আরসিজিসি-তে জীব। -নিজস্ব চিত্র
গল্ফ খেলাটা অলিম্পিক্সে ফিরেছে শুনে ছেলেকে একটা কথা বলেছিলেন বাবা। ‘‘আমি একটুর জন্য পারিনি। তুমি অলিম্পিক্সে ভারতের হয়ে পদক জিততে পারলে বুঝব আমার স্বপ্ন তোমার মাধ্যমে সত্যি হল।’’
কিংবদন্তি বাবা মিলখা সিংহের কথাগুলো তার পর থেকেই পাক খাচ্ছে জীব মিলখা সিংহের মাথায়। এক সময় বিশ্বের আঠাশ নম্বরে থাকা ভারতীয় গল্ফের কিংবদন্তি বলছিলেন, ‘‘ব্যাপারটা আমার কাছে এখন দারুণ একটা চ্যালেঞ্জ। টোকিওয় দেশের জার্সিতে নামতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব।’’
ছ’ফুট লম্বা, টানটান চেহারা। সাদা টি-শার্ট আর সাদা গল্ফ ক্যাপ। কথা বলার ফাঁকে যেটা মাঝে মধ্যেই খুলে হাত বুলিয়ে নিচ্ছিলেন ছোট করে ছাঁটা কাঁচা-পাকা চুলে। বৃহস্পতিবার ম্যাকলিয়ড রাসেল গল্ফের প্রথম রাউন্ডের শেষে রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবের বাগানে বসে জীব বলছিলেন, ‘‘টোকিও অলিম্পিক্সের সময় বয়সটা হবে ঊনপঞ্চাশ। তবে ফিটনেস ধরে রাখতে না পারার কারণ নেই।’’ ফিটনেস প্রসঙ্গে অবশ্যম্ভাবী উঠল লিয়েন্ডার পেজের নাম। তবে লিয়েন্ডারকে মাপকাঠি ধরতে নারাজ পঁয়তাল্লিশের জীব। মুচকি হেসে বললেন, ‘‘লিয়েন্ডারের ভিতরের আগুন আর আসল সময় জ্বলে ওঠার ক্ষমতাটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু বয়সে ও তো আমার চেয়ে ছোট। আমি তাকাই গ্রেগ নরম্যান, জ্যাক নিকোলাসের মতো গল্ফারদের দিকে। যারা ষাট বছর বয়সেও জিতেছে।’’
জীব নিজে আরও অন্তত দশ বছর দাপটে খেলতে চান। তার জন্য সেরা ফিটনেস ধরে রাখার প্রস্তুতিও চলছে জোর কদমে। তবে অকপটে স্বীকার করছেন, ‘‘একুশ বাইশের ছেলেরা আজকাল অসাধারণ খেলছে। এদের সঙ্গে টক্কর দিতে আমাদের মতো বুড়োদের অনেক খাটতে হচ্ছে।’’
২০০৬ থেকে ২০১২-র মধ্যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে জীবের অসাধারণ উত্থান। ইউরোপ, এশিয়া, জাপান ট্যুরে জেতার পাশে খেলেন গল্ফের সব ক’টি মেজর। ২০০৮ পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপে নবম স্থান তাঁর সেরা। ওই সময়ই এশীয় ট্যুরে দু’বার বর্ষসেরা। জেতেন অর্জুন ও পদ্মশ্রী। কিন্তু কেরিয়ারে জোর ধাক্কা দিয়েছিল কাঁধের চোট। মাঝে বেশ কিছুদিন গল্ফ থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন। জীব বলছিলেন, ‘‘চোটের সবচেয়ে কঠিন দিক মানসিক সেটব্যাক কাটিয়ে ওঠা।’’ যেটা করতে নিজস্ব কয়েকটা অস্ত্র কাজে লাগিয়েছেন। যেমন প্রেরণা যোগায় বই। যেমন মিনিট দশেক একা চুপচাপ ধ্যানস্থ বসে সেরা দিনগুলো ফিরে দেখেন। ‘‘২০০৬-২০০৮ সময়টার দিকে তাকাই। তখনই আমি বিশ্বের আঠাশ নম্বরে পৌঁছছিলাম। আমি বিশ্বাস করি যে ভাল গল্ফার, সে ফিরে আসবেই।’’
তিনিও পা বাড়িয়েছেন প্রত্যাবর্তনের রাস্তায়। শেষ জিতেছিলেন ২০১২ স্কটিশ ওপেন। তবে এই নভেম্বরে একটুর জন্য গগনজিৎ ভুল্লাড়ের কাছে হেরে রানার্স হন ইন্দোনেশিয়ায়। আগামী বছর পঁয়ত্রিশটা টুর্নামেন্ট খেলবেন জানিয়ে বলে দিলেন, ‘‘বিজয়ীদের বৃত্তটায় ফিরতে চাই। সামনের বছরে অন্তত দু-তিনটে খেতাব জিততেই হবে।’’
ম্যাকলিয়ড রাসেলে প্রথম রাউন্ডে ছয়-আন্ডার ৬৬ স্কোরে শীর্ষে তাইল্যান্ডের দু’বারের এশিয়া সেরা জুনহাসাভাসদিকুল পারিয়া। বত্রিশের তারকার দাবি, আগের রাতে শিব কপূর তাঁকে যে ভারতীয় ‘রাইস অ্যান্ড ল্যাম্ব কারি’ খাওয়ান, দুরন্ত ফর্মটা তারই ফলে! তাঁর চেয়ে এক শট পিছনে চব্বিশ বছরের খালিন জোশি। এই তরুণদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে পাঁচে স্বঘোষিত চকোলেট ভক্ত জীব। স্কোর তিন-আন্ডার ৬৯। পাঁচটি বার্ডির পাশে দু’টি বোগি। পারবেন, বাকি তিন রাউন্ডে ট্রফিটা জিততে? শুনে মুচকি হাসি। ‘‘আমি সব টুর্নামেন্টই জিততে চাই। আসলে সব সময় হয় না।’’
লিয়েন্ডারের শহরে এলেন পুরো উনিশ বছর পর। যে ফারাকটা নজর কেড়েছে, সেটা রাস্তাঘাট। বললেন, ‘‘বিমানবন্দর থেকে শহরে ঢোকার হাইওয়েটা দারুণ। আর কলকাতার মানুষ অ্যামেজিং! সব অবস্থায় মুখে হাসি। ওঁদের জন্যই এটা সিটি অব জয়।’’ আনন্দনগরী ছাড়ার আগে গিন্নি কুদরতের দেওয়া অ্যাসাইনমেন্টও রয়েছে জীবের। ‘‘বউয়ের অর্ডার, মিষ্টি দই আর রসগোল্লা প্যাক করে নিয়ে ফিরতে হবে চণ্ডীগড়,’’ বলে গেলেন শেষ পাতে।
তবে তার আগে গল্ফ কোর্সেও মধুরেণ সমাপয়েৎ চাইছেন জীব মিলখা সিংহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy