উল্লাস: রবিবার ডার্বির শেষে পিন্টুর পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।
বারুদের গন্ধ, ভারী বুটের শব্দ আর সন্ধে নামলেই নিঝুম পথঘাট। মাওবাদী পর্বে মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধডরাশোলের চেনা ছবি ছিল এটাই। জঙ্গলমহলের এই গ্রামেই এমন পরিবেশেই বেড়ে ওঠা রবিবাসরীয় কলকাতা ডার্বির সেরা খেলোয়াড় পিন্টু মাহাতোর।
এ দিন বিকেলেই ধডরাশোলের রাস্তা শুনশান হয়ে গিয়েছিল। তবে আতঙ্ক নয়, উৎসাহে। গ্রামের ছেলের খেলা দেখতে টিভির সামনে উপচে পড়েছিল ভিড়। পিন্টুর কাকা প্রফুল্ল মাহাতোর বাড়িতেও ঠাসা ভিড়। পিন্টুর বাবা সুধীর মাহাতো ও মা বালিকাদেবীও সেখানেই ছেলের খেলা দেখেন। টিভির সামনে সার দিয়ে সাজানো পিন্টুর জেতা সব ট্রফি। শুধু গ্রামে নয়, মাঠে থেকে পিন্টুর জন্য গলা ফাটাতে ধডরাশোল থেকে জনা চল্লিশেকের একটা দল যুবভারতীতেও পৌঁছে গিয়েছিল।
মূলত বাবার উৎসাহেই ফুটবল শেখা শুরু পিন্টুর। বাড়ি থেকে ১৮ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটি স্পোর্টিং ক্লাবে অনুশীলন করতে যেতেন। জেলায় তাঁর প্রথম কোচ অমিয় ভট্টাচার্য। ২০১১ সালে সম্পর্কিত মামার হাত ধরে মোহনবাগান মাঠে অনূর্ধ্ব ১৪ দলের ট্রায়ালে এসেছিলেন। ২০১৫-১৬ মরসুমে মোহনবাগানের সিনিয়র দলের জার্সি পেয়েছিলেন পিন্টু। এর আগে ডার্বির রিজার্ভ বেঞ্চে বসার সুযোগ হলেও মাঠে নামা হয়নি। এ বার চলতি মরসুমের শুরু থেকেই নজর কেড়েছেন তিনি।
এ দিন সকালে বালিকাদেবী ছেলেকে ফোন করেছিলেন। খেলা শেষে তিনি বললেন, ‘‘আমি পিন্টুর জন্য পুজো দিয়েছিলাম। ওকে বলেওছিলাম, ‘ভাবিস না, আজ গোল আসবেই’। ঠাকুর আমার কথা শুনেছেন।’’ খেলার শুরু থেকেই মোহনবাগানের আক্রমণ শানানোয় অগ্রণী ছিলেন পিন্টু। দলের প্রথম গোলও আসে তাঁরই পা থেকে। শুধু একটি গোল নয়, গোটা ম্যাচেই দাপটের সঙ্গে খেলেছেন পিন্টু, হয়েছেন ম্যাচের সেরা। বাবা সুধীর মাহাতো বলছেন, ‘‘ছেলে গোল করায় দারুণ লাগছে। তবে মোহনবাগান জিতলে আরও ভাল লাগত।’’ আজকের গোল এবং ম্যাচের সেরার পুরস্কার পরিবার এবং সব কোচেদের উৎসর্গ করছেন পিন্টু।
এর আগে ডার্বির মাঠ অনেক বাঙালি ফুটবলারের জন্ম দিয়েছে। সেই তালিকায় জুড়ে গেলেন পিন্টু। জুড়ে গেলও জঙ্গলমহলও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy