Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মহেশের নেমন্তন্ন অবশেষে রক্ষা করেও লিয়েন্ডার যেন হতাশ

আলো-আঁধারি নেমেছে ইন্দিরা গাঁধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। পরের রাউন্ড শুরু হবে বলে। সামান্য বিরতি এখন। এক কোণে মুখ্য সংগঠক দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ আর সেলফির আব্দার মেটাচ্ছেন। ভিড়টা একটু হালকা হতে এক প্রৌঢ় তাঁকে অটোগ্রাফের জন্য এক টুকরো কাগজ এগিয়ে দিলেন। ওটা টেনে নিয়ে মহেশ সই করার আগে মুখটা দেখলেন, ‘‘আরে আপনি?’’ জড়িয়ে ধরলেন ভদ্রলোককে।

গায়ে জাপানি দলের জার্সি। সঙ্গে বিদেশি সঙ্গী। দেশের কোর্টে আইপিটিএলে লিয়েন্ডার পেজ। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রেম সিংহ

গায়ে জাপানি দলের জার্সি। সঙ্গে বিদেশি সঙ্গী। দেশের কোর্টে আইপিটিএলে লিয়েন্ডার পেজ। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রেম সিংহ

গৌতম ভট্টাচার্য
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০৩
Share: Save:

আলো-আঁধারি নেমেছে ইন্দিরা গাঁধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। পরের রাউন্ড শুরু হবে বলে। সামান্য বিরতি এখন। এক কোণে মুখ্য সংগঠক দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ আর সেলফির আব্দার মেটাচ্ছেন। ভিড়টা একটু হালকা হতে এক প্রৌঢ় তাঁকে অটোগ্রাফের জন্য এক টুকরো কাগজ এগিয়ে দিলেন। ওটা টেনে নিয়ে মহেশ সই করার আগে মুখটা দেখলেন, ‘‘আরে আপনি?’’ জড়িয়ে ধরলেন ভদ্রলোককে।

তিনি ভেস পেজ। যাঁকে টেনিস মহলে একটা সময় অনেকেই অভিযুক্ত করেছেন লিয়েন্ডার-মহেশ ঝগড়ার প্রধান কারণ হিসেবে। সইয়ের জন্য তাঁর মহেশকে কাগজ এগিয়ে দেওয়ার রসিকতা থেকেই পরিষ্কার এত বছরের বরফশীতল সম্পর্কটা অনেক উন্নত হয়ে অন্তত কাজ চালানো অবস্থায় পৌঁছেছে। ভেস নিজেই এবিপিকে বললেন, ‘‘লিয়েন্ডার-মহেশ বৃত্তের জোড়টা সম্পূর্ণ হল।’’

গত বছর যখন আইপিটিএল টেনিস প্রতিযোগিতা দিল্লিতে আয়োজিত হয়, মহেশ চেয়েও পাননি লিয়েন্ডারকে। বেকবাগান রো-র প্রাক্তন অধিবাসী তখন বিজয় অমৃতরাজের করা প্রতিদ্বন্দ্বী লিগে খেলতে চলে যান। মনোভাব খুব পরিষ্কার ছিল যে, মহেশ তুই টাকা দিলেও আমায় পাবি না।

এ বার ইন্ডিয়ান এসেস নামক ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা যে দল টুর্নামেন্টে খেলছে সেখানে খেলতে চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন লিয়েন্ডার। এই টিমের হয়েই এ দিন খেললেন রাফায়েল নাদাল। সানিয়া-বোপান্নারাও ইন্ডিয়ান এসেস-এ। কিন্তু লিয়েন্ডারকে নেওয়া হয়নি। যে টাকা চেয়েছিলেন তা তাঁর নিজের কাছে যতই উপযুক্ত মনে হোক, ইন্ডিয়ান এসেস কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় গত বারের উইনিং কম্বিনেশন বদলাব না। আসলে সানিয়া-বোপান্না মিক্স়ড ডাবলসের জায়গাটা লিয়েন্ডারকে ছাড়তে চাননি। রিও অলিম্পিক্সে ভারতের হয়ে কারা মিক্সড ডাবলস খেলবেন তা নিয়ে কোর্টের বাইরে অন্তর্লীন একটা লড়ালড়ি চলছে।

সানিয়া আর লিয়েন্ডার দু’জনেই যেহেতু ডানহাতি প্লেয়ার। সানিয়া শিবির মনে করে তাঁর সঙ্গে বাঁ-কোর্টে দক্ষ কেউ খেললেই পদক পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে উজ্জ্বল হবে। বাঁ-কোর্টের প্লেয়ার মহেশ নিজে। কিন্তু ষথেষ্ট ম্যাচ কন্ডিশনে আছেন কি না কেউ জানে না। কলকাতায় ওই নাভ্রাতিলোভার বিরুদ্ধে প্রদর্শনী খেলার পাশে অলিম্পিক্স দৌড়—আকাশ আর পাতাল। তাই মহেশ না পারলে বোপান্না।

ভারতীয় দলে ঠাই না হওয়ায় ভারতের হয়ে এত এত ম্যাচ জেতানো লিয়েন্ডারকে খেলতে হচ্ছে জাপান ওয়ারিয়র্সের হয়ে। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটাই তাঁকে এটা করা হল যে, এত গর্বিত ভারতীয় আপনি। নিজের দেশে জাপানের হয়ে খেলতে হচ্ছে খারাপ লাগছে না? লিয়েন্ডার সাফ বললেন, ‘‘তা তো লাগছেই। এ বার ওরা বলল উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে পারবে না। অথচ টিম স্পনসরের লোক আমায় এসে বলেছে তুমি কেন টিমে নেই?’’

সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুটা দেখে বেশ অবাকই লাগল। মহেশের ফুলের জলসায় তাঁর জন্য যে অকৃত্রিম বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো নেই সেটাই কি বোঝালেন লিয়েন্ডার? নইলে কেন বলবেন, ‘‘এটা এক্সিবিশন টেনিস হোক আর যাই হোক আমি দেশভক্ত ভারতীয়। পরের বছর দেশের হয়ে খেলতে চাই।’’

লিয়েন্ডার একইসঙ্গে মহেশের প্রশংসা করলেন। ‘‘আইপিএল যে ভাবে ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছে, সে ভাবেই আইপিটিএল বদলে দিতে পারে ভারতীয় টেনিসকে। টেনিসকে আরও ছড়িয়ে দিতে পারে লোকের মনে। কী কী সব প্লেয়ার এসেছে। আর পরশু যখন ফেডেরার ভার্সাস নাদাল খেলা হবে তখন তো কথাই নেই।’’

ভেস পেজ নিজে মনে করছেন, আগের মতো না হলেও লি-হেশ পরিস্থিতি এখন অনেক ভাল। ‘‘একটা সময় ছিল ১৯৯৯ পর্যন্ত ওরা হোটেলের দুটো আলাদা ঘরে চেক-ইন করেও সারাক্ষণ এক রুমে থাকত। এই বোঝাপড়াটাই কোর্টে আরও নিঁখুত হতে সাহায্য করত। ডেভিস কাপে টানা চব্বিশ ম্যাচ ওরা হারেনি এমন অবিশ্বাস্য রেকর্ডও রয়েছে।’’ ভেস মনে করেন, নিজের জীবনের জন্য খেলতে হলে ভারতের সর্বকালের সেরা হওয়ার অন্যতম দাবিদার দুই জুড়িকে পিছনে রাখবেন।

রামনাথন কৃষ্ণন-জয়দীপ নন। বিজয় আর আনন্দ অমৃতরাজও না।

বেছে নেবেন পেজ-ভূপতিকে।

প্রশ্ন হল পরিবারগত ভাবে দু’পক্ষের এই সৌহার্দ্য অক্ষত থাকবে তো? নাকি দ্রুতই ফিরে যাবে নিজের জায়গায়? ভেস এই যে বললেন বৃত্তের জোড় সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, তাঁকে কি আবার ঢোক গিলতে হবে?

টেনিসমহলের মতে ২০১৬-র রিও একমাত্র এর উত্তর দিতে পারে। পাঁচ মাস আগের এই অটোগ্রাফ চেয়ে মজা করাটা তাই অক্ষত থাকবে, বাজি ধরার মতো কেউ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

itpl leander paes gautam bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE