Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বর্শা ছোড়ায় ১৩ বারের রাজ্য চ্যাম্পিয়ন প্রশান্ত

সেই কৃতিত্বের জন্য আজও চুনাখালি-নিমতলা হাইস্কুলের বাংলার প্রাক্তন শিক্ষক, প্রয়াত বিমানেশ্বর ভট্টাচার্যের কাছে কৃতজ্ঞ প্রশান্ত। ব্যায়াম অনুশীলনের জন্য কিশোর প্রশান্তকে তিনিই নিয়ে গিয়েছিলেন বহরমপুর শহরের রামকৃষ্ণ ব্যায়াম মন্দিরে। সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্তের ভাই, মানিক দাশগুপ্ত তখন রামকৃষ্ণ ব্যায়াম মন্দিরের কর্ণধার।

পুরস্কার হাতে প্রশান্ত। নিজস্ব চিত্র

পুরস্কার হাতে প্রশান্ত। নিজস্ব চিত্র

 অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৯ ০৫:৪৪
Share: Save:

শৈশবে তিনি বেশ হৃষ্টপুষ্ট ছিলেন। সাতান্ন বছরে পৌঁছে মুর্শিদাবাদ থানার প্রসাদপুর গ্রামের প্রায় ছ’ ফুট উচ্চতার প্রশান্ত ঘোষ এখন ১০৫ কেজির ‘যুবক’। বাংলার ক্রীড়া জগতে তাঁর কৃতিত্বের ওজন কিন্তু শারীরিক ওজনের চেয়ে অনেক গুণ বেশি।

সেই কৃতিত্বের জন্য আজও চুনাখালি-নিমতলা হাইস্কুলের বাংলার প্রাক্তন শিক্ষক, প্রয়াত বিমানেশ্বর ভট্টাচার্যের কাছে কৃতজ্ঞ প্রশান্ত। ব্যায়াম অনুশীলনের জন্য কিশোর প্রশান্তকে তিনিই নিয়ে গিয়েছিলেন বহরমপুর শহরের রামকৃষ্ণ ব্যায়াম মন্দিরে। সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্তের ভাই, মানিক দাশগুপ্ত তখন রামকৃষ্ণ ব্যায়াম মন্দিরের কর্ণধার। প্রশান্তকে দেখেই তিনি বললেন, ‘‘জ্যাভলিন (বর্শা) ছুড়েছিস কখনও?’’ প্রশ্ন শুনে ‘ধাক্কা’ খেয়েছিল সেই কিশোর। আমতা আমতা করে সে জবাব দিল, ‘‘না।’’

জ্যাভলিন কী ভাবে ছুড়তে হয় তার প্রাথমিক পাঠ পাওয়ার পর আর অসুবিধা হয়নি প্রশান্তের। ১৯৭৯ সাল থেকে সিনিয়র বিভাগে জ্যাভলিন ছোড়ায় টানা ১৩ বছর রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন প্রশান্ত। স্কুলস্তরের রাজ্য প্রতিযোগিতায় ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথম হয়েছিলেন। ১৫ বছর বয়স তখন তাঁর। সেই শুরু। তারপর থেকে আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই বছরই স্কুলস্তরের ‘অল ইন্ডিয়া মিট’এ জ্যাভলিন ছোড়ায় তিনি দ্বিতীয় হলেন। পরের বছর কাঁচরাপাড়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব ১৭ বছর বয়সীদের রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতা। প্রশান্ত বললেন, ‘‘আগের সব রেকর্ড ম্লান করে আমিই সে বার রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হই।’’ পরের বছর ১৯৭৯ সালে রাজ্যস্তরের ‘সিনিয়র মিট’- এ তিনি প্রথম হন। একই বছরে হায়দরাবাদে জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল অনূর্ধ্ব ১৭ এবং অনূর্ধ্ব ১৯ বছর বয়সীদের জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা। কিশোর প্রশান্ত দু’টি বিভাগেই জ্যাভলিন ছোড়ায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে ‘ওপেন ইন্ডিয়া’য় যোগদান করে তিনি চতুর্থ স্থান পান। ক্রীড়া ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য মাত্র ১৮ বছর বয়সেই পোর্ট ট্রাস্টে চাকরি পান তিনি। ওই বছরেই চেন্নাই ( তখন নাম মাদ্রাজ) এশিয়ান পোর্ট ট্রাস্ট মিট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে প্রশান্ত দ্বিতীয় হয়েছিলেন। ১৯৮২ সালে জীবন বিমা নিগমে চাকরি নিয়ে বহরমপুরে ফিরে আসেন তিনি। আগরতলায় আন্তঃরাজ্য অ্যাথলেটিক্স মিট হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। সেখানে বাংলা দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রশান্ত। দিল্লি জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ১৯৮৯ সালে ‘ওপেন ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হন তিনি। এশিয়ান গেমসের ভারতীয় দলেও মনোনীত হয়েছিলেন প্রশান্ত। পঞ্জাবের পাটিয়ালায় প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেন। সেই সময় অশান্ত পঞ্জাবে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে শিবির ছাড়তে বাধ্য হন তিনি প্রশান্ত।

সামরিক, আধা সামরিক, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষায় অনেকে ব্যর্থ হন। তাঁদের জন্য বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়্যার ময়দানে ২০০৮ সালে অবৈতনিক প্রশিক্ষণ শিবির খোলেন প্রশান্ত। গত দশ বছরে সেখান থেকে ১২১ জন চাকরি পেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Javelin Throw State Champion Prashanta Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE