Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
IPL 2020

‘কলকাতা আমার, ইডেন আমার, কিন্তু কেকেআর কখনওই আমার নয়’

আইপিএলে প্রথম বার নেমেই নজর কেড়েছিলেন শ্রীবৎস। পেয়েছিলেন সুনীল গাওস্করের প্রশংসা। সেটা ২০০৮, তখন খেলতেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে।

আগ্রাসী মেজাজে শ্রীবৎস। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।

আগ্রাসী মেজাজে শ্রীবৎস। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।

সৌরাংশু দেবনাথ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৪:৩৫
Share: Save:

এক যুগ হয়ে গেল! দল বদলেছে, বদলেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি, পাল্টেছে জার্সির রং। কিন্তু ২০০৮ থেকে ২০২০,আইপিএলে মোটামুটি নিয়মিতই শ্রীবৎস গোস্বামী। এ বারও যেমন গতবারের মতো কমলা ব্রিগেডের অন্যতম সদস্য হাওড়ার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।

আইপিএলে প্রথম বার নেমেই নজর কেড়েছিলেন শ্রীবৎস। পেয়েছিলেন সুনীল গাওস্করের প্রশংসা। সেটা ২০০৮, তখন খেলতেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে। স্মৃতিচারণে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “হ্যাঁ, প্রথম ম্যাচেই পঞ্চাশ করেছিলাম। ম্যাচের সেরাও হয়েছিলাম। সেই বছর সেরা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটার হয়েছিলাম আইপিএলে। তবে ব্যক্তিগত স্মৃতির চেয়েও আমার মনে দাগ কেটে যায়আইপিএলেরআবহটা। সাজঘরে সবার সঙ্গে সময় কাটানো, বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।”

কেমন সেই আবহ? আইপিএলের কিছুদিন আগে থেকেই শিরায় শিরায় যার টান টের পান তিনি? শ্রীবৎস বললেন, “যখন অন্য দেশ থেকে প্লেয়াররা আসতে থাকে, যখন ফ্র্যাঞ্চাইজির সবার সঙ্গে দেখা হয়, যখন থেকে প্র্যাকটিস শুরু হয়, নিজের মধ্যেই একটা উন্মাদনা অনুভব করি। দারুণ লাগে। বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে গল্প হয়, আড্ডা হয়, কত কী শেখা যায়। প্রতিবারই মনে হয় যে, এ বার নতুন কিছু শিখব। আইপিএলে একটা ভাল দলের ড্রেসিংরুমের অংশ হওয়াই মনে রাখার মতো একটা স্মৃতি। দেড়-দু’মাস আমরা একটা ড্রেসিংরুমে থাকি, দলের সাফল্য-ব্যর্থতা ভাগ করে নিই। টিমবাসে যাতায়াত থেকে উড়ান, একসঙ্গে থাকি সবাই। যে যার মতো নিজেদের মতামত দিই, অন্যের কথা শুনি। এই অনুভূতিটাই আলাদা।”

আরও পড়ুন: ‘শাহরুখ নিয়ে আমার ভাল স্মৃতি নেই’, প্রথম আইপিএলের বিস্ফোরক স্মৃতিচারণে প্রাক্তন সিএবি প্রেসিডেন্ট

এ বারের অনুভূতি অবশ্য একেবারে আলাদা। করোনা অতিমারির জেরে আসর বসেছে মরুভূমির দেশে। সেখানে বার বার কোভিড টেস্ট, কোয়রান্টিন পর্ব কাটিয়ে শুরু হয়েছে অনুশীলন। একা একা হোটেলের ঘরের সেই বন্দিজীবনের অভিজ্ঞতা সুখের নয়। নেট শুরুর পর অবশ্য ধীরে ধীরে ফেরা গিয়েছে পুরনো অভ্যাসে।

আইপিএলে খেলার সূত্রে অনেক বন্ধু পেয়েছেন শ্রীবৎস। সেই গল্প শোনালেন, “যখন আরসিবি-তে খেলতাম, তখন কেভিন পিটারসেনের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছিল। যা এখনও টিকে রয়েছে। এখনও ওর সঙ্গে কথা হয়। কেপি যখন ভারতে আসে, মাঝে মাঝে দেখাও হয়। রস টেলরের সঙ্গেও সম্পর্ক খুব ভাল। কলকাতায় যখন রেস্তোঁরা খুললাম, একবার সেখানে পুরো নিউজিল্যান্ড দল নিয়ে এসেছিল রস টেলর। এখন সানরাইজার্সে একসঙ্গে খেলি কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে। কেনের সঙ্গেও ভাল বন্ধুত্ব রয়েছে আমার। সানরাইজার্সে খেলি বলে ডেভিড ওয়ার্নার, জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গেও বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। আবার ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তো রয়েইছে। সিদ্ধার্থ কল, মণীশ পাণ্ডের সঙ্গে আমি অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ভারতীয় দলেও খেলেছি। ২০০৮ সালে বিরাট কোহালির নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলেও আমার সঙ্গে সিদ্ধার্থ-মণীশরা ছিল।”

আইপিএলে এখনও পর্যন্ত রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ছাড়াও রাজস্থান রয়্যালস ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছেন শ্রীবৎস। এখন তিনি সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সদস্য। প্রত্যেক আইপিএলের আগে কী টার্গেট থাকে নিজের কাছে? উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান বললেন, “একটা লক্ষ্য তো থাকেই। সবসময় নিজেকে তৈরি রাখতে চাই। খুব বেশি তো ম্যাচ খেলতে পাই না। তাই নিজেকে বলতে থাকি যে, যখনই সুযোগ আসুক না কেন, তখন যেন অপ্রস্তুতে না পড়ে যাই। নিজেকে প্র্যাকটিসে এমন ভাবে তৈরি রাখি যে প্রয়োজন পড়লে যেন দলের কাজে আসতে পারি।”

আরও পড়ুন: ‘আইপিএলে সব বোলারকে মার খেতে দেখেছি, আমিও মার খেতেই পারি’​

আইপিএলের এত বছর খেলেও ২৯টির বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি। ২০১১ সালেই সবচেয়ে বেশি ১১ ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০১০ সালে আবার একটার বেশি ম্যাচ খেলেননি। কোনও ম্যাচ খেলেননি, এমন মরসুমও এসেছে। লম্বা মরসুমে দিনের পর দিন যখন প্রথম এগারোর বাইরে থাকতে হয়, তখন হতাশা গ্রাস করে না? এল চটজলদি উত্তর, “এখানেই তো চ্যালেঞ্জ। খারাপ লাগতেই পারে। কিন্তু তৈরি থাকতে হয় সব সময়। আর মন খারাপ করে বসে থাকলে তো চলেও না। দলের পরিবেশের কথা মাথায় রাখতে হয়। তাই সব সময় ১০০ শতাংশ দেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হয়।”

আইপিএলে কলকাতা ছাড়া অন্য দলেই থেকেছেন শ্রীবৎস। কখনও কি মনে হয়নি যে নিজের শহর, নিজেদের লোকের বিরুদ্ধেই খেলতে হচ্ছে? তাঁর উত্তর, “কলকাতা ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে আবেগ টের পাইনি কখনও। তবে ইডেনে কলকাতার বিরুদ্ধে নামলে অন্যরকম একটা অনুভূতি অবশ্যই হয়। বাংলার হয়ে যখন খেলি তখন ইডেনেই সময় কাটে আমাদের। কলকাতা আমাদের হোম টাউন। জন্ম থেকেই এখানে খেলছি। তবে এমন অনুভূতি হয় না যে কেকেআর আমার নিজের। শহরটা আমার নিজের ঠিকই, মাঠটা আমার, ইডেনও আমার, কিন্ত কেকেআর তা নয়!”

বোঝা গেল, কেকেআর নিছকই কলকাতার ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়ে থেকেছে। জিততে পারেনি কলকাতা, বাংলা, বাঙালির হৃদয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE