Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘গ্যাটিংয়ের সেই ‘আত্মঘাতী’ রিভার্স সুইপ যেন বাটলারের ব্যাটে ফিরে এল’

মঙ্গলবার কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচটা দেখতে দেখতে যেন তিরিশ বছর আগের সেই ই়ডেনে ফিরে গেলাম। সেটা ছিল ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল।

পছন্দের রিভার্স সুইপটা মারতে গিয়েই আউট হলেন বাটলার।

পছন্দের রিভার্স সুইপটা মারতে গিয়েই আউট হলেন বাটলার।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০৪:০২
Share: Save:

বছর তিরিশ আগে মাইক গ্যাটিংয়ের সেই রিভার্স সুইপটা মনে আছে?

মঙ্গলবার কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচটা দেখতে দেখতে যেন তিরিশ বছর আগের সেই ই়ডেনে ফিরে গেলাম। সেটা ছিল ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ম্যাচটা দেখতে গিয়েছিলাম ইডেনে। অস্ট্রেলিয়ার ২৫৩ রান তাড়া করে ইংল্যান্ড দু’উইকেটে ১৩২। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, কাপ উঠছে ইংল্যান্ড অধিনায়ক গ্যাটিংয়ের হাতে। কিন্তু তার পরেই ওই ঘটনা। অ্যালান বর্ডারের একটা বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ফিরে গেলেন গ্যাটিং। কাপও বেরিয়ে গেল ইংল্যান্ডের হাত থেকে।

সেই শটের পুনরাবৃত্তি দেখলাম ইডেনে। জস বাটলার, অজিঙ্ক রাহানের ব্যাটে। আর ওই দু’টো শটেই ম্যাচ বেরিয়ে গেল রাজস্থানের হাত থেকে। ১৪২ রানটা কখনওই বড় ছিল না। কেকেআর রানটা তুলে ফেলল দু’ওভার বাকি থাকতে, চার উইকেট হারিয়ে। তিরিশ বছর আগেও এই ভাবেই ম্যাচ ঘুরিয়েছিলেন এক বাঁ হাতি স্পিনার। এ বারও তাই। সে দিন বর্ডার, এ দিন কুলদীপ যাদব।

মঙ্গলবার ইডেনে ম্যাচটা শুরুই হয়েছিল অত্যন্ত নাটকীয় ভাবে। শিবম মাভির প্রথম বলেই স্লিপে ক্যাচ তুলে বেঁচে যান রাহুল ত্রিপাঠী। দ্বিতীয় ওভার থেকে শুরু হল রাজস্থান ব্যাটসম্যানদের পাল্টা মার। মাভিকে যে সব শট মারলেন বাটলার, তা এক কথায় অকল্পনীয়। মাভি ঘণ্টায় প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার গতির ওপর বল করছিলেন। সেই বল বাটলার স্কুপ করে ডিপ ফাইন লেগের ওপর দিয়ে দু’বার গ্যালারিতে ফেলে দিলেন। ওই শট যে কোনও বোলারকে বিভ্রান্ত করে দেবে।

যখন মনে হচ্ছিল, দু’শোর ওপর রান অনায়সে তুলে দেবে রাজস্থান, তখনই এল ওই দু’টো রিভার্স সুইপ!

রাহানের কথায় আসি। স্পিনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত ভাল। কিন্তু কখনওই ও রকম রিভার্স সুইপ খেলেন না। মঙ্গলবার খেলতে গেলেন। কুলদীপের বলটা জোরের ওপর ছিল। যেখানে বলটা পড়েছিল, সেখানে ওই শটটা খেলা যায় না। রাহানে আগে থেকেই ভেবে নিয়েছিলেন শটটা খেলবেন। সেটা খেলতে গিয়েই বোল্ড হলেন।

মাইক গ্যাটিংয়ের সেই ‘আত্মঘাতী’ রিভার্স সুইপ, বিশ্বকাপও বেরিয়ে গেল ইংল্যান্ডের হাত থেকে।

তবে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট অবশ্যই বাটলারের আউটটা। পাঁচটা হাফসেঞ্চুরি করে ইডেনে এসেছিলেন। শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, আবার একটা বড় রান আসছে। রিভার্স সুইপটাও ভাল খেলেন। কিন্তু কুলদীপের জোরের ওপর গুগলিটা ধরতে পারেননি। ইডেনের পিচে বাউন্স আছে। বলটা বাটলারের প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত গতিতে আসে, বাউন্সও হয়। লাগে বাটলারের ব্যাটের ওপরের দিকের স্টিকারে। যে জন্য শটটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ যায়।

খুব ভাল বল করে গেলেন কুলদীপ। ২০ রানে চার উইকেট— আইপিএলে এই চায়নাম্যান বোলারের সেরা পারফরম্যান্স। অনেকে বলছিলেন, ওঁর রহস্যভেদ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দেখা গেল, এখনও চমকে দিতে পারেন কুলদীপ। রাজস্থানের বিরুদ্ধে বুদ্ধি খাটিয়ে বল করলেন। ঠিক জায়গায় রাখলেন। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরাও ওঁর গুগলি এবং লেগস্পিন বুঝতে সমস্যায় পড়েছিলেন। স্টুয়ার্ট বিনি যেমন। গুগলি বুঝতে না পেরে স্টাম্প়়ড হয়ে গেলেন।

আরও একজনের কথা বলতে হবে। দীনেশ কার্তিক। কিপিং ভাল করলেন। সুনীল নারাইনের একটা বল লেগসাইডে দারুণ ধরলেন। সঙ্গে নেতৃত্বটাও। ম্যাচও খুব ঠান্ডা মাথায় বার করে নিলেন। আরও একটা ব্যাপার ভাল লাগল। ডিআরএস নেওয়ার ব্যাপারেও ক্রমে পারদর্শী হয়ে উঠছেন কার্তিক। সঞ্জু স্যামসনের আউটের ক্ষেত্রে যেমন একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে যেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দেখানো রাস্তাতেই হাঁটছেন নাইট অধিনায়ক। আর একটা কথা। কার্তিকও কিন্তু ইডেনে রিভার্স সুইপও খেললেন!

টি-টোয়েন্টিতে রিভার্স সুইপ কখনও ম্যাচ জেতায়, কখনও বা আবার হারায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE