Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ধোনিতেই আস্থা দলের, চর্চায় ব্যাটসম্যান ঋষভ 

জো রুটদের কাছে এক দিনের সিরিজ হারের পরে ভারতীয় দল  ময়নাতদন্তে বসেছিল। সেখানে যে সব বিশ্লেষণ উঠে এসেছে, তা এ রকম—

নজরে: ধোনির উত্তরসূরির দৌড়ে এগিয়ে ঋষভ পন্থ। —ফাইল চিত্র।

নজরে: ধোনির উত্তরসূরির দৌড়ে এগিয়ে ঋষভ পন্থ। —ফাইল চিত্র।

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৮ ০৩:১১
Share: Save:

বল-রহস্য মিটে যাওয়ার পাশাপাশি মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনাও থামার মুখে। ইংল্যান্ডে মন্থর ব্যাটিংয়ে সমালোচনার মুখে পড়লেও প্রাক্তন অধিনায়কের পাশেই দাঁড়াচ্ছে তাঁর দল। এখনই তাঁকে বিশ্বকাপের নকশা থেকে ছেঁটে ফেলার পরিকল্পনা নেই। জো রুটদের কাছে এক দিনের সিরিজ হারের পরে ভারতীয় দল ময়নাতদন্তে বসেছিল। সেখানে যে সব বিশ্লেষণ উঠে এসেছে, তা এ রকম—

ধোনিতেই আস্থা: ভারতীয় দর্শকেরা লর্ডসে তাঁর মন্থর ব্যাটিং দেখে বিদ্রুপ করেছেন। ৫৯ বলে ৩৭ করে তিনি আউট হওয়ার সময় তাঁরা হাততালি দিয়েছেন। কমেন্ট্রি বক্স থেকে দাবি উঠেছে, নতুন কাউকে সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু কোচ রবি শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক বিরাট কোহালির পূর্ণ সমর্থন এখনও পাচ্ছেন ধোনি। ভারতীয় ক্রিকেটের চাণক্য-চন্দ্রগুপ্ত জুটিকে পাশে পাওয়ার অর্থ, ধোনির বিশ্বকাপ উড়ান এখনও ‘টার্বুল্যান্সের’ মধ্যে পড়েনি। যদি ব্যাট হাতে এই ব্যর্থতা খুব দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা হলে আলাদা কথা। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, আগামী সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এশিয়া কাপেও এক নম্বর উইকেটকিপার হিসেবে ধোনিরই যাওয়ার সম্ভাবনা। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠবে যদি মরুদেশেও ধোনির ব্যাট ঘুমিয়ে থাকে।

কেন ধোনিতেই আস্থা: ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করছে, ধোনির অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার কোনও তৈরি বিকল্প এখনই পাওয়া যাবে না। ২০১৯ বিশ্বকাপের আর এগারো মাস বাকি। এখন ধোনিকে সরিয়ে নতুন কাউকে আনতে গেলে বড় ঝুঁকি হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যখন দেশের মাটিতেও নয়, বিশ্বকাপ হচ্ছে ইংল্যান্ডে। ঋষভ পন্থের মতো তরুণ কাউকে যথেষ্ট আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলিয়ে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়াটা বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারও কারও মতে, ‘‘ধোনির মতো ক্রিকেটারকে বিদায় জানানোর আগে নিঃসংশয় হওয়া দরকার দু’টো ব্যাপারে। এক) ধোনির আর কিছু দেওয়ার নেই। দুই) বিকল্প সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি আছে।’’

অগ্রজের ভূমিকা: বিরাট কোহালি বা রোহিত শর্মারা মনে করেন, অধিনায়ক হিসেবে ধোনি যদি তাঁদের পাশে না দাঁড়াতেন, যদি না তাঁদের জন্য নির্বাচকদের সঙ্গে ঝগড়া করতেন, তা হলে তাঁদের কেরিয়ার অনেক আগেই থেমে যেত। বিরাট দলের সকলের সামনেই এক বার বলে দিয়েছিলেন, ‘‘মাহি আমাদের সকলের ক্যাপ্টেন। সারা জীবন তুমি ক্যাপ্টেনই থেকে যাবে।’’ এই যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধার জায়গা, দুঃস্বপ্নেও ভাবা কঠিন যে, অগ্রজ গলাধাক্কা খেতে পারেন। অতীতে কোনও কোনও সিনিয়রের জন্য যা বরাদ্দ থেকেছে। ক্রিকেটের সেরা মস্তিষ্ক হিসেবে নানা ভাবে অবদানও রেখে চলেছেন ধোনি। উইকেটের পিছন থেকে সারাক্ষণ বোলারদের চালনা করেন। ডিআরএস নেওয়ার মাস্টার। নিশ্চিত না হয়ে ‘মাহি প্যাকেজ’ হারাতে চায় না কেউ।

উত্তরসূরির সম্ভাবনা: অন্তত সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ধোনির বিকল্প হিসেবে লটারি জেতার দৌড়ে যে তিনি— ঋষভ পন্থ এগিয়ে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। আইপিএলে ঋষভের কয়েকটি ইনিংস দেখে তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে নিশ্চিত অনেকেই। যদি নিজে দিগ্‌ভ্রষ্ট না হয়ে পড়েন, ঋষভই ভবিষ্যৎ। ধোনিকে দলে রেখেও অদূর ভবিষ্যতে তাঁকে দেখা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ধোনি উইকেটকিপার থাকবেন আর পন্থ খেলবেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ইংল্যান্ডের কাছে ওয়ান ডে সিরিজে হারের পরে কোহালিদের দলে হওয়া ময়নাতদন্তে ধরা পড়েছে, পাঁচ বা ছয় নম্বরে ‘বিগ হিটার’ দরকার। সুরেশ রায়নাকে নিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের। তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবন সম্ভবত হেডিংলেতেই শেষ হয়ে গেল। হার্দিক পাণ্ড্যকে বলা হবে, স্বাভাবিক ছন্দে ফেরো। টিম তোমার কাছে ঝোড়ো ব্যাটিং চায়। হার্দিকের সঙ্গে যদি স্কোয়াডে ঋষভের মতো ভয়ডরহীন, আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান যোগ করার কথা ভাবা শুরু হয়েছে।

মিডল-অর্ডার নিয়ে চিন্তা: ভারতের ওয়ান ডে ব্যাটিং খুব বেশি করে প্রথম তিন জনের উপর নির্ভরশীল। রোহিত শর্মা, শিখর ধবন এবং বিরাট কোহালি। চার বা পাঁচ নম্বরে পোক্ত কেউ নেই। খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা নিয়েও কথা উঠছে। ইংল্যান্ডে তৃতীয় এক দিনের ম্যাচে বসিয়ে দেওয়া হয় কে এল রাহুলকে। সিরিজ হারের পরে অবশ্য মনে হচ্ছে, রাহুলকেই পাকাপাকি ভাবে চার নম্বরের জন্য ভাবা হবে। যদিও কারও কারও সংশয় আছে, ওপেনার হিসেবে বেশি স্বচ্ছন্দ রাহুল চার নম্বরের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মানিয়ে নিতে পারবেন কি না। অতীতে একই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রাহুল না পারলে থাকল অজিঙ্ক রাহানে। অতীতে তাঁকে নিয়েও নানা পরীক্ষা হয়েছে। চার এবং পাঁচ নম্বর কারা, সেটা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ‘মিশন বিশ্বকাপ’ নিয়ে উদ্বেগের কালো মেঘ দূর হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE