Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বদলাটা নিয়েই ছাড়ল ফকনার

এক জন বোলারের অহংকার দেখলেই বোঝা যায় সে প্রথম না দ্বিতীয় চেঞ্জে আসে বল করতে, না তাঁকে ব্যাটিংয়ে টেলএন্ডারদের মধ্যে ধরা হয়। এ সব বোলারের বলে গতি কত কারও জানার আগ্রহ থাকে না। কেউ টেকনিক নিয়ে খুঁত ধরতে আসে না। এ ভাবে চলতে চলতে বেশ কিছু দিন পরে এঁদের নিজেদের মনেই প্রশ্ন জাগে, প্রথম দলে সুযোগ পাব তো?

রবি শাস্ত্রী
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

এক জন বোলারের অহংকার দেখলেই বোঝা যায় সে প্রথম না দ্বিতীয় চেঞ্জে আসে বল করতে, না তাঁকে ব্যাটিংয়ে টেলএন্ডারদের মধ্যে ধরা হয়। এ সব বোলারের বলে গতি কত কারও জানার আগ্রহ থাকে না। কেউ টেকনিক নিয়ে খুঁত ধরতে আসে না। এ ভাবে চলতে চলতে বেশ কিছু দিন পরে এঁদের নিজেদের মনেই প্রশ্ন জাগে, প্রথম দলে সুযোগ পাব তো?

এটাই হয়তো প্রথম দুটো আইপিএল টিমে হয়েছিল জেমস ফকনারের সঙ্গে। যখন ও পুণে আর কিংস ইলেভেন পঞ্জাবে ছিল। ওরা ফকনারের মধ্যে বিশেষ কিছুই দেখতে পায়নি। যখন বোলিং করত মুখটা একই রকম কুঁচকে থাকত। চেহারায় আগ্রাসী কোনও ভাব ছিল না। তখন ও সদ্য ২০ পেরিয়েছে।

এক বছর দলে রেখে পঞ্জাব ফকনারকে ছেড়ে দেয় ২০১২ মরসুমে। রাজস্থান রয়্যালস ওর মধ্যে প্রতিভা দেখেছিল। হয়তো তখন ওঁর নিলামে এক লক্ষ ডলার দরটা সস্তার মনে হয়েছিল। বা শেন ওয়াটসন ওকে দলে নেওয়া নিয়ে কোনও কথা বলে থাকতে পারে। সেই সময় ওর পাঁচটা ওয়ান ডে খেলার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই খুব একটা ছাপ ফেলতে পারেনি। তার উপর খেলেছিল তো হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে।

রাজস্থান আর ফকনারের জুটিটা একেবারে রাজযোটকের মতো হয়ে উঠল এর পর। প্রচুর উইকেট তুলে বোলিং তালিকায় ঝড় তুলে দিল ফকনার। রাজস্থান সে বার তৃতীয় সেরা টিম হিসেবে শেষ করে আইপিএল। সে মরসুমেই পরে ভারতের ওয়ান ডে সিরিজও ছিল। ফকনারের ক্ষমতা নিয়ে তখনও আন্দাজ ছিল না ভারতের। তার পর তো বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরিই করে ফেলে।

বেশির ভাগ ভূমিকায় ফকনারকে মানানসই লেগেছে। নতুন বলে হোক, মি়ডল অর্ডারে রান আটকানো হোক বা চূড়ান্ত ওভারগুলোয় বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের হতবুদ্ধি করা। তবে ব্যাট করতে নেমে কিন্তু ওর একটাই লক্ষ্য থাকে, ব্যাটিং অর্ডারে শেষের দিকে নামো আর যত রাগ বলটার উপর দেখাও। ওর ব্যাক অব হ্যান্ড স্লোয়ার ডেলিভারি এখনও ধাঁধার মতো। পিচে পড়ে ব্যাটে আসতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। যখন আসে, তা সাধারণত ব্যাটের উপর দিয়ে চলে যায়।

এখন তো ফকনার অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য— প্রথম বা দ্বিতীয় চেঞ্জ বোলার না টিমের অন্য দুই বাঁ-হাতি বোলার মিচেল স্টার্ক আর মিচেল জনসনের মতো, ঠিক কোন ভূমিকাটা ওর সে নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপেও অসাধারণ পারফর্ম করেছে। প্রতিপক্ষ প্রথম আঘাতে স্টার্কের বিরুদ্ধে প্রায় কাঁপতে কাঁপতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ার মতো অবস্থায় চলে যাওয়ার পর শেষে ফকনারের কাছে নক আউট হয়েছে। অনেকটা টার্গেট প্র্যাকটিসের মতো। বাদ দেওয়া প্রাক্তন প্লেয়ারের বিরুদ্ধে তো শুক্রবার পঞ্জাব প্রায় শুয়ে পড়ল। ওর অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন জর্জ বেইলিকে কোনও রেয়াত করা হল না, না গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে কোনও ছাড় দেওয়া হয়েছে। তার উপর ইনিংসের শেষের ঠিক আগের ওভারে মিচেল জনসনকে ২০ রান দেওয়ার যন্ত্রণাও পেতে হয়েছে। বদলাটা এ ভাবেই নিল ফকনার।

নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, শুক্রবার রিচি বেনোর শোকে প্লেয়াররা কালো আর্মব্যান্ড পরে নেমেছিল। কিন্তু যেটা আপনারা লক্ষ্য করেননি, একটা ব্যান্ড আমিও পরেছিলাম। তবে হাতে নয় মুখে। মার্জনার ব্যান্ড। আগের দিন কলামে লিখেছিলাম রিচি ভারতে কখনও মাইক ধরেননি। আসলে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে রিচি আমার সঙ্গে ধারাভাষ্যের কাজ করেছেন ভারতে। ওঁর মৃত্যুর শোকে স্মৃতি ধোঁয়াটে হয়ে যাওয়া আর চোখ বাষ্পাকুল হয়ে ওঠার জন্যই উল্টো কথাটা হয়তো বেরিয়ে এসেছিল। রিচি বিশ্বের এই প্রান্তে যদি আরও কাজ করতেন ভাল হত। এই ভূখণ্ডটা তো হাতের উল্টো পিঠের মতোই চিনতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE