Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শিখরের বদলি পূজারা, ভাবনায় কুলদীপও

ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের শিখর-প্রীতি দেখে একটা ধারণাই তৈরি হয়ে গিয়েছে যে, আর যে-ই বসুক, তিনি বসবেন না।

পরামর্শ: ভারতের অনুশীলনে কোচ শাস্ত্রীর সঙ্গে চেতেশ্বর পূজারা। ফাইল চিত্র

পরামর্শ: ভারতের অনুশীলনে কোচ শাস্ত্রীর সঙ্গে চেতেশ্বর পূজারা। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০৫:২৬
Share: Save:

হালফিলে ভারতীয় দলের মহড়ায় এমন দৃশ্য দেখা যায় না।

কী সেই দৃশ্য?

না, ভারতীয় দলের উপরের দিককার ব্যাটসম্যানেরা নেটে ব্যাট করছেন আর শিখর ধওয়ন চললেন ফিটনেস পরীক্ষা দিতে।

অথচ, লর্ডসে মহা গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগে তেমনই তো দেখা গেল। তা হলে কি অবশেষে ধওয়নকে বসানোর সিদ্ধান্ত হল? ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের শিখর-প্রীতি দেখে একটা ধারণাই তৈরি হয়ে গিয়েছে যে, আর যে-ই বসুক, তিনি বসবেন না। লর্ডস— যেখানে ধওয়ন এর আগে একটি মাত্র টেস্ট খেলেছেন এবং দুই ইনিংসে স্কোর যথাক্রমে ৭ এবং ৩১— সেখানে কিন্তু টিমের ‘জয় ধওয়ন’ ধ্বনি মৃদু হতে শুরু করেছে।

লন্ডনের আবহাওয়ার মতোই পাল্টে গিয়েছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের মনোভাব। ইউরোপ জুড়ে যে উষ্ণ প্রবাহ চলছিল, তা অনেকটা কম এ দিন। তার কারণ, মঙ্গলবার রাতের দিকে বৃষ্টি হওয়া। হিথরো বিমানবন্দর থেকে আসার পথে ট্যাক্সি ড্রাইভারও বলে ফেললেন, ‘‘শেষ কবে এখানে বৃষ্টি হয়েছে, ভুলে গিয়েছি। এ বারে অসহ্য গরমের মধ্যে তো এই প্রথম বৃষ্টি দেখতে পেলাম আমরা।’’

মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টি আবহাওয়াকে অনেক মনোরম করে দিয়েছে। গরম কমে উল্টে ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে। আবহাওয়ায় এই পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় দলের প্রথম একাদশ নির্বাচনের কাজও কিছুটা থমকে দাঁড়িয়ে। লর্ডসের পিচ কিউরেটর (প্রধান পিচ প্রস্তুতকারক) মিক হান্ট নিজেই এক জন কিংবদন্তি। পঞ্চাশ বছর ধরে পিচের কাজ করে যাচ্ছেন ঐতিহাসিক মাঠে।

হান্টের এটাই শেষ টেস্ট। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলে ভারতীয় দল জানতে পেরেছে, লন্ডনে এত দিন ধরে চলা উষ্ণ প্রবাহের জন্য পিচ খুব শুকনো হয়ে থাকবে। তাই মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টির পরে যতই ঠান্ডা হাওয়া দিক, পিচ স্পিনারদের সাহায্য করতে পারে। সেই তথ্যকে মাথায় রেখে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে কুলদীপ যাদবকে খেলানো হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে রবীন্দ্র জা়ডেজাও সমীকরণের বাইরে যাননি। জাডেজা কিন্তু ব্যাটও করতে পারেন।

পিচ ঢাকা থাকায় রবি শাস্ত্রী-বিরাট কোহালিরা এ দিন খুব ভাল করে তা দেখতে পারেননি। যেটুকু দেখেছেন, পিচে ঘাসের পরিমাণ ভালই আছে। তবে সেটা লন্ডনের গরমে পিচকে পাঁচ দিনের উপযুক্ত করে রাখার বাঁধুনি দেওয়ার জন্যও রাখা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার টেস্টের মহড়ায় দেখা গেল, কুলদীপকে বেশ খানিক্ষণ ব্যাটিংও করানো হল। তা দেখে আরওই মনে হচ্ছে, বাঁ হাতি চায়নাম্যান স্পিনারকে তৈরি রাখা হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে সিরিজে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের সামনে ধাঁধা হয়েই উপস্থিত হয়েছিলেন কুলদীপ। একমাত্র জো রুট ছাড়া কেউ খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাঁকে খেলতে পারেননি।

এজবাস্টনে প্রথম টেস্টে অশ্বিনের সাফল্য দেখে আরও বেশি করে কুলদীপকে খেলানোর দাবি জোরাল হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি খেলবেন নাকি উমেশ যাদবই প্রথম একাদশে থাকবেন, তা টেস্ট শুরুর আগে পিচের চূড়ান্ত রূপ দেখে ঠিক হবে।

শিখর ধওয়নকে নিয়ে যা সব দৃশ্য দেখা গেল, তাতে অবশ্য মনে হচ্ছে, তাঁর মাথার উপরে এখন মেঘলা আকাশই থাকবে। এজবাস্টনের মতো এখানে আর তিন ওপেনারকে নিয়ে সুখী সংসার গড়ে তোলার লক্ষণ নেই। বরং তিন নম্বরে চেতেশ্বর পূজারাকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য বিদেশের মাঠে বরাবর টেকনিকে দুর্বল দেখানো ধওয়নকেই বসাতে হবে।

অনেক দিন ধরেই নেট অনুশীলনে এক সঙ্গে তিন জন করে ব্যাট করেন। এই তিনটে নেটের একটিতে বল করেন দুরন্ত গতির পেসাররা। অন্যটায় মিডিয়াম পেসার অর্থাৎ মধ্যম গতির বোলার যাঁরা। আর তৃতীয়টা স্পিনারদের নেট। তিনটি নেটেই স্থানীয় বোলাররা থাকেন মিলিয়ে-মিশিয়ে।

ভারতীয় দলের নেট শুরু হল যে তিন ব্যাটসম্যানকে নিয়ে, তাঁদের মধ্যে ধওয়ন নেই। ব্যাট করতে ঢুকলেন মুরলী বিজয়, কে এল রাহল এবং চেতেশ্বর পূজারা। তাতেই প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া গেল, টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ের এমন গরিবের সংসারে পূজারার মতো স্বচ্ছল টেস্ট চাকুরেকে বসিয়ে না রাখার শুভবুদ্ধি ফিরে এসেছে। ইঙ্গিত আরও স্পষ্ট হল, ধওয়নকে মাঠের মধ্যে আবিষ্কার করে। এমনিতেই তিনি হেলেদুলে এমন ঘুমন্ত ভাবে চলেন যে, গব্বরের ভূমিকায় অভিনয় করতে নামালে ব্যাটিংয়ের চেয়েও ফ্লপ করতেন। বুধবার দেখা গেল, আরও নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন।

ফিজিয়ো আবার তার মধ্যেই নিয়ে গেলেন ভারতীয় দলের নতুন ফিটনেস মানদণ্ড ‘ইয়ো ইয়ো টেস্ট’ দেওয়াতে। ধওয়নকে তখন হোলির দিন আক্রমণ করতে গিয়ে জয়-বীরুর হাতে ধোলাই খাওয়া গব্বরের মতো লাগছিল। মাঠের মধ্যে ক্যাচ ধরে ঊরুতে চাপড় মারা শাসক গব্বরের সেই ঝাঁঝটাই উবে গিয়েছে।

ধওয়ন দৌড়তে দৌড়তেই দেখলেন, নেটে পূজারার সেই মূর্তিমান অধ্যবসায়। মাথা নিচু করে প্রত্যেকটা বলের কাছে শরীর নিয়ে গিয়ে সামনের পায়ে খেলার চেষ্টা করছেন। ইংল্যান্ডে সারাক্ষণ বল সুইং করে বলে যে টেকনিক সবার আগে দরকার। ধওয়নের ব্যাকফুট প্লে বিদেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকায় তা-ও চলতে পারে। কিন্তু ইংল্যান্ড, যেখানে সুইং সামলাতে গেলে ফ্রন্টফুট ব্যাটিং ভাল হতেই হবে, সেখানে তিনি ধরা পড়ে যাবেন। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে, যেখানে ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টির মতো ফিল্ডিং বিধিনিষেধ থাকে না। যেখানে তিন বা চার স্লিপ, দুই গালি নিয়ে চক্রব্যূহ তৈরি করে ফেলতে পারেন জেমস অ্যান্ডারসনের মতো সুইং মাস্টাররা।

পূজারারও যে ইংল্যান্ডে অতীত রেকর্ড আহামরি কিছু, তা নয়। পাঁচ টেস্টে এখানে রান করেছেন মোট ২২২। গ়ড় খুবই খারাপ, ২২। এখনও কোনও সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ ৫৫। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধওয়নের চেয়ে তিনি অনেক আস্থাভাজন পছন্দ।

আর ইচ্ছাশক্তি এবং সাধনা দিয়ে যে অতীতের ব্যর্থতার রেকর্ড মুছে ফেলে নতুন মহাকাব্য লেখা যায়, সেই উদাহরণ খোঁজার জন্যও তো পূজারাকে দূরদেশে পাড়ি দিতে হচ্ছে না। টিমের মধ্যেই রয়েছে— তাঁর অধিনায়ক বিরাট কোহালি। চার বছর আগের অভিশপ্ত সফরে এসে যিনি পাঁচ টেস্টে সব মিলিয়ে করেছিলেন ১৩৪ রান। আর এ বারের টেস্ট সিরিজের প্রথম ইনিংসেই করেছেন আগের পাঁচ ইনিংসের মোট রানের চেয়ে বেশি— ১৪৯। তার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১।

বলে না, অন্ধকার চিরন্তন নয়। আলোর রাস্তা ঠিকই থাকে। খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছাটা থাকতে হয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Cheteshwar Pujara Ravi Shastri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE