Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বুমরা ফিরছেন, আলোচনা শুরু ঋষভকে নিয়েও 

গলের ড্রেসিংরুমে বসে সেই ময়নাতদন্তের পরে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিল কোহালির দল। বাকি দুই টেস্টে জিতে চব্বিশ বছর পরে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জেতে ভারত। রবিবাসরীয় লর্ডসে গলের চেয়েও অনেক গভীর সঙ্কট উপস্থিত হয়েছে। সিরিজে ০-২ তো পিছিয়ে পড়েইছে কোহালির ভারত, সব চেয়ে চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে কোনও মেরুদণ্ড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দলটার মধ্যে।

নজরে: টেস্ট সিরিজে ০-২ পিছিয়ে থাকা ভারত ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ট্রেন্ট ব্রিজে। যেখানে বিরাট কোহালির অস্ত্র হতে চলেছেন যশপ্রীত বুমরা (বাঁ দিকে)। ভাবনায় ঋষভ পন্থও। ফাইল চিত্র

নজরে: টেস্ট সিরিজে ০-২ পিছিয়ে থাকা ভারত ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ট্রেন্ট ব্রিজে। যেখানে বিরাট কোহালির অস্ত্র হতে চলেছেন যশপ্রীত বুমরা (বাঁ দিকে)। ভাবনায় ঋষভ পন্থও। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০৫:০৮
Share: Save:

তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কার গলে জেতা ম্যাচ হেরে বসেছিল বিরাট কোহালির ভারত। প্রথমে দীনেশ চান্ডিমলের ঝোড়ো ব্যাটিং, তার পরে রঙ্গনা হেরাথের ঘূর্ণি সে দিন তুবড়ে দিয়ে যায় ক্যাপ্টেন কোহালির বিদেশের মাটিতে জয়ের আশা।

সে দিন হারার পরে ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী দলকে বলেন, ‘‘এখান থেকে কেউ আমরা বেরোব না। হোটেলে ফিরব না। যত ক্ষণ না নিজেদের সামনে উত্তর খুঁজে পাচ্ছি যে, কেন এই জেতা ম্যাচ হাত থেকে গলিয়ে দিলাম, তত ক্ষণ এগজিট ডোর বন্ধ।’’ শাস্ত্রীর নির্দেশ মতো ড্রেসিংরুমেই দেড় ঘণ্টা ধরে বসে ময়নাতদন্ত করেছিল দল। ড্রেসিংরুম একমত হয়েছিল, ‘আমরা জেতার মানসিকতা দেখাতে পারিনি। হেরাথকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবতে গিয়ে কেঁপে গিয়েছিলাম।’

গলের ড্রেসিংরুমে বসে সেই ময়নাতদন্তের পরে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিল কোহালির দল। বাকি দুই টেস্টে জিতে চব্বিশ বছর পরে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জেতে ভারত। রবিবাসরীয় লর্ডসে গলের চেয়েও অনেক গভীর সঙ্কট উপস্থিত হয়েছে। সিরিজে ০-২ তো পিছিয়ে পড়েইছে কোহালির ভারত, সব চেয়ে চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে কোনও মেরুদণ্ড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দলটার মধ্যে।

তবু গলের মতোই ময়নাতদন্ত করে রবিবার মাঠ ছেড়েছে ভারত। পিঠের ব্যথায় কাতর কোহালি সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন খোঁড়াতে খোঁড়াতে। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখচোখ নিয়েও সাহসী থেকে বলে যান, অজুহাতের আড়ালে নিজেদের লুকোলে চলবে না। মুখোমুখি হতে হবে ব্যর্থতার। তবেই উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব। অধিনায়ক নিজে পিঠের ব্যথার জন্য দ্রুত ডাক্তারের কাছে না ছুটে লর্ডসের ড্রেসিংরুমে হওয়া ময়নাতদন্তে অংশ নেন।

সোমবার সকালে টিম হোটেলে আবার এক প্রস্ত মিটিং করেন কোহালিরা। দেশশুদ্ধ লোকে যে তাঁদের বিনা লড়াইয়ে হার দেখে ক্ষুব্ধ, সেই কথা ক্রিকেটারদের মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের যুগে টুইটার, ফেসবুক খুললেই সব মোবাইলে চলে আসবে। সে সব দেখেও ঘুম না ভাঙলে কিছু বলার নেই। ময়নাতদন্তে সব চেয়ে গুরুত্ব পেল এটাই যে, দ্রুত বিপর্যয়ের স্মৃতিকে মুছে ফেলে তিন টেস্টের লড়াই হিসেবে এই সিরিজকে দেখো। এবং, দুর্যোগ কাটিয়ে তোলার জন্য কোহালির টিমের কাছে সেরা উদাহরণ এখন গল নয়, ওয়ান্ডারার্স। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম দু’টো টেস্টে হেরে সিরিজ হেরেছিল দল। কিন্তু তৃতীয় টেস্টে ফ্যাফ ডুপ্লেসিদেরই বানানো আগুনে উইকেটে তাদের হারিয়ে সম্মান পুনরুদ্ধার করেছিলেন কোহালিরা। সেই উদাহরণ টেনে অনেকেই ময়নাতদন্তের সময়ে বলেছেন, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা পারলে, এখানে পারব না কেন? ওখানে পরিস্থিতি আরও কঠিন ছিল। খেলার অযোগ্য পিচ ছিল।’’

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি কারণ সিরিজের ফয়সালা আগেই হয়ে গিয়েছিল। সান্ত্বনা পুরস্কারের মতো একটি টেস্ট জিতে ফিরতে হয় কোহালিদের। এখানে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ বলে লড়াইয়ের জমি এখনও পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়নি। ট্রেন্ট ব্রিজে প্রত্যাঘাত করতে পারলে সিরিজ আবার জমে উঠতে পারে।

এমনিতে বহির্বিশ্বে কোহালিকে নিয়ে ঠিক যতটা আশা রয়েছে, তাঁর সতীর্থদের ব্যাপারে ঠিক ততটাই হতাশা। গত এক বছরে উপমহাদেশের বাইরে কোহালি ছাড়া কেউ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। অধিনায়ককে বাদ দিলে এম বিজয়, কে এল রাহুল, চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্ক রাহানে— ব্যাটিংয়ের চার প্রধান স্তম্ভ হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু গত এক মরসুম ধরে উপমহাদেশের বাইরে তাঁদের গড় কুড়িরও কম। এখানে চারটি ইনিংসে রান করতে পারলেন না এঁরা কেউ।

সব চেয়ে বেশি করে কথা উঠছে পূজারার ব্যাটিং ভঙ্গি নিয়ে। কুড়িরও কম স্ট্রাইক রেট নিয়ে তিনি ক্রিজ আগলে পড়ে থাকছেন। সেটা পুষিয়ে দেওয়া যায় যদি লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, পূজারা ২০ রানের মধ্যে আউট হয়ে যাচ্ছেন। দলকে স্থায়িত্ব তো দিতে পারছেনই না, উল্টে তাঁর ঠুকঠুক ব্যাটিংয়ে বোলাররা মাথায় চড়ে বসছে।

ক্রিকেটে যে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধও চলে, সেটা পূজারাকে কে বোঝাবে? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় গত কাল তাঁর প্রিয় অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরির মাঠে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘এত ডিফেন্সিভ মানসিকতা নিয়ে টেকা মুশকিল হবে। বোলারকেও তো একটু-আধটু চাপে রাখতে হবে। ব্যাটিংয়ের মূল কথাটাই তো হচ্ছে, রানের রানটা নিয়ে চলো।’’

পূজারা গত কাল সেট হয়ে গিয়ে যে ভাবে ব্যাট-প্যাডের মধ্যে দিয়ে বল গলে বোল্ড হয়েছেন, তাতে তাঁর টেকনিক নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আউট হওয়ার ঠিক আগেই একটা ‘ওভার-পিচ্‌ড’ বল ডেড ডিফেন্স করেন পূজারা। যা দেখে কমেন্ট্রি বক্সেও অনেকে আঁতকে ওঠেন। একেই জিমি অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, ক্রিস ওক্‌সরা দারুণ সব বোলার। কোনও আলগা বল দিচ্ছেন না। তার উপরে যদি ক্রমাগত ঠুক আর ঠাক চলে, তাঁরা হোল্ডিং, মার্শাল, রবার্টস হয়ে তো উঠবেনই। নাসের হুসেন গত কাল বলছিলেন, ‘‘অ্যান্ডারসন হারিয়ে যেতে বসা এক শিল্পের নাম। সুইং, সিম দু’টোতেই দক্ষ। যদি সুইং তোমাকে না আউট করে, সিম করবে।’’ কী অসাধারণ ব্যাখ্যা!

কিন্তু বীরেন্দ্র সহবাগের মতো কাউকে তো একটা সাহসী হয়ে অ্যান্ডারসনকে পাল্টা প্রত্যাঘাতও করতে হবে। সেটা কে করবেন? লর্ডসে হারের পরে যা পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, টিমে ফের কিছু বদল ঘটতে পারে। যশপ্রীত বুমরা ফিট হয়ে গিয়েছেন। তিনি খেলবেন মোটামুটি নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে কোপ পড়তে পারে কুলদীপ যাদবের উপরে। ট্রেন্ট ব্রিজে নিশ্চয়ই দুই স্পিনারে খেলার ভুল আর করা হবে না। জোরাল দাবি উঠেছে ঋষভ পন্থকে খেলানোর। টিম ম্যানেজমেন্টেও যে একেবারে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা নয়। দীনেশ কার্তিক যে রকম ‘খেল’ দেখিয়েছেন দু’টো টেস্টে তাতে তাঁকে খেলানোটা হার্টের উপরে অত্যাচার হয়ে যাবে। ঋষভ আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে ভাল অস্ত্র হতে পারেন। চার বছর আগের ইংল্যান্ড সফরে সব চেয়ে ভাল খেলেছিলেন এম বিজয়। এ বারে তিনি একেবারেই ফর্মে নেই। তাঁকে বা রাহুলকে বসিয়ে শিখর ধওয়নকে ফেরানো হবে কি না, সেটাও দেখার।

কিন্তু সবার আগে ফেরাতে হবে দলের মেরুদণ্ড। কোহিনুরের মতোই ওটা এখন ইংল্যান্ডের কব্জায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE