Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নতুন মেয়ে ক্রিকেটার গড়তে ঝুলনদের অভিনব টুর্নামেন্ট

নির্বাচক মিঠু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অনেক মেয়েই উঠে এসেছে এই টুর্নামেন্ট থেকে। রিচা ঘোষ, প্রতিভা রানা-রা এখানে খেলে নজরে পড়ার পরে বাংলার হয়ে খেলছে। দরিদ্র ঘর থেকে আসা মেয়েদের ক্রিকেটের সরঞ্জাম দিয়েও সাহায্য করা হয়।’’ ঝুলনের পরামর্শে এ বার রঙিন পোশাকে সাদা বলে হচ্ছে টুর্নামেন্ট।

উদ্যোগ: মাঠের বাইরে এ বার ঝুলনের অন্য অভিযান। —ফাইল চিত্র।

উদ্যোগ: মাঠের বাইরে এ বার ঝুলনের অন্য অভিযান। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০৪:৫৯
Share: Save:

বাংলা থেকে নতুন এবং প্রতিভাবান মেয়ে ক্রিকেটারদের তুলে আনতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন ঝুলন গোস্বামী। যিনি নিজেই সারা ভারতের ক্রীড়াবিদদের কাছে উদাহরণ এবং সম্প্রতি ওয়ান ডে ক্রিকেটে প্রথম মহিলা বোলার হিসেবে দু’শো উইকেটের মাইলফলক পেরিয়েছেন। ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েছেন আগেই।

বাংলায় এই মুহূর্তে মহিলাদের ক্রিকেট বলতে সিএবি-র আয়োজনে লিগ এবং জেলা ক্রিকেট হয়। কিন্তু এ ছাড়াও অনেক সম্ভাবনাময় উঠতি মেয়ে আছেন, যাঁরা সারা বছর ধরে বিভিন্ন কোচিং ক্যাম্পে অনুশীলন করে যান ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। এঁদের অনেকে লিগ বা জেলা স্তরে সুযোগ পাবেনই, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। ঝুলন এবং বাংলার অন্যতম নির্বাচক মিঠু মুখোপাধ্যায় মিলে এই সব মেয়েদের জন্য একটি টুর্নামেন্ট শুরু করেছেন।

গত কয়েক বছর ধরেই এই টুর্নামেন্ট চলছে সম্পূর্ণ তাঁদের নিজেদের উদ্যোগ এবং খরচায়। কখনওসখনও কোনও সহৃদয় ব্যক্তি আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু বড় কোনও লগ্নিকারী বা স্পনসর ছিল না। তা সত্ত্বেও মোট চারটি দলের টুর্নামেন্টে অংশ নেন প্রায় ৬০ জন ক্রিকেটার। সকলকে উৎসাহিত করার জন্য প্রত্যেকের হাতে স্মারক পুরস্কার তুলে দেওয়ার অভিনব প্রথাও রয়েছে।

এ ছাড়া টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী বা সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর পুরস্কারও থাকে। প্রত্যেক বার প্রধান অতিথি হিসেবে আনা হয় ভারতের কোনও নামী ক্রিকেটারকে। ঘুরে গিয়েছেন ভারতীয় মহিলা দলের অধিনায়ক মিতালি রাজ। সেই অতিথিদের আনার খরচাও বহন করেন ঝুলন-রা নিজে। মিতালির যাতায়াতের ফ্লাইট খরচ যেমন পুরোটাই বহন করেছিলেন ঝুলন নিজে। থাকার ব্যবস্থা? মিতালির মতো তারকারা আমন্ত্রণ পেয়ে খুশি মনে থেকে গিয়েছেন ঝুলন বা মিঠু মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে।

‘‘বাংলায় অনেক প্রতিভাবান মেয়ে আছে, যারা ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখে। তারা কোনও ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না কারণ লিগ বা জেলা স্তরে সবাই সুযোগ পাবে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাদের কথা ভেবেই এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করার ভাবনা। যদি ম্যাচ না খেলতে পারে, তা হলে কী করে ওরা উৎসাহিত হবে? কী করে বুঝবে ওদের কী উন্নতি হচ্ছে বা হচ্ছে না? সারা বছর ধরে অনুশীলন করার প্রেরণাই বা কোথা থেকে পাবে?’’ বলছেন ঝুলন।

কোনও জাতীয় স্তরের তারকা ক্রিকেটার তাঁর রাজ্য বা শহরে উঠতি মেয়েদের কথা ভেবে নিজেই টুর্নামেন্টের আয়োজন করছেন, এমন উদ্যোগ নজিরবিহীন। ‘‘এক বার শিলিগুড়ির একটা দলকে আমরা এনেছিলাম। অনেক মেয়েই উঠে এসেছে এই টুর্নামেন্ট খেলে। উঠতিরা খুব উপভোগ করে, এটাই সেরা প্রাপ্তি,’’ যোগ করেন ঝুলন। লক্ষ্মীরতন শুক্লের মতো কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে আর্থিক সাহায্য করেছেন। এ বারে অভিষেক ডালমিয়া ন্যাশনাল ক্রিকেট ক্লাব (এনসিসি)-র তরফে টুর্নামেন্টের অনেকটা খরচ
বহন করছেন।

নির্বাচক মিঠু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অনেক মেয়েই উঠে এসেছে এই টুর্নামেন্ট থেকে। রিচা ঘোষ, প্রতিভা রানা-রা এখানে খেলে নজরে পড়ার পরে বাংলার হয়ে খেলছে। দরিদ্র ঘর থেকে আসা মেয়েদের ক্রিকেটের সরঞ্জাম দিয়েও সাহায্য করা হয়।’’ ঝুলনের পরামর্শে এ বার রঙিন পোশাকে সাদা বলে হচ্ছে টুর্নামেন্ট। যাতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সম্পূর্ণ অনুভূতি দেওয়া যায় উঠতিদের। অভিনব নিয়ম এই টুর্নামেন্টের। ‘‘বাংলার হয়ে খেলা কেউ এখানে খেলতে পারে না,’’ বলছেন ঝুলন, ‘‘ওরা তো ম্যাচ খেলছেই। যারা ম্যাচ খেলতে পারে না, শুধু তাদের জন্যই এই টুর্নামেন্ট।’’

শুধু নিজে স্বপ্নপূরণ করেই যেন থামতে চান না ঝুলন গোস্বামী। জন্ম দিতে চান বহু নতুন স্বপ্নেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhulan Goswami Women Cricketer Cricketer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE