সমস্যা: অশ্বিনের ফিটনেস নিয়ে বাড়ছে জল্পনা। ফাইল চিত্র
ট্রেন্ট ব্রিজে মঙ্গলবার মধ্যাহ্নভোজের পর থেকে তখন ক্রমশ ভারতের জয়ের রাস্তা মেঘাচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে। বিরাট কোহালির জন্য আরও বড় উদ্বেগ ক্রমশ বাড়তে থাকল। বাকি সিরিজে তাঁর সেরা স্পিন অস্ত্র আর অশ্বিনের ভাগ্যও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
অশ্বিনের কোমরের নীচের দিকের মাংসপেশিতে টান ধরেছে বলে ভারতীয় শিবিরের তরফে জানানো হয়েছে। এই চোট তাঁর লাগে দ্বিতীয় দিন বল করতে এসেই। অফস্পিনার এর পর মাঠ ছেড়েও বেরিয়ে যান এবং ফিজিয়ো প্যাট্রিক ফারহার্টের সঙ্গে তাঁকে ট্রেন্ট ব্রিজের ইন্ডোরে যেতে দেখা যায়। ইন্ডোরে গিয়ে বল করে তিনি দেখার চেষ্টা করেন, চোটের গুরুত্ব কতটা। তার পর মাঠে ফিরে এলেও খুব স্বচ্ছন্দে দেখা যাচ্ছিল না তাঁকে।
অশ্বিনকে নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছে মঙ্গলবারের পরে। যেখানে মনে করা হচ্ছিল, চতুর্থ দিনে শেষ ইনিংসের খারাপ হতে থাকা উইকেটে তিনিই ভারতকে জয়ের রাস্তা দেখাবেন, সেখানে অফস্পিনারকে দেখে মনে হচ্ছিল, রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। রান-আপে স্লথ দেখাচ্ছিল, ফিল্ডিংয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার সময়েও বেশ মন্থর গতিতে হাঁটছিলেন তিনি। কয়েকটি ক্ষেত্রে খোঁড়াতেও দেখা গেল। সে সব দেখেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাঁর চোট কতটা গুরুতর? বাকি থাকা দুই টেস্টে কি সুস্থ হয়ে ফিরতে পারবেন?
হরভজন সিংহ নিজে অফস্পিনার। অশ্বিন যে রকম সংগ্রাম করছিলেন এ দিন মাঠে, তা দেখে ভাজ্জির মনে হচ্ছে, চোট খুব ছোটখাটো নয়। বল করা দূরে থাক, মাঠে থাকতেও যে বেশ কষ্ট হচ্ছিল অশ্বিনের, সেটাও ধরা পড়েছে হরভজনের চোখে। বললেন, ‘‘বেচারার সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। যার জন্য বলে সেই কামড়টাই পাওয়া যাচ্ছিল না। চতুর্থ দিনের উইকেটে অশ্বিনকে না হলে খেলা সহজ হত না।’’
কোমরের নীচে পশ্চাদ্দেশের মাংসপেশিতে টান কতটা উদ্বেগের হতে পারে অফস্পিনারের জন্য? হরভজন বলছেন, ‘‘অসুবিধা তো হবেই। কোমর ঠিক মতো না ঘুরলে অফস্পিনারের পক্ষে নিজের ছন্দ খুঁজে পাওয়া কঠিন।’’ স্কাই স্পোর্টসের হয়ে এই সিরিজে কমেন্ট্রি করছেন হরভজন। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময়ে তাঁর মনে হয়েছে, চোটের জন্য অশ্বিন তাঁর নিজস্ব গতিতেও বল করতে পারছেন না। সেটাও বোলিংয়ে প্রভাব ফেলেছে। আপনার কি মনে হয়, অশ্বিন পারবেন পরের দু’টো টেস্টে খেলতে? হরভজন বলছেন, ‘‘ওর চোট কতটা গুরুতর আমি জানি না। দেখে মনে হয়েছে, ওর বেশ ভাল রকম সমস্যা হচ্ছে। বাকি সিরিজে পারবে কি না, সেটা নির্ভর করবে ও কী রকম বোধ করছে, তার উপরে।’’
জাতীয় নির্বাচকেরা ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম তিনটি টেস্টের জন্য দল গঠন করেছেন। কথা রয়েছে, আজ, টেস্টের শেষ দিনে বাকি দুই টেস্টের দল ঘোষণা করবেন তাঁরা। অশ্বিনের জন্য সব চেয়ে আশার কথা হচ্ছে, সাউদাম্পটনে চতুর্থ টেস্ট শুরু হচ্ছে ৩০ অগস্ট। হাতে থাকছে এক সপ্তাহ সময়। তার মধ্যে শুশ্রূষা এবং রিহ্যাব করে ফিরে আসতেই পারেন। আর ভয়ের কথা হচ্ছে, তিনি সব চেয়ে ফিট ক্রিকেটারদের মধ্যে পড়েন না। যদি বড় কোনও চোট হয়, সুস্থ হয়ে উঠতে সময় লাগতে পারে। লর্ডস টেস্টে পিঠের ব্যথায় আক্রান্ত বিরাট কোহালি দ্রুত সুস্থ হয়ে ট্রেন্ট ব্রিজে নামতে পেরেছেন। কিন্তু কোহালি এবং অশ্বিনের শারীরিক সক্ষমতায় অনেক তফাত। কারও কারও আবার আশঙ্কা, অশ্বিনের এই চোট না হ্যামস্ট্রিং পর্যন্ত প্রসারিত হয়। তা হলে আরও ভয়ের কারণ।
অশ্বিনের পুরো পরিবার এখানে এসেছে। স্ত্রী প্রীথিকে দেখা গেল কিছুক্ষণ পরে মাঠে ঢুকে পরিচিত এক জনকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করছেন, ‘‘অশ্বিন বল করেছে?’’ বাবা রবিচন্দ্রন এবং মা চিত্রা ট্রেন্ট ব্রিজে খেলা দেখতে এসেছিলেন। সকালে দেখা হওয়া মাত্র তাঁদের মুখে দু’টো প্রার্থনা। এক) ভারত যেন আজই জিতে যায় এবং দুই) ছেলের চোট যেন খুব গুরুতর কিছু না হয়। রবিচন্দ্রন এবং চিত্রা বলছিলেন, বিকেলের দিকেই তাঁরা লিভারপুলে চলে যাবেন। সেখানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে সময় কাটিয়ে ৩০ অগস্ট থেকে শুরু সাউদাম্পটন টেস্ট দেখতে ফিরতে পারেন। এ দিন ট্রেন্ট ব্রিজে ছেলের যন্ত্রণাবিদ্ধ মুখচোখ নিয়ে বোলিং দেখার পরে গভীর উদ্বেগ তৈরি হওয়ার কথা তাঁদের মনে। নিজের ছন্দে বল করতে পারলেন না অশ্বিন, ব্যাটসম্যানকে ধাঁধায় রাখা সেই বৈচিত্র উধাও, চতুর্থ দিনের পিচেও প্রথম ১৯ ওভার বল করেও শিকারহীন থেকে যাওয়া, বার বার ফিজিয়োর শরণাপন্ন হওয়া। মহম্মদ সালাহের ইপিএল ক্লাব-শহর থেকে রবিচন্দ্রন ও চিত্রার সাউদাম্পটন যাত্রা অনিশ্চিত দেখাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy