স্টুডিও থেকে বেরিয়ে মুম্বইয়ের হোটেলে ফিরে এসেছি, অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে। আমাদের হিন্দি কমেন্ট্রিটা মোহালিতে হচ্ছে না। মুম্বই থেকে হচ্ছে। সে যা-ই হোক। আসল কথা হল, এই ম্যাচ রিপোর্ট লেখার সময়ও ঘোরটা কাটেনি।
আমি নিশ্চিত, বাকিদেরও কাটেনি। বাকিরা মানে, আমার সতীর্থ কমেন্টেটররা। বীরু পাজি (বীরেন্দ্র সহবাগ), জাক (জাহির খান)— এরা। ওদেরও তো ব্যাপারটা দেখে একই রকম বিস্মিত দেখাচ্ছিল। বারবার আমরা বলাবলি করছিলাম যে, রান তাড়া করার সময় এ তো মাস্টারস্ট্রোক। ভাবতেই পারিনি, ভারত আমাদের এমন প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ দিতে পারে।
না, কোহালির দেড়শো রানের ইনিংসটা কোনও সারপ্রাইজ নয়। ও যে লেভেলে ব্যাটিংকে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে এ বার থেকে ওর ইনিংস বোঝাতে ডিকশনারিতে আরও কিছু নতুন বিশেষণ জুড়তে হবে। ধোনির আশি রান, সেটাও নয়। ও এখনও কী পারে না পারে, জানি। চমকে ধোনিই দিয়েছে, তবে অন্য জায়গায়।
চার নম্বরে উঠে এসে।
স্টুডিওয় বসে প্রথমে আমরা কেউই বিশ্বাস করতে পারিনি যে, সত্যি ধোনি নামছে। ভারতীয় ইনিংসের দশটা ওভারও তখন হয়নি। পাওয়ার প্লে চলছে। তখন কি না ধোনি! দ্রুত স্ট্যাটসবুক খুলে দেখা শুরু হল যে, চার নম্বরে ধোনি কেমন করে। দেখলাম, ভালই করে। এমএসের সেরা ব্যাটিং গড় চারেই!
জানি না, পরের ম্যাচে ধোনিকে ব্যাটিং অর্ডারে নিজের পজিশন পাল্টাতে দেখব কি না। কিন্তু আমার মতে, এখন থেকে এটাই ওর ব্যাটিং পজিশন হওয়া উচিত। পাঁচও নয়, নাম্বার ফোর। ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে উপরে এনেই তো পাঁচ বছর আগে বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতিয়েছিল ধোনি। সবাই সে দিন আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল, যুবরাজ সিংহের বদলে ওকে ওয়াংখেড়ে ড্রেসিংরুম থেকে বেরোতে দেখে।
আসলে নিয়মিত ধোনি উপরে এলে লাভ একটা নয়, দু’টো। প্রথমটা, ধোনির নিজের। চারে এলে ও অনেক সময় পাবে নিজের ইনিংস গুছিয়ে নেওয়ার। মাঝের ওভারগুলো কন্ট্রোল করতে পারবে অনেক বেশি, চাপও কমবে। ছয় বা সাতে গেলে যা সম্ভব নয়। সেখানে ধোনি এটা জেনে নামে যে, ও আউট হলেই সব শেষ। চাপ তখন বেড়ে যায় এমনিই। স্ট্রাইকরেটও পড়তে থাকে। বড় শট খেলার আগে ভাবতে হয়। দ্বিতীয় লাভটা, ভারতের দিক থেকে আরও বড়। ধোনি উপরে আসা মানে কিন্তু কোহালির অনেক বেশি সাপোর্ট পেয়ে যাওয়া।
বলছি না, এত দিন কোহালি সেটা পায়নি। বলছি, কোহালি সেটা আরও ভাল ভাবে পাবে ধোনিকে সঙ্গে পেলে। সোজাসুজি বলছি, কোহালিকে যদি মণীশ পাণ্ডের সঙ্গে পার্টনারশিপ করতে হয়, বা ধোনিকে কেদার যাদবের সঙ্গে, তাতে যা লাভ হবে তার চেয়ে অনেক বেশি হবে কোহালি-ধোনি পার্টনারশিপ হলে। আজকেরটাই ধরা যাক। দু’জন মিলে দেড়শো রানের পার্টনারশিপ করে টিমকে জিতিয়ে বেরিয়ে গেল। আর সেটা কিন্তু শুধু বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারিতে করেনি। করেছে সিঙ্গলস, টু’জেও।
ধোনি-কোহালি ক্রিজে থাকলে যা বিশাল প্লাস পয়েন্ট। এক রানকে দুই করবে, দুইকে তিন করবে, স্রেফ দৌড়েই বিপক্ষকে ম্যাচ থেকে হঠিয়ে দেবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ মনে নেই? দু’জনের বোঝাপড়াকে এখনই দুর্দান্ত বলব না। বেশি তো খেলেনি। কিন্তু খেললে হয়ে যাবে। ওয়ান ডে ম্যাচ বার হয় ওই মাঝের ওভারগুলোয়। সেখানে কোহালি-ধোনি একসঙ্গে থাকা মানে জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে অনেকটা। কোহালি জেনে যাবে, উল্টো দিকেও এমন একজন আছে যে কি না ম্যাচকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ওরই মতো। রান আটকে গেলে দু’টো ছক্কা মেরে যে চাপ হঠিয়ে দেবে অনায়াসে। ওকে সব কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। প্রথমে ব্যাটিংয়ের চেয়েও রান তাড়া করার সময় ধোনি-কোহালির পার্টনারশিপটা বেশি জরুরি। মোহালিতে ২৮৬ তাড়া করা সহজ ছিল না। কিন্তু সেটাই সহজে করে দিল ধোনি-কোহালির পার্টনারশিপ। ভারতকে জিতিয়ে দিল সাত উইকেটে, সিরিজে এগিয়ে দিল ২-১।
হালফিলে ধোনিকে ব্যাটিং অর্ডারে উঠে আসতে দেখে একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে। ও বলছে ঠিকই, ফিনিশারের ভূমিকা থেকে সরে আসতে চায়। কিন্তু মনে হয়, আদতে তা নয়। আসলে ও ফিনিশারের রোলটাকে নতুন মডেলে পেশ করতে চায়। যেটা গত দেড় বছর ধরে কোহালি করে আসছে। ফিনিশার মানে এই নয় যে তাকে শেষ দশ ওভারে নেমে ম্যাচ শেষ করতে হবে। তিন নম্বরেও নেমেও সেটা করা যায়। কোহালি যা করে। ওর ২৬-টা ওয়ান ডে সেঞ্চুরির মধ্যে সতেরোটা করেছে ও রান তাড়া করার সময়। বেশির ভাগ সময় অপরাজিত থেকে গিয়েছে। কোহালি যদি করে, তা হলে ধোনিও সেটা ভাববে না কেন? ওয়ান ডে-তে ন’হাজার রান তো রবিবার ওরও হয়ে গেল। ধোনি বা বিরাটের মধ্যে যে কেউ একজন শেষ পর্যন্ত থাকলেই তো হয়ে গেল। রবিবার যেমন বিরাট দেড়শো অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করে দিল। ফিনিশিং মডেল পাল্টানোর কথা বলছিলাম। ধোনিদের স্ট্র্যাটেজি দেখে মনে হচ্ছে, টিম লাস্ট বল ফিনিশ থেকে সরে আসছে। চাইছে পঁয়তাল্লিশ ওভারের মধ্যে ম্যাচ শেষ করে দিতে। মনে হয়, তাই ধোনির উপরে ওঠা।
যে কারণেই হোক, শুধু এটা চলুক। ধোনি উপরে যাক। গিয়ে ব্যর্থ হলে কেদার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্যরা দায়িত্ব নিক। চাপে পড়লেই শেখে লোকে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকেও তো চাপ ঘাড়ে নিয়েই বিশ্বসেরা ফিনিশার হতে হয়েছিল!
মোহালির স্কোর
নিউজিল্যান্ড
গাপ্টিল এলবিডব্লিউ উমেশ ২৭
ল্যাথাম ক পাণ্ড্য বো কেদার ৬১
উইলিয়মসন এলবিডব্লিউ কেদার ২২
টেলর স্টা ধোনি বো মিশ্র ৪৪
অ্যান্ডারসন ক রাহানে বো কেদার ৬
রঙ্কি স্টা ধোনি বো মিশ্র ১
নিশাম ক কেদার বো উমেশ ৫৭
স্যান্টনার ক কোহালি বো বুমরাহ ৭
সাউদি বো উমেশ ১৩
হেনরি নআ ৩৯
বোল্ট বো বুমরাহ ১
অতিরিক্ত ৭, মোট ৪৯.৪ ওভারে ২৮৫।
পতন: ৪৬, ৮০, ১৫৩, ১৬০, ১৬১, ১৬৯, ১৮০, ১৯৯, ২৮৩, ২৮৫।
বোলিং: উমেশ ১০-০-৭৫-৩, পাণ্ড্য ৫-০-৩৪-০, বুমরাহ ৯.৪-০-৫২-২, কেদার ৫-০-২৯-৩, পটেল ১০-০-৪৯-০, মিশ্র ১০-০-৪৬-২।
ভারত
রোহিত এলবিডব্লিউ সাউদি ১৩
রাহানে ক স্যান্টনার বো হেনরি ৫
কোহালি নআ ১৫৪
ধোনি ক টেলর বো হেনরি ৮০
মণীশ নআ ২৮
অতিরিক্ত ৯, মোট ৪৮.২ ওভারে ২৮৯-৩।
পতন: ১৩, ৪১, ১৯২।
বোলিং: হেনরি ৯.২-০-৫৬-২, বোল্ট ১০-০-৭৩-০, সাউদি ১০-০-৫৫-১, স্যান্টনার ১০-০-৪৩-০, নিশাম ৯-০-৬০-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy