Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
করেছি, লড়েছি, জিতেছি রে... প্লে-অফে উঠেছি রে...
Sport News

ঠিক সময়ে ছন্দে, কেকেআর এখন খেতাবেরও দাবিদার

রবিন উথাপ্পাও একটু ঘুরিয়ে কথাটা বলতে পারতেন রশিদ খানকে। উথাপ্পা তখন ১১ রানে। রশিদের বলে মারা স্লগ সুইপটা ব্যাটের কানায় লেগে অনেক উঁচুতে উঠে যায়। রশিদ পিছনে দৌড়ে বলের কাছে পৌঁছেও গিয়েছিলেন।

যুগলবন্দি: রবিন উথাপ্পা ৩৪ বলে ৪৫। (ডান দিকে) ক্রিস লিন ৪৩ বলে ৫৫। দুই তারকার ব্যাটিং ঝড়ে জয়ের হ্যাটট্রিক কলকাতা নাইট রাইডার্সের। শনিবার হায়দরাবাদের উপ্পলে। ছবি: পিটিআই

যুগলবন্দি: রবিন উথাপ্পা ৩৪ বলে ৪৫। (ডান দিকে) ক্রিস লিন ৪৩ বলে ৫৫। দুই তারকার ব্যাটিং ঝড়ে জয়ের হ্যাটট্রিক কলকাতা নাইট রাইডার্সের। শনিবার হায়দরাবাদের উপ্পলে। ছবি: পিটিআই

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৮ ০২:৫৯
Share: Save:

কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচটা দেখতে দেখতে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ। স্টিভ ওয়ের সহজ ক্যাচ ফেলেন হার্শেল গিবস। শোনা যায়, স্টিভ তখন বলেছিলেন, ‘‘তুমি কিন্তু বিশ্বকাপটাই হাত থেকে ফেলে দিলে!’’

রবিন উথাপ্পাও একটু ঘুরিয়ে কথাটা বলতে পারতেন রশিদ খানকে। উথাপ্পা তখন ১১ রানে। রশিদের বলে মারা স্লগ সুইপটা ব্যাটের কানায় লেগে অনেক উঁচুতে উঠে যায়। রশিদ পিছনে দৌড়ে বলের কাছে পৌঁছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু হাওয়ায় সম্ভবত বলটা একটু বাঁক নেওয়ায় ক্যাচ ধরতে পারেননি। মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা রশিদের কাছে গিয়ে উথাপ্পা বলতেই পারতেন, ‘‘ওহে, তুমি কিন্তু আমাদের প্লে-অফে তুলে দিলে।’’ এর পরে উথাপ্পা যখন আউট হন, তাঁর নামের পাশে ৩৪ বলে ৪৫। ম্যাচের ভাগ্যও তত ক্ষণে ঠিক হয়ে গিয়েছে।

উপ্পল স্টেডিয়ামে হায়দরাবাদের নয় উইকেটে ১৭২ রান তাড়া করতে নেমে ক্রিস লিন (৪৩ বলে ৫৫)-সুনীল নারাইন (১০ বলে ২৯) জুটি একটা ভাল মঞ্চ তৈরি করে দেয়। সেখান থেকে উথাপ্পা এবং দীনেশ কার্তিক (২২ বলে ২৬ ন.আ.) বাকি কাজটা করে দেন। দু’বল বাকি থাকতে, পাঁচ উইকেটে ম্যাচ জেতে কলকাতা। নাইটদের এই জয়ে সবারই কিন্তু অবদান আছে।

ম্যাচের প্রথম ১০ ওভার হায়দরাবাদ ব্যাটসম্যানদের দাপট ছিল। তখন মনে হচ্ছিল, ১৮০-১৯০ রান উঠে যাবে। সেখান থেকে কলকাতাকে ম্যাচে ফেরান বোলাররা। কুলদীপ যাদব, নারাইনের বলে মাঝের দিকে রান ওঠার গতি আটকে গিয়েছিল। আর ইনিংসের শেষ ওভারে তো দুর্দান্ত বল করে গেলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। তরুণ এই পেসার ওই ওভারে চার রান দিয়ে তিন উইকেট তুললেন। একটা রান আউট হল। হায়দরাবাদের রানটাও আটকে গেল। সব মিলিয়ে বলব, নিখুঁত দলগত খেলাই কেকেআরকে এ বারের আইপিএল প্লে-অফে তুলে দিল।

প্লে-অফের আগে কিন্তু খুব ভাল ছন্দে আছে দলটা। টানা তিনটে ম্যাচে জয় পেল। শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছেন। এবং শেষ দিকে দায়িত্ব নিয়ে দলকে জেতাচ্ছেন অধিনায়ক কার্তিক। অধিনায়কত্ব, উইকেটকিপিং এবং ফিনিশার— তিনটে ভূমিকায় কিন্তু দারুণ সফল কার্তিক। ম্যাচ শেষ করে ফিরছেন। কার্তিক হয়তো বিস্ফোরক ব্যাটিং করেন না। কিন্তু ফিল্ডারদের মধ্যে ফাঁক খুঁজে ঠিক রান করে যান। যখন যে রকম প্রয়োজন।

কেকেআরের বোলিং আক্রমণও ধারালো হয়ে উঠছে। তিন স্পিনার তো আছেনই। সঙ্গে প্রসিদ্ধের মতো তরুণ বোলারও সুন্দর মানিয়ে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্লে-অফে ওঠার আগে দলটা ‘পিক’ করছে। ফাইনালে উঠতে গেলে খুব সম্ভবত ইডেনে দু’টো নক আউট ম্যাচ জিততে হবে কেকেআরকে। প্রতিপক্ষ হতে পারে মুম্বই বা রাজস্থান। কারণ, তিন নম্বর দল হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি নাইটদের। ঘরের মাঠের একটা সুবিধে কিন্তু কার্তিকরা পাবেনই। নাইটরা যে ভাবে এগোচ্ছেন, তাতে এখন ওঁদের ট্রফির দাবিদার বলাই যায়।

একটা ব্যাপার আমার একটু খারাপ লাগছে। কলকাতা আমার দল, কিন্তু এখানে কোনও বাঙালি ক্রিকেটার নেই। যেটা আছে হায়দরাবাদে। তাই শনিবার ম্যাচের শুরুতে একটা দৃশ্য দেখে খুব ভাল লাগল। একটা ছোটখাটো চেহারার ছেলে ওপেন করতে নামছেন। ছেলেটা বাংলার উইকেটকিপার শ্রীবৎস গোস্বামী।

হায়দরাবাদ দলটায় ঋদ্ধিমান সাহাও আছেন। কিন্তু এই নিয়ে চারটে ম্যাচে শ্রীবৎস সুযোগ পেলেন। শনিবার আবার ওঁকে দিয়ে ওপেন করানো হল। ২৬ বলে ৩৫ করে যান শ্রীবৎস। মারেন চারটে চার, একটি ছয়। রানটা খুব বেশি না হলেও শ্রীবৎস কিন্তু বেশ সাহসী ইনিংস খেলে গেলেন। আন্দ্রে রাসেলের বল হেলমেটে লাগার পরেই একটা ছয় আর একটা চার মারলেন। যেটায় দক্ষতার সঙ্গে সাহসও মিশে আছে। শ্রীবৎস ভাল খেলায় আমার খুশি হওয়ার কারণ আছে। ওঁর বয়স যখন উনিশেরও কম ছিল, আমি প্রায় জোর করে অনূর্ধ্ব ২৩ বাংলা দলে খেলিয়েছিলাম। ওঁর মানসিকতা তখনই ভাল লেগেছিল।

ম্যাচের শুরু থেকে অবশ্য নাইটদের চাপে রেখেছিলেন হায়দরাবাদের দুই ওপেনার। শ্রীবৎস ফিরে গেলেও হাফসেঞ্চুরি করেন শিখর ধওয়ন। তাঁর ৫০ রানের ইনিংসে রয়েছে পাঁচটি চার, একটি ছয়। প্রথম উইকেটে ৮.৪ ওভারে ওঠে ৭৯ রান। যদিও তাতে লাভ হয়নি।

আরও একটা সাহসী পারফরম্যান্স দেখলাম হায়দরাবাদের মাঠে। যার কথা আগেই বলেছি। প্রসিদ্ধের করা শেষ ওভারটা। প্রসিদ্ধ রিভার্স সুইং করাতে পারেন, হাতে গতিও আছে। স্লোয়ারটাও ভাল দেন। ওই ম্যাজিক ওভার কিন্তু ম্যাচে ফিরিয়ে আনে নাইট রাইডার্সকে।

স্কোরকার্ড

সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১৭২-৯ (২০)

কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৭৩-৫ (১৯.৪)

সানরাইজার্স হায়দরাবাদ রান বল

ধওয়ন এলবিডব্লিউ বো প্রসিদ্ধ ৫০ -৩৯

শ্রীবৎস ক রাসেল বো কুলদীপ ৩৫ - ২৬

কেন ক রাসেল বো সার্লস ৩৬ - ১৭

মণীশ পাণ্ডে ক (রিঙ্কু) বো প্রসিদ্ধ ২৫ - ২২

ইউসুফ ক উথাপ্পা বো নারাইন ২ - ৪

ব্রাথওয়েট ক কার্তিক বো রাসেল ৩ - ৪

শাকিব ক নারাইন বো প্রসিদ্ধ ১০ - ৭

রশিদ ক কার্তিক বো প্রসিদ্ধ ০ - ১

ভুবনেশ্বর রান আউট কার্তিক ০ - ১

সিদ্ধার্থ কল ন. আ. ০ - ০

অতিরিক্ত ১১

মোট ১৭২-৯ (২০)

পতন: ১-৭৯ (শ্রীবৎস, ৮.৪), ২-১২৭ (উইলিয়ামসন, ১২.৫), ৩-১৪১ (ধওয়ন, ১৫.১), ৪-১৪৭ (পাঠান, ১৬.২), ৫-১৬১ (ব্রাথওয়েট, ১৮.১), ৬-১৬৮ (মণীশ, ১৯.১), ৭-১৭২ (শাকিব, ১৯.৪), ৮-১৭২ (রশিদ, ১৯.৫), ৯-১৭২ (ভুবনেশ্বর, ১৯.৬)।

বোলিং: নীতীশ রানা ১-০-৫-০, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ৪-০-৩০-৪, আন্দ্রে রাসেল ৩-০-৩১-১, সুনীল নারাইন ৪-০-২৩-১, পীযূষ চাওলা ২-০-১৯-০, কূলদীপ যাদব ৪-০-৩৫-১, জ্যাভন সার্লস ২-০-২৪-১।

কলকাতা নাইট রাইডার্স রান বল

ক্রিস লিন ক পাণ্ডে বো সিদ্ধার্থ ৫৫ - ৪৩

নারাইন ক পাণ্ডে বো শাকিব ২৯ - ১০

উথাপ্পা ক শ্রীবৎস বো ব্রাথওয়েট ৪৫ - ৩৪

দীনেশ কার্তিক ন. আ. ২৬ - ২২

আন্দ্রে রাসেল ক পাণ্ডে বো সিদ্ধার্থ ৪ -৪

নীতীশ ক ভুবনেশ্বর বো ব্রাথওয়েট ৭ - ৪

শুভমন গিল ন. আ. ০ - ০

অতিরিক্ত ৭

মোট ১৭৩-৫ (১৯.৪)

পতন: ১-৫২ (নারাইন, ৩.৪), ২-১১৯ (লিন, ১৩.১), ৩-১৪৯ (উথাপ্পা, ১৬.৩), ৪-১৬০ (রাসেল, ১৭.৪), ৫-১৭২ (রানা, ১৯.২)।

বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ৪-০-৩৩-০, সন্দীপ শর্মা ২-০-৩০-০, সিদ্ধার্থ কল ৪-০-২৬-২, শাকিব-আল-হাসান ৩-০-৩০-১, রশিদ খান ৪-০-৩১-০, কার্লোস ব্রাথওয়েট ২.৪-০-২১-২।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket IPL 11 IPL 2018 KKR SRH
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE