Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
আইপিএলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সৌরভ

শ্রীনি-বিরোধীতে বোর্ডের কমিটি ভরে দিয়ে প্রকাশ্য আক্রমণাত্মক ডালমিয়া

আইপিএল শুরুর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে পরের পর উদ্ভাবনী শটে অষ্টম আইপিএলের যেন উৎসমুখই খুলে দিয়ে গেলেন জগমোহন ডালমিয়া! গোটা আইপিএল যদি এমন প্রতীকী ভঙ্গিতে চলে, বিনোদনের ফোয়ারা ছোটা উচিত। সোমবার দুপুরেও ভারতীয় ক্রিকেট মহলে কেউ আঁচ পাননি সল্টলেকে আইপিএল উদ্বোধনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে নিভৃতে যে এমন মারকাটারি কিছু ঘটতে চলেছে! অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন গত ৩০ মার্চ আনন্দবাজারের খেলার পাতার পূর্বাভাস অনুযায়ী রাজীব শুক্ল আইপিএলের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে এ দিন ঘোষিত হবেন।

গৌতম ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

আইপিএল শুরুর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে পরের পর উদ্ভাবনী শটে অষ্টম আইপিএলের যেন উৎসমুখই খুলে দিয়ে গেলেন জগমোহন ডালমিয়া! গোটা আইপিএল যদি এমন প্রতীকী ভঙ্গিতে চলে, বিনোদনের ফোয়ারা ছোটা উচিত।

সোমবার দুপুরেও ভারতীয় ক্রিকেট মহলে কেউ আঁচ পাননি সল্টলেকে আইপিএল উদ্বোধনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে নিভৃতে যে এমন মারকাটারি কিছু ঘটতে চলেছে! অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন গত ৩০ মার্চ আনন্দবাজারের খেলার পাতার পূর্বাভাস অনুযায়ী রাজীব শুক্ল আইপিএলের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে এ দিন ঘোষিত হবেন। কিন্তু কেউ ভাবেনি রাজীব-সহ বাকি কমিটি নির্বাচনে এ ভাবে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে হা-রে-রে-রে করে নেমে পড়বেন ডালমিয়া।

ভারতীয় ক্রিকেট মহল সোমবার বিস্ফারিত হয়ে লক্ষ্য করল, কমিটি নির্বাচনে সম্পূর্ণ শ্রীনির বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন ডালমিয়া। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিনা বাক্যব্যয়ে শ্রীনি টেকনিক্যাল কমিটি প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সৌরভ সসম্মানে ফেরত এলেন আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে। রবি শাস্ত্রী স্বপদে বহাল রইলেন। সরানো হল গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথকে।

ক্রিকেট বোর্ডে তিনটে কমিটি প্রধানের পদ সবচেয়ে লোভনীয়। আইপিএল, ফিনান্স আর মার্কেটিং। তিনটেতেই ডালমিয়া বসিয়েছেন শ্রীনি বিরোধী শিবিরের লোক। তিন কমিটির প্রধানের মধ্যে আরও মিল, এঁরা প্রত্যেকেই শ্রীনি মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে এ বারের নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। রাজীব শুক্ল, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, চেতন দেশাই।

শ্রীনি চেয়েছিলেন সুনীল নারিনের বিরুদ্ধে চাকিংয়ের অভিযোগ অব্যাহত রাখতে। নারিন যাতে আইপিএল না খেলতে পারেন। ডালমিয়া উল্টে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান স্পিনারকে।

শ্রীনি চেয়েছিলেন আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিনিয়র লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে বহালের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে তুলে নিন ডালমিয়া। শ্রীনি মনে করেন ঊষাবাবু নানা ভাবে আদিত্য বর্মাকে সাহায্য করেছেন। এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানে শ্রীনির বিরুদ্ধে বলেছেন। ডালমিয়া পাত্তাই দেননি। ঊষাবাবুকে সরানওনি।

শ্রীনি চেয়েছিলেন বিশ্বরুপ দে-কে এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট করতে। কিন্তু তাঁকে করা হয়েছে মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান। তাঁকে ডালমিয়া ফিনান্স কমিটিতেও রেখেছেন কিন্তু ওই পদটা দেননি। সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় আগের বারের মতোই আইপিএল কাউন্সিলে আছেন। গত বার কমিটিতে বাংলার অবস্থান মোটেই সন্তোষজনক ছিল না। সেখানে এ বার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির হেড ডালমিয়া নিজেকেই রেখেছেন। মার্কেটিং কমিটিতে রেখেছেন চিত্রক মিত্র এবং গৌতম দাশগুপ্তকে।

শ্রীনি চেয়েছেন এখনই বোর্ড ঘোষণা করুক যে, মুস্তাফা কামালের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাংলাদেশ সফর বাতিল করলাম। কিন্তু ডালমিয়া চিরকাল বাংলাদেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে চলেছেন। তিনি এমন সিদ্ধান্ত হুড়ুম-ঢুড়ুম নিতে যাবেন কেন?

তাই নির্বাচনে শ্রীনির আশীর্বাদ-ধন্য হলেও জিতে উঠে তাঁর একটা অনুরোধও (নির্দেশ পড়া যেতে পারে) মানছেন না ডালমিয়া। এতে প্রচণ্ড চটে থাকা শ্রীনি ক’দিন আগে বোর্ড প্রেসিডেন্টকে শাসান যে, তেমন হলে তিনি এই সর্বোচ্চ চেয়ারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন। বোর্ডের সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ জন সদস্য মিলে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন। এর পর সেটা পাস করাতে হয় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন-সহ। শ্রীনির ১৫-১৬ ভোট থাকলেও দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন নেই।

কিন্তু আপাতত ডালমিয়ার ওপর তিনি এতই ক্ষুব্ধ যে, দিন তিনেক আগে ঘোষিত শত্রু শরদ পওয়ারের সঙ্গে বৈঠক অবধি করেছেন। ঘনিষ্ঠমহলে শ্রীনি তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছেন ডালমিয়া-পুত্র অভিষেক সম্পর্কেও। বলেছেন, ডালমিয়ার হয়ে ইদানীং তিনিই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। পওয়ার আর তিনি একজোট হয়ে গেলে ডালমিয়াকে সেপ্টেম্বর বা তারও আগে সরানো শুধু সময়ের অপেক্ষা, এমনই মনে করেন শ্রীনি।

সমস্যা হল, শশাঙ্ক মনোহরকে কিছুতেই রাজি করানো যাচ্ছে না। তিনি পওয়ারকে বলে দিয়েছেন, শ্রীনির সঙ্গে কিছুতেই জোট বাঁধবেন না। দুই, সচিব অনুরাগ ঠাকুর এই শ্রীনিবিরুদ্ধবাদে পুরোপুরি ডালমিয়ার সঙ্গে। এত উগ্রবাদী সিদ্ধান্তের সেটাও একটা ব্যাখ্যা।

শ্রীনি বর্তমান প্রেসিডেন্টকে আজই সরাতে চান অনাস্থা প্রস্তাব এনে।

কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাঁর নিজের সেপ্টেম্বরের পর আইসিসি চেয়ারম্যান পদে থাকাই না বিপন্ন হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE