ে গেলেন মুশফিকুর রহিম। তোপের মুখে পড়লেন সহবাগ। সেই থেকে শুরু হয়ে গেল নতুন এক রেষারেষি এবং কথার যুদ্ধ। ২০১৫ বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার বিরুদ্ধে আউটের আবেদন নাকচ হওয়া নিয়ে ফেটে পড়লেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। সেই উত্তেজনা বেশ কয়েক দিন চলেছিল।

ধোনির ভারত এর পর বাংলাদেশে গিয়ে এক দিনের সিরিজ হারল। সেই সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মাঠের মধ্যে উচ্ছল উৎসব ভাল লাগেনি ভারতীয়দের। কারও কারও মনে হয়েছিল, মাশরফিদের উৎসবের ভঙ্গি শালীনতা ছাড়িয়েছিল। এর কয়েক দিন পরেই এশিয়া কাপে খেলতে গিয়ে ইন্টারনেট স্লেজিংয়ের মুখে পড়লেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। তাসকিন আমেদের ছবি ভাইরাল হয়ে গেল। হাতে ধোনির কাটা মুণ্ডু ধরে আছেন। ভারতীয় শিবিরেও সেই খবর ছড়িয়ে পড়ল। ধোনি ফাইনালে তার জবাব দিলেন, পর-পর দুই পেল্লাই ছক্কা মেরে।

পরের স্টেশন বার্মিংহাম এবং, ইতিমধ্যেই দু’টো ব্যাপার নিয়ে খটাখটি শুরু হয়ে গিয়েছে। শিরোনামে আবার সহবাগ। রবিবার কোহালিরা জেতার পর টুইটারে অভিনন্দন জানিয়ে বীরু লিখেছেন, সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের জন্য শুভেচ্ছা রইল। তাঁর টুইট দেখে বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তরা ফের ক্ষিপ্ত। তাঁদের বক্তব্য, সহবাগ কি তা হলে বাংলাদেশকে পাত্তাই দিচ্ছেন না? আগেভাগেই কোহালিদের ফাইনালে তুলে দিয়েছেন? না হলে ফাইনালেরও শুভেচ্ছা কেন?

দ্বিতীয় কারণ, সেমিফাইনাল ম্যাচের টিকিট। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দু’টো সেমিফাইনাল হচ্ছে কার্ডিফে এবং বার্মিংহামে। কে কোনটাতে খেলবে বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা বুদ্ধি করে দু’টো জায়গারই প্রচুর টিকিট আগে থেকে কেটে রেখেছিলেন। এখন অবশ্যই কার্ডিফের টিকিটগুলো বিক্রি করে দেবেন তাঁরা।

এজবাস্টনে তাই ভারতীয়দেরই সংখ্যাধিক্য থাকার কথা। ও দিকে বাংলাদেশি ভক্তরাও টিকিটের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাঁদের দেশ এই প্রথম কোনও বিশ্ব মানের ইভেন্টে সেমিফাইনালে উঠেছে। সকলে এই ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে মাশরফি-রা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ভারতের কাছেই হেরে গিয়েছিলেন। মারকাটারি সেমিফাইনালের টিকিটের জন্য তাই হাহাকার চলছে।

এজবাস্টনে একটা দল ইতিহাস রক্ষা করার চেষ্টা করবে। তারা গত বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। অন্য দলটা ইতিহাস তৈরির খোঁজে নামবে। শান্তিপূর্ণ ম্যাচ হবে? সম্ভাবনা ক্ষীণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE