হাবিবুল বাশার
প্রশ্ন: আপনার নেতৃত্বে ভারতকে বাংলাদেশ শেষ বারের মতো বিশ্বকাপে হারায় ২০০৭ সালে। এ বারের সঙ্গে কোনও মিল পাচ্ছেন?
বাশার: একটাই মিল সেটাও এ বারের মতো হারলেই বিদায় টাইপের ম্যাচ ছিল। আক্ষরিক অর্থে হয়তো ওটা নক আউট নয়, গ্রুপ লিগের ম্যাচ ছিল। কিন্তু দুটো টিম জানত আসলে নক আউটই। তাই হয়েছিল পরে গিয়ে। তবে সে বারের ইন্ডিয়ান টিমটা এটার চেয়ে অনেক স্ট্রং ছিল। কী কী প্লেয়ার ছিল সেটায়। সচিন, সহবাগ, দাদা, দ্রাবিড়...
প্র: আর বাংলাদেশের কোন টিমটা বেশি স্ট্রং? সে বারেরটা না এ বারে?
বাশার: এ বারেরটা অবশ্যই। এই টিমটা অনেক বেশি ম্যাচিওর্ড। ম্যাচ জেতানো পারফর্মারও এই দলে বেশি।
প্র: আপনার ২০০৭ আর মাশরফির ২০১৫-এ ম্যাচ হলে এরা জিতবে?
বাশার: বললাম তো এরা। এই টিমটার সবচেয়ে বড় গুণ হল প্রেশার সামলাতে জানে। আফগানিস্তানের দিন কম রানে চার উইকেট চলে যাওয়ার পর ঠিক লড়াই করে তিনশোর ওপর তুলে দিয়েছে। ইংল্যান্ডের দিন চাপ এসেছে ভয়ঙ্কর রকম। তবু ভেঙে পড়েনি। আমার তো মনে হয় এই অ্যাটিটিউড নিয়ে ইন্ডিয়াকে ওরা ভাল ফাইট দেবে। যেই জিতুক কাজটা কারওর সহজ হবে না।
প্র: অনেকের মনে হচ্ছে এই পর্যায়ে প্রথম যাওয়া, তাও এমসিজির মতো প্রবাদপ্রতিম, বিশালকায় মাঠে। বাংলাদেশ ব্যাপক চাপে থাকবে।
বাশার: তাই কি? আমি শিওর নই। আমার তো মনে হয় প্রেশারে থাকবে ইন্ডিয়া। আমাদের তো মূল লক্ষ্য ছিল প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল যাওয়া। সেটা হয়ে গিয়েছে। এখন যা হবে সব অর্জনের পালা। হারাবার কিছু নেই। ভারতের তো তা নয়। ওদের জিততেই হবে। এ জন্যই দু’হাজার সাতেও ওদের অসম্ভব চাপে দেখেছিলাম।
প্র: আপনি তো এখন জাতীয় নির্বাচক। টিমের এই পারফরম্যান্স কী এনে দিতে পেরেছে মনে করেন?
বাশার: এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরেছে। এর পর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে দেখা স্বপ্নের তো শেষ নেই। কিন্তু একটা বড় কাজ এই টিম করে দেখিয়েছে।
প্র: এই মাহমুদউল্লাহকে তো নির্বাচকেরাই আবার ফেরত আনলেন টিমে। ওর এত ভাল খেলা দেখে কী মনে হচ্ছে?
বাশার: খুব ভাল লাগছে। আর টিমের বেস্ট ডিশিসন হল ওকে চার নম্বরে পাঠানো। মাহমুদউল্লাহকে ছয় বা সাতে না খেলিয়ে ওপরে খেলানোটা একদম রাইট ডিশিসন। ওর খেলাটা নীচের দিকের ব্যাটিং অর্ডারের সঙ্গে যায় না।
প্র: ঢাকার বিশ্বকাপ আগ্রহ নাকি অবিশ্বাস্য?
বাশার: ওরে বাবা। এ বারের মতো ক্রেজ আমি বোধহয় কখনও দেখিনি। বাংলাদেশের খেলা থাকলে নিমেষে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
প্র: আপনাদের ওখানে নাকি রামিজ রাজার কিছু মন্তব্য ঘিরে এমনই উত্তেজনা যে দাবি উঠেছে ওঁকে বাংলাদেশে কমেন্ট্রি না করতে দেওয়ার? সিধুর বিরুদ্ধেও নাকি ফেসবুক কমিউনিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে।
বাশার: বাঙালিরা আবেগপ্রবণ। ক্রিকেট নিয়ে তো আরওই বেশি আবেগ। আবেগ থেকে অনেক কিছুই হতে পারে যেটা সব সময় যুক্তিপূর্ণ নয়। শুধু সিধু বা রামিজকে টার্গেট করে কী হবে, বিশ্বকাপের আগে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই তো বাংলাদেশকে হাতে নেননি। আমাদের কোনও আশা দেখেননি। কাউকে ব্যান করে, গালমন্দ করে কিছু হয় বলে আমি মনে করি না। একজন কমেন্টেটর সে তো তার মনের কথা বলতেই পারে। আমার মনে হয় তাকে যদি জবাব দিতে হয় সেরা জায়গা হল মাঠ। বাইশ গজে তাকে জবাব দিয়ে দাও।
প্র: এমনও কিছু বাংলাদেশি বলছেন যে আমরা একটা ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ভারতকে যদি হারিয়ে সেমিফাইনাল যাই আর ও দিক থেকে পাকিস্তান অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়াকে হারায়, ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সৃষ্টির দিন পাকিস্তানকে হারিয়ে আমাদের ফাইনাল যাওয়ার সুযোগ!
বাশার: আমার মনে হয় না ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত কোনও লোক এ ভাবে বা আদৌ ভাবছে বলে। কিছু লোক খেলাকে মিশিয়ে ফেলছে অন্য কিছুর সঙ্গে। আমি এর সমর্থক নই। ক্রিকেটটা ক্রিকেটই থাক— আমার মতে।
প্র: খোলাখুলি বলুন, ম্যাচে বাংলাদেশের ভয়ের মুহূর্ত কোন জায়গা থেকে তৈরি হতে পারে?
বাশার: ভারতীয় পেসাররা গোটা টুর্নামেন্ট খুব ভাল বল করছে। শর্ট বলটা ওরা খুব ভাল ব্যবহার করছে। সেটা একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা, আমাদের হারাবার কিছু নেই। প্রথম বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল ব্যাপারটা উপভোগ করি, এ ভাবে যেন ছেলেরা দেখে। তা হলে ওরা ইন্ডিয়াকে আরও প্রবলেমে ফেলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy