Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
IPL 2020

ম্যাচের নায়ক বেয়ারস্টো-রশিদ, ৬৯ রানে পঞ্জাবকে হারাল হায়দরাবাদ

পাঁচ ম্যাচে চার পয়েন্টে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ রয়েছে পয়েন্ট তালিকার ছয়ে। আর সবার শেষে আছে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব।

উড়ছেন মাত্র ১২ রানে তিন উইকেট নেওয়া রশিদ। ছবি: আইপিএল।

উড়ছেন মাত্র ১২ রানে তিন উইকেট নেওয়া রশিদ। ছবি: আইপিএল।

সংবাদ সংস্থা
দুবাই শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ১৯:৩২
Share: Save:

১৭ বলে পঞ্চাশ! এ বারের আইপিএলের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি করে আশা জাগিয়ে ছিলেন নিকোলাস পুরান। তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তাঁর বিধ্বংসী মেজাজেই লড়াইয়ে ফিরেছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। কিন্তু, অন্য প্রান্তে ক্রমাগত উইকেট পড়তে থাকায় তাঁর লড়াই কাজে এল না। শেষ পর্যন্ত ট্র্যাজিক নায়ক হয়েই থেকে গেলেন ক্যারিবিয়ান তারকা। ২০২ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৩২ রানে থেমে গেল পঞ্জাব। ১৯ বল বাকি থাকতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ জিতল ৬৯ রানে।

ওপেনিংই হল পঞ্জাব ব্যাটিংয়ের শক্তি। দুই ওপেনারই এ বারের আইপিএলে টানছিলেন দলকে। কিন্তু, বৃহস্পতিবার কোনও ওপেনারই রান পেলেন না। দু’শোর বেশি রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বড় ধাক্কা খেয়েছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছিলেন ছন্দে থাকা ময়াঙ্ক আগরওয়াল (৬ বলে ৯)। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ১১ রানে পড়েছিল প্রথম উইকেট। দ্বিতীয় উইকেট পড়েছিল ৩১ রানে। খলিল আহমেদের বলে তিনে নামা প্রভসিমরন সিংহ (৮ বলে ১১) মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন কভারে প্রিয়ম গর্গের হাতে। একেবারেই ছন্দে ছিলেন না লোকেশ রাহুল (১৬ বলে ১১)। অভিষেক শর্মার বলে কেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। ৫৮ রানে পড়েছিল পঞ্জাবের তৃতীয় উইকেট।

তিন উইকেট পড়ার পর পুরানের পাওয়ার হিটিং বদলে দিয়েছিল ম্যাচের চেহারা। চতুর্থ উইকেটে ঝোড়ো গতিতে ৪৭ রান যোগ করলেন পুরান। তার মধ্যে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অবদান ১২ বলে মাত্র ৭। প্রিয়ম গর্গের দুরন্ত ফিল্ডিংয়ে রান আউট হলেন ম্যাক্সওয়েল। পঞ্জাবের চতুর্থ উইকেট পড়ল ১০৫ রানে। পঞ্চম উইকেট পড়ল ১১৫ রানে। রশিদ খানের গুগলিতে বোল্ড হলেন মনদীপ সিংহ (৬ বলে ৬)। ষষ্ঠ উইকেট পড়ল ১২৬ রানে। খলিল আহমেদের বলে মুজিব উর রহমানের ক্যাচ ধরেছিলেন (৩ বলে ১) উইকেটকিপার জনি বেয়ারস্টো। আম্পায়াররা আউট দেননি। তবে তাঁরা বল জমি ছুঁয়ে কিপারের হাতে গিয়েছে কি না তা দেখতে বলেন তৃতীয় আম্পায়ারকে। রিপ্লেতে দেখা যায় বল ঠিকঠাক পৌঁছেছে গ্লাভসে। আউট দেন তৃতীয় আম্পায়ার। মুজিব ফিরে আসতে আসতেই ঘুরে দাঁড়িয়ে ডিআরএস চান। বলে ব্যাট লেগেছে কি না, সেটাই যাচাই করতে চান তিনি। দেখা যায়, বল ব্যাটে ঠিকই লেগেছিল। ফলে, ফিরতেই হয় তাঁকে। যদিও প্রশ্ন থেকে গেল, ড্রেসিংরুম থেকে রিভিউ নেওয়ার পরামর্শ পেয়েছিলেন কি তিনি?

আইপিএলে বৃহস্পতিবারই প্রথম পঞ্চাশ করলেন পুরান। কিন্তু, সতীর্থদের থেকে সহায়তা পেলেন না। একক লড়াই থেমে গেল রশিদ খানের বলে। ৩৭ বলে ৭৭ রানের ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার ও সাতটি ছয়। ১২৬ রানে পড়ল পঞ্জাবের সপ্তম উইকেট। রশিদ খানের পরের বল ছিল গুগলি। যা উইকেটের সামনে পেয়ে গেল মহম্মদ শামির (১ বলে ০) পা। চার ওভারে মাত্র ১২ রানে তিন উইকেট নিলেন রশিদ।

১৩২ রানে পড়ল পঞ্জাবের শেষ দুই উইকেট। প্রথমে নটরাজনের ইয়র্কারে বোল্ড হলেন শেলডন কটরেল (২ বলে ০)। তিন বল পর অর্শদীপ সিংহের (তিন বলে ০) ক্যাচ জমা হল ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে। ১৬.৫ ওভারে শেষ হল পঞ্জাব। সানরাইজার্সের খলিল আহমেদ, নটরাজন, সন্দীপরা বুঝতে দিলেন না ভুবনেশ্বর কুমারের অভাব।

তার আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ছয় উইকেটে ২০১ রান তুলেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ওপেনিংয়ে ১৬০ ওঠার পর অবশ্য মনে হয়েছিল ২২৫ তুলে ফেলবে তারা। কিন্তু, পর পর উইকেট হারানোয় কোনও রকমে দু’শোর গণ্ডি পার করেছিল ডেভিড ওয়ার্নারের দল। বোঝা যায়নি, তার অনেক আগেই থেমে যাবে পঞ্জাবের লড়াই।

পঞ্জাবকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেললেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ওপেনার জনি বেয়ারস্টো। তবে নিশ্চিত সেঞ্চুরি হারালেন তিনি। ৯৭ রানে রবি বিষ্ণোইয়ের বলে এলবিডব্লিউ হলেন। আম্পায়ার প্রথমে আউট দেননি। রিভিউ নিয়েছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমে দেখা গেল লেগস্টাম্পে লাগছে বল। ফলে শতরানের দোরগোড়া থেকে ফিরতে হল তাঁকে। ৫৫ বলের ইনিংসে সাতটি চার ও ছয়টি ছয় মারলেন বেয়ারস্টো। প্রধানত তাঁর ইনিংসের জন্যই বড় রানে পৌঁছল সানরাইজার্স।

তবে তার আগে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাল শুরু করেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ওপেনিংয়ে ১৬০ তুলে ফেলেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও জনি বেয়ারস্টো। পাওয়ারপ্লে-র ছয় ওভারে উঠেছিল ৫৮। ১০০ রান এসেছিল ১০ ওভারে। ৮৩ বলে এসেছিল ইনিংসের দেড়শো।

দুই ওপেনারের মধ্যে তুলনায় বেশি আক্রমণাত্মক দেখিয়েছিল বেয়ারস্টোকে। তাঁর পঞ্চাশ এসেছিল ২৮ বলে। পাঁচটি চার ও দুটো ছয়ের সাহায্য়ে। রান না পাওয়ার জন্য তীব্র সমালোচিত হতে হয়েছিল তাঁকে। দল থেকে বাদ দেওয়ার চর্চাও চলছিল ক্রিকেটমহলে। মিডল অর্ডারে নামিয়ে আনা উচিত, এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু, এই ইনিংসে সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিলেন তিনি। তবে হাতের নাগাল থেকে সেঞ্চুরি ফসকে যাওয়ার আফশোস নিশ্চয়ই তাড়া করবে তাঁকে।

১৩ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩৮ তুলে ফেলেছিল সানরাইজার্স। বোঝাই যাচ্ছিল, বড় রানের পথে এগোচ্ছে তারা। অধিনায়ক ওয়ার্নার শুরুটা করেছিলেন ধীরে। তার পর ক্রমশ গতি বাড়ালেন ইনিংসের। ৩৭ বলে এসেছিল তাঁর পঞ্চাশ। যাতে ছিল পাঁচটি চার ও একটি ছয়। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বার হাফ সেঞ্চুরি করলেন তিনি। এই নিয়ে তাঁর পঞ্চাশের সংখ্যা ৫০। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিরাট কোহালি আইপিএলে ৪২ বার হাফ সেঞ্চুরি করেছেন।

দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউটের পরে প্রথম বলেই ফিরলেন ওয়ার্নার। ছয় মারতে গিয়ে লোপ্পা ক্যাচ তুললেন তিনি। রবি বিষ্ণোইয়ের বলে ওয়ার্নারের (৪০ বলে ৫২) ক্যাচ ধরলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১৫.১ ওভারে ১৬০ রানে প্রথম উইকেট হারাল সানরাইজার্স। এবং সেই ওভারেই ফিরলেন বেয়ারস্টো। ১৬১ রানে পড়ল হায়দরাবাদের তৃতীয় উইকেট। মণীশ পাণ্ডে (২ বলে ১) ফিরতি ক্যাচ দিলেন অর্শদীপ সিংহকে। ম্যাচে ফিরল পঞ্জাব।

বিষ্ণোই তার পর নিলেন আব্দুল সামাদকে (৭ বলে ৮)। ডিপ স্কোয়ার লেগে ক্যাচ ধরলেন অর্শদীপ সিংহ। সামাদ হলেন বিষ্ণোইয়ের তিন নম্বর শিকার। তিনিই পঞ্জাবের সফলতম বোলার (৩-২৯)। পরের ওভারে অর্শদীপ ফেরালেন প্রিয়ম গর্গকে (১ বলে ০)। ১৫ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারাল সানরাইজার্স। এর পর মহম্মদ শামির বলে অভিষেক শর্মা (৬ বলে ১২) ক্যাচ দিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। ১৯৯ রানে পড়ল সানরাইজার্সের ষষ্ঠ উইকেট। শামির চার ওভারে উঠল ৪০ রান।

প্রথম এগারোয় একটি পরিবর্তন ঘটিয়েছিল কমলা জার্সিধারীরা। সিদ্ধার্থ কলের জায়গায় দলে এসেছিলেন খলিল আহমেদ। পঞ্জাব দলে ঘটেছিল তিনটি পরিবর্তন। বাদ পড়েছিলেন ক্রিস জর্ডন, সরফরাজ খান ও হরপ্রীত ব্রার। দলে এসেছিলেন মুজিব উর রহমান, প্রবসিমরন সিংহ ও অর্শদীপ সিংহ। এর মধ্যে বাঁ-হাতি পেসার অর্শদীপ দুই উইকেট নিলেন ৩৩ রানের বিনিময়ে। কিন্তু মুজিবের চার ওভারে উঠল ৩৯ রান। আরও একটি পরিবর্তনের ভাবনা ছিল পঞ্জাবের। কোচ অনিল কুম্বলে জানালেন, ক্রিস গেলকে খেলাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু, খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য খেলতে পারলেন না ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি।

আরও পড়ুন: প্রতিবেশীকে জল দেওয়ার সময়ে খুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ক্রিকেটারের ভাই​

আরও পড়ুন: ফিনিশার হিসেবে অন্য কাউকে খুঁজে নিক ধোনি, বলছেন লারা​

খেলা শুরুর আগে পাঁচ ম্যাচে চার পয়েন্টে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ছিল পয়েন্ট তালিকার ছয়ে। জয়ের ফলে ছয় ম্যাচে ছয় পয়েন্টে তিনে উঠে এল তারা। আর সবার শেষে আরও পাকাপাকি জায়গায় বসল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। এই হারের পর ছয় ম্যাচে পকেটে মাত্র দুই পয়েন্ট। শুরুতে তাদের তাড়া করেছিল দুর্ভাগ্য। জেতা ম্যাচ হাতের মুঠো দিয়ে গলে গিয়েছিল পঞ্জাবের। তা ছাড়া বড্ড বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে পঞ্জাব, মনে হচ্ছিল ক্রিকেটমহলের। কিন্তু, এই ম্যাচে একেবারেই ছন্দে দেখাল না তাদের। পাঁচ হারের পর মারাত্মক চাপে পড়ে গেলেন পঞ্জাব কোচ অনিল কুম্বলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kings XI Punjab Sunrisers Hyderabad IPL 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE