Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জলজের সেঞ্চুরিতে হারের আশঙ্কায় বাংলা

বুধবার কেরলের ইনিংস শেষ হওয়ার পরে তিন ওভার ব্যাট করার নির্দেশ দেওয়া হয় মনোজদের। যা আরও বাড়ায় বাংলার সমস্যা। ২.২ ওভার শেষে বাংলার স্কোর ৫-১। পিছিয়ে ১৩৯ রানে। আবারও ব্যর্থ বাঁ হাতি ওপেনার কৌশিক ঘোষ (১)। 

পরীক্ষা: কেরলের ইনিংসের পরে ড্রেসিংরুমের পথে মনোজ, শামি, ঈশান, ডিন্ডা ও ঋত্বিক। প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে গিয়ে চাপে বাংলা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

পরীক্ষা: কেরলের ইনিংসের পরে ড্রেসিংরুমের পথে মনোজ, শামি, ঈশান, ডিন্ডা ও ঋত্বিক। প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে গিয়ে চাপে বাংলা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫০
Share: Save:

মহম্মদ শামি, অশোক ডিন্ডা, ঈশান পোড়েল, মুকেশ কুমারদের সামনে ছিল ইডেনের গতিময় পিচ। যার সদ্ব্যবহার একেবারেই করতে পারল না মনোজ তিওয়ারির দল। দ্বিতীয় দিনের শেষে যা পরিস্থিতি, তাতে তিন পয়েন্টের সম্ভাবনা তো একেবারেই নেই। কেরল জিতলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রথম ইনিংসে বাংলার ১৪৭ রানের জবাবে ২৯১ রানে শেষ হয় কেরলের ইনিংস। যা সচিন বেবিদের এগিয়ে রাখে ১৪৪ রানে। নেপথ্যে জলজ সাক্সেনার লড়াকু ১৪৩ রান। গত ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১৩৩ রান করার পরে বাংলার বিরুদ্ধেও ধারাবাহিক তিনি।

বুধবার কেরলের ইনিংস শেষ হওয়ার পরে তিন ওভার ব্যাট করার নির্দেশ দেওয়া হয় মনোজদের। যা আরও বাড়ায় বাংলার সমস্যা। ২.২ ওভার শেষে বাংলার স্কোর ৫-১। পিছিয়ে ১৩৯ রানে। আবারও ব্যর্থ বাঁ হাতি ওপেনার কৌশিক ঘোষ (১)।

মহম্মদ শামি ও অশোক ডিন্ডা প্রত্যাশা মতোই দিনটি শুরু করেছিলেন। দিনের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ডিন্ডার বাউন্সার ফিরিয়ে দেয় বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান রোহন প্রেম (১৮)-কে। হুক করতে গিয়ে ব্যর্থ হন রোহন। তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটকিপার বিবেক সিংহের গ্লাভসে। দলের রান তখন ৫৩। চার ওভার পরেই শামি ফিরিয়ে দেন সঞ্জু স্যামসনকে। ব্যাট নামানোর আগেই সঞ্জুর প্যাডে আছড়ে পড়ে শামির গতিময় ইনসুইং। তখনও কেরল পিছিয়ে ৯৩ রানে। ম্যাচে ফেরার যোগ্য সুযোগ ছিল বাংলার। কিন্তু জলজদের চাপ হাল্কা করতে সাহায্য করেন ঈশান পোড়েল। প্রথম স্পেলে বল করতে এসে চার ওভারে ৩০ রান দেন তরুণ পেসার।

প্রথম ঘণ্টায় ডিন্ডা, শামি পিচ থেকে উপযুক্ত সাহায্য পাচ্ছিলেন। কারণ, ব্যাটসম্যানের শরীরের কাছে বল করছিলেন দুই অভিজ্ঞ পেসার। কিন্তু ঈশান পিচের আর্দ্রতা কাজে লাগাতে ব্যর্থ। যে পিচে ব্যাটসম্যানকে সামনের পায়ে খেলালেই সমস্যায় ফেলা যাচ্ছে, সেখানে ক্রমাগত শর্ট বল করেন। জলজের বিরুদ্ধে প্রথম ওভার থেকেই লেগসাইডে পাঁচ ফিল্ডার নিয়ে বল শুরু করেন ঈশান। ডিপ স্কোয়ার লেগ ও ডিপ মিড উইকেটে ফিল্ডার রেখে পেসারকে বল করতে সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু ঈশান ব্যতিক্রম। জলজকে তিনি বাধ্য করেন হুক ও পুল শট মারতে। কিন্তু ঈশানের প্রচেষ্টা একেবারেই বিফলে যায়। লেগে পাঁচ ফিল্ডারের মধ্য দিয়েই বাউন্ডারি খুঁজে নেন জলজ। যা দেখে মাঠ ছাড়েন সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ঈশানের ব্যাখ্যা, ‘‘জলজ পুল শটে সাবলীল নয়। ওর ভিডিয়ো দেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দল।’’ তরুণ পেসারের এই স্পেলের পর থেকেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন কেরল অলরাউন্ডার। ২৭তম ওভারে একশো রানে পৌঁছয় বাংলার বিপক্ষ।

৩১তম ওভারে শামিকে ফিরিয়ে আনেন মনোজ। সেই স্পেলের তৃতীয় বলেই সচিন বেবি (২৩)-কে ফিরিয়ে দেন শামি। ঈশানকে বুঝিয়ে দেন, একজন পেসার কী ভাবে পিচের আর্দ্রতা ব্যবহার করেন। ১০৯ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় কেরল। পঞ্চম উইকেট হারায় ১১৪ রানে। এক দিক থেকে উইকেট পড়লেও জলজ কিন্তু পিচ কামড়ে পড়ে ছিলেন। তাঁকে বাড়তি অক্সিজেন দেন ঈশান। ষষ্ঠ উইকেটে ভি জগদীশের সঙ্গে ১১৯ রানের জুটি গড়েন জলজ। তাঁদের জুটিই বাংলার প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার আশায় জল ঢেলে দেয়। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে লেংথ বদলে ফল পান ঈশান। দিনের শেষে তাঁর ঝুলিতে চার উইকেট। বাসিল থাম্পি (৪), এম ডি নিধীশ (৪)-কেও তিনিই ফেরান। তাঁরই বল কাট করতে গিয়ে বিবেকের তালুবন্দি হন জলজ।

ইডেনের গতিময় পিচ থেকে কেরল প্রথম দিন সাহায্য পেলেও দ্বিতীয় দিনের পিচে সেই গতি কিছুটা হলেও কম ছিল। তার জলজ্যান্ত উদাহরণ শামি। এই পিচে ২৬ ওভার বল করেও বিপক্ষের ব্যাটিংয়ে সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি ভারতীয় টেস্ট দলের পেসার। ডিন্ডাও ১৯ ওভারে ৪১ রান দিয়ে নেন দু’উইকেট। এক উইকেট মুকেশের।

ভারতীয় বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী ইনিংস প্রতি ১৫ ওভার বল করানোর কথা ছিল শামিকে। দু’ইনিংস মিলিয়ে যা দাঁড়ায় মোট ৩০ ওভার। কিন্তু প্রথম ইনিংসেই ২৬ ওভার বল করেন শামি। তাঁর পরিসংখ্যান ২৬-৩-১০০-৩। বাংলার বোলারদের মধ্যে তিনিই সব চেয়ে বেশি ওভার করেন। শেষ দিন মনোজ জানিয়েছিলেন, ১৫ ওভারের থেকে চার ওভার বেশি করানো যেতে পারে শামিকে দিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয় দিনই ২১ ওভার বল করেন তিনি। শামির কথায়, ‘‘আমি নিজেই বেশি করে বল করতে চেয়েছি। প্রথমত বাংলাকে ভাল জায়গায় পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম। দ্বিতীয়ত অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে এটাই আমার শেষ প্রস্তুতির সুযোগ।’’

তৃতীয় দিনে বড় পরীক্ষার সামনে পড়তে চলেছেন বাংলার ব্যাটসম্যানেরা। তারই মধ্যে রান পাচ্ছেন না দলের মূল ব্যাটসম্যান সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। গত চার ইনিংসে তাঁর রান ৫৮। এখন সেটাই দেখার, বৃহস্পতিবারের ইডেন সুদীপ ও তাঁর দলকে ভাল জায়গায় ফিরিয়ে দিতে পারে কি না।

স্কোরকার্ড
বাংলা ১৪৭ ও ৫-১
কেরল ২৯১

কেরল (আগের দিন ৩৫-১-এর পর থেকে প্রথম ইনিংস)
জলজ সাক্সেনা ক বিবেক বো ঈশান ১৪৩
রোহন প্রেম ক বিবেক বো ডিন্ডা ১৮
সঞ্জু স্যামসন এলবিডব্লিউ বো শামি ০
সচিন বেবি ক অনুষ্টুপ বো শামি ২৩
সলমন নিজ়ার ক মনোজ বো মুকেশ ৫
জগদীশ এলবিডব্লিউ বো ঈশান ৩৯
এ আর চন্দ্রন ন. আ. ৩২
বাসিল থাম্পি বো ঈশান ৪
এম ডি নিধীশ ক মনোজ বো ঈশান ৪
সন্দীপ ওয়ারিয়ের বো ডিন্ডা ২
অতিরিক্ত ২০
মোট ২৯১
পতন: ১-১ (কার্তিক, ১.২), ২-৫৩ (প্রেম, ১৫.৫), ৩-৫৪ (স্যামসন, ১৮.২), ৪-১০৯ (সচিন, ৩০.৩), ৫-১১৪ (সলমন, ৩১.৬), ৬-২৩৩ (জগদীশ, ৬৩.৪), ৭-২৫২ (জলজ, ৬৭.৪), ৮-২৫৮ (থাম্পি, ৬৯.৬), ৯-২৬৮ (নিধীশ, ৭৩.৩), ১০-২৯১ (সন্দীপ, ৮২.৬)।
বোলিং: অশোক ডিন্ডা ১৯-৩-৪১-২, মহম্মদ শামি ২৬-৩-১০০-৩, মুকেশ কুমার ১৪-২-৪৫-১, ঈশান পোড়েল ১৮-৩-৬৯-৪, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় ২-০-১০-০, অনুষ্টুপ মজুমদার ৪-০-১১-০।

বাংলা (দ্বিতীয় ইনিংস)
অভিষেক রামন ন. আ. ০
কৌশিক ঘোষ ক সঞ্জু বো সন্দীপ ১
অতিরিক্ত ৪
পতন: ১-৫ (কৌশিক, ২.২)।
বোলিং: সন্দীপ ওয়ারিয়ের ১.২-১-০-১, বাসিল থাম্পি ১-০-১-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE