Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Ranji Trophy

ইরফান-মন্ত্রে প্রতিকূলতা জয় করে রঞ্জির শেষ আটে রসুলরা

কাশ্মীর ক্রিকেট সংস্থাও যোগাযোগ করতে পারছিল না কোনও ক্রিকেটারের সঙ্গে। ফোনে ইরফানের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও বাকি ক্রিকেটারেরা ছিলেন গৃহবন্দি। ঘরের বাইরে কার্ফু।

প্রত্যয়ী: নক-আউট পর্বেও চমক দিতে চান পারভেজ। ফাইল চিত্র

প্রত্যয়ী: নক-আউট পর্বেও চমক দিতে চান পারভেজ। ফাইল চিত্র

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৪১
Share: Save:

এক মাস গৃহবন্দি। ফোনে নেই নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট পাওয়ার কোনও সুযোগই নেই। শের-ই-কাশ্মীর স্টেডিয়ামের পাশের রাস্তা বন্ধ। স্থগিত জম্মু ও কাশ্মীর ক্রিকেট দলের অনুশীলনও। কী ভাবে বিজয় হজারে ট্রফি, সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি ও রঞ্জিতে দল নামানো হবে, কোনও ধারণাই ছিল না ইরফান পাঠান, পারভেজ রসুলদের।

কাশ্মীর ক্রিকেট সংস্থাও যোগাযোগ করতে পারছিল না কোনও ক্রিকেটারের সঙ্গে। ফোনে ইরফানের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও বাকি ক্রিকেটারেরা ছিলেন গৃহবন্দি। ঘরের বাইরে কার্ফু। কাশ্মীর ছেড়ে জম্মু যাওয়ারও সুযোগ নেই। জম্মু ও কাশ্মীর ক্রিকেট সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পরে রঞ্জির প্রাথমিক দল গঠন করে প্রত্যেককে বরোদা উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন ইরফান। কিন্তু যোগাযোগ করবেন কী করে? সে রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থাই স্থানীয় টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রিকেটারদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করে। সেই চ্যানেলে প্রত্যেক ক্রিকেটারের নাম ঘোষণা করে দ্রুত জম্মু নেমে আসতে বলা হয়। তবুও সমস্যা থেকে গিয়েছিল। ইরফানের অনুরোধে প্রত্যেক ক্রিকেটারের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে তাঁদের জম্মু নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থা। জম্মু থেকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বরোদা। প্রাক-মরসুম ট্রেনিং, প্রস্তুতি ম্যাচ খেলিয়ে পারভেজ রসুলদের তৈরি করেন তাঁদের মেন্টর ইরফান। তার প্রতিফলন, রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে যোগ্যতা অর্জন জম্মু ও কাশ্মীরের। ঘরের বাইরে বেরনোই যেখানে আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল, তাঁদের অন্য রাজ্যে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া ছিল আরও কঠিন। প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের রাজি করিয়ে এক মাস বরোদায় রেখেছিলেন ইরফান। কাশ্মীর ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তা বলছিলেন, ‘‘প্রত্যেককে নিজের ভাইয়ের মতো যত্ন করেছে। কাশ্মীরে সমস্যা হবে জেনে, নিজের রাজ্যে অনুশীলন করানোর উদ্যোগ কেউ নেবে?’’

ইরফানের এই অবদানে মোহিত অলরাউন্ডার পারভেজ রসুলও। জম্মু থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘প্রত্যেকের পরিবারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছে ইরফান ভাই। তাঁদের বুঝিয়েছে, ছেলেরা তাঁর কাছে সুরক্ষিত থাকবে। ইরফান ভাই প্রত্যেকের সঙ্গে কথা না বললে আমরা এগারোজন নামাতে পারতাম কি না সন্দেহ। অথচ এই দলই এখন কোয়ার্টার ফাইনালে। সত্যি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।’’

জম্মু ও কাশ্মীরের সাফল্যের নেপথ্য নায়ক ইরফান যদিও ছেলেদেরই ধন্যবাদ দিলেন। বলছিলেন, ‘‘বরোদায় ওদের অনুশীলন করতে নিয়ে আসার পরেও সবাইকে নিয়ে উদ্বেগে ছিলাম। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ওরা যোগাযোগ করতে পারছিল না। প্রস্তুতি চললেও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল অনেকে। সেই মুহূর্তে ওদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তার ফল এখন পাচ্ছি।’’

জম্মু ও কাশ্মীরে যাওয়ার পর থেকে বেশ কিছু পরিবর্তন করেছেন ইরফান। যেমন আগে রঞ্জি দলে সুযোগ দেওয়া হত ‘কোটা সিস্টেম’ মেনে। জম্মু ও কাশ্মীরের ক্রিকেটারদের নির্দিষ্ট সংখ্যা মেনে দলে নিতে হত। কিন্তু ইরফান সে সব নিয়ম বদলে দিয়েছেন। মেন্টর হিসেবে প্রথম বছর যোগ দেওয়ার পরেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, যোগ্য ক্রিকেটারেরাই তাঁর দলে সুযোগ পাবেন। ইরফানের কথায়, ‘‘নিয়ম পরিবর্তন করার জন্য প্রচুর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার বক্তব্য পরিষ্কার ছিল। মেন্টর হিসেবে যোগ দেওয়ার পরেই বলে দিয়েছিলাম, দলের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য যাদের প্রয়োজন, তাদেরই দলে নেওয়া হবে। যে কোটা সিস্টেম চলছে তা মেনে ভাল দল গঠন করা সম্ভব নয়।’’ যোগ করেন, ‘‘নতুন নিয়মের ফল পাওয়াও জরুরি। ভাগ্যিস গত মরসুম থেকেই ভাল ফল পেয়েছি। এ বার ছ’টি ম্যাচ জিতেছি। যা কখনও কাশ্মীরের ক্রিকেট ইতিহাসে ঘটেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ranji Trophy Kashmir Irfan Pathan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE